চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সংশয়ের কারণ সামাজিক অনুষ্ঠান মেলা উম্মুক্ত বিনোদনকেন্দ্র

২২ জানুয়ারি, ২০২২ | ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

মিজানুর রহমান

করোনার সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে মেলা, খেলা, উন্মুক্ত বিনোদনকেন্দ্রসহ বড় জনসমাগম স্থলগুলো বন্ধ না করে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মহামারী নিয়ন্ত্রণে কতটুকু সাফল্য মিলবে- তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এছাড়া জনসমাগমস্থলে যেতে টিকা কার্ড এবং করোনা নেগেটিভ সনদ রাখার যে বাধ্যবাধকতা নতুন বিধিনিষেধে রাখা হয়েছে তার বাস্তবায়ন কতোটা বাস্তবসম্মত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গতকাল শুক্রবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ ৫ দফা বিধিনিষেধ জারির দিনই নগরীর পহাড়তলী এবং উত্তর কাট্টলী এলাকায় চলমান দুটি মেলায় বিপুল জনসমাগম দেখা গেছে। বিকালে ফয়’স লেক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, সিআরবি এলাকাসহ উন্মুক্ত বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় দেখে দেশে মহামারীর আতঙ্ক চলছে তা বুঝার উপায় ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে- গতকাল শুক্রবার দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। যা গত কয়েকমাসের মধ্যে রেকর্ড।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে ক্ষোভ:

দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১০ জানুয়ারি ১১টি বিধিনিষেধ দেয় সরকার। ২০ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯টি বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। এসব বিধিনিষেধে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরা, গণ পরিবহনে আসনের সমান যাত্রী নেওয়া, রেস্টুরেন্টে বাধ্যতামূলক টিকা সনদ এবং উন্মুক্ত স্থানে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার উপরই গুরুত্ব দেওয়া হয়।

পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় গতকাল ফের ৫টি বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলেও মেলা, খেলা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। টিকা কার্ড এবং করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে মেলায়, খেলায় এবং ১০০ জনের কম হয় এমন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে প্রায় সব কিছু ‘খোলা’ রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার এই বিধিনিষেধ ওমিক্রন মোকাবিলায় কতুটুকু সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাকরাও। তারা বলছেন- হাট-বাজার গার্মেন্টস, বাণিজ্য মেলা, নির্বাচন, বিয়ে-শাদী সব চলছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই কি করোনা ছড়ায়? গবেষণায় এটার প্রমাণ মিলেছে?

অভিভাবকদের পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরাও। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উম্মে সাদিয়া বলেন, স্বাস্থ্যবিধি কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই মানা হচ্ছিলো। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টিকা নিয় শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। ক্লাসে ১০০ জনও হয় না। এরপরেও সংক্রমণ ঠেকাতে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ করা হলো। এভাবে করোনা মোকাবিলা সম্ভব?

বিধিনিষেধ মানছে না কেউ:

ঘড়ির কাঁটা তখন ৬ টার ঘরে। শুক্রবার সন্ধ্যার এই সময়ে নগরীর দুই নম্বর গেট মোড়ে জনা পঞ্চাশেক লোকের জটলা। হঠাৎ জিইসিমুখী ২ নম্বর রুটের একটি বাস আসতেই তাতে জায়গা করে নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন সবাই। তবে যাত্রীতে ঠাসা বাসটিতে উঠতে পারলেন মাত্র দুইজন।

ওমিক্রন মোকাবিলায় সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ অনুযায়ী- গণপরিবহনে যত আসন, তত যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও ওই বাসে সেটি মানা হয়নি। চালক, সহকারী- যাত্রীদের অনেকের মুখে ছিলো না মাস্কও। একই অবস্থা এই মোড় দিয়ে যাওয়া ৮ নম্বর, ৩ নম্বর রুটসহ অন্য রুটগুলোর বাসেও।

মোড়ের যখন এই চিত্র- পাশের বিপ্লব উদ্যানে গিয়ে দেখা গেলো- লোকে লোকারণ্য পুরো উদ্যান। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে দল বেধে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ সঙ্গী নিয়ে বাদাম খাচ্ছেন। কেউ উদ্যানের পূর্ব পাশের রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছেন। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। রেস্টুরেন্টগুলোতে টিকার সনদ দেখে খাবার পরিবেশন করার কথা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না।

শুধু দুই নম্বর গেট এলাকা নয়। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বিকালে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার বিনোদনপ্রেমী মানুষ ভিড় করেন। তবে তাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করেই সমুদ্রের সৌন্দর্য্য উপভোগ করেছেন তারা। মাস্ক ছাড়া মানুষের বড় সমাগম দেখা গেছে আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্কসহ অন্য বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও।

জনসমাগম বন্ধ চান বিশেষজ্ঞরা:

সরকারের দেওয়া নতুন বিধিনিষেধ নিয় প্রশ্ন তুলেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরাও। তারা বলছেন- ওমিক্রন মোকাবিলার কৌশল হিসেবে ঘোষিত বিধিনিষেধগুলো যথেষ্ট স্পষ্ট নয়। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে বাস্তবায়নযোগ্যও নয়। এই কারণে বিধিনিষেধ এখন কাগজের টুকরো হয়ে যাচ্ছে। বিধিনিষেধকে কাগজের টুকরো না বানিয়ে এটার প্রয়োগ করতে হবে।

রেস্টুরেন্ট, মেলা, পর্যটনকেন্দ্র বা জনসমাগম হয় এমন জায়গায় গেলে টিকা সনদ এবং করোনা নেগেটিভ সনদ দেখানোর কথা বলা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে- এই নজরদারির কাজটি বাস্তবায়ন করবে কে? এতো জনবল কি আছে? তাই শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়- মেলা, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ বড় জনসমাগম হয় এমন সবকিছু ৪ সপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন তারা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট