চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পুদিনা চাষে ভাগ্যবদল

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১৫ জানুয়ারি, ২০২২ | ২:০১ অপরাহ্ণ

মো. তাজউদ্দিন। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের কৃষক। এলাকার অন্যান্য কৃষকরা যখন শীতকালীন সবজি তোলা নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক সে সময়ে পুদিনা পাতা বাজারজাত করছেন এ কৃষক। প্রায় পুরোবছর জুড়ে একই জমিতে শুধুমাত্র পুদিনা চাষ করেন তিনি। আর তাতেই আর্থিক দৈন্যতা কাটিয়ে এখন স্বচ্ছল।

তাজউদ্দিনের মতো বছরজুড়ে শুধুমাত্র পুদিনা চাষ না করলেও আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে এরিমধ্যে পুদিনার আবাদ শুরু করেছেন অন্যান্য কৃষকরাও। পুদিনা এক ধরনের সুগন্ধি গাছ। খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি এ পাতার রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। এ দেশে পুদিনা চাষ হয় মূলত চাটনি, সালাদ আর বোরহানি বানানোর জন্য। এছাড়াও আরও বেশ কিছু কাজে পুদিনা পাতা ব্যবহৃত হয়। একসময় পুদিনা পাতার চাহিদা কম থাকলেও এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে এর ব্যবহার। বিশেষ করে রমজান মাসে পুদিনার চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি।

গত কয়েকবছর ধরে এসময়ে পুদিনা চাষ করে প্রচুর মুনাফা পেয়েছেন কৃষকরা। এবারও রমজান মাসকে সামনে রেখে পুদিনার চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষকরা। ফৌজদার হাট- বায়েজিদ লিংক রোড ও ডিটি রোডের সংযোগস্থল এলাকার ২৭ নম্বর মধ্যম সলিমপুর এলাকা। লিংক রোডের দক্ষিণ পাশে পাহাড়ের কোল ঘেষে সবুজে আচ্ছাদিত প্রচুর কৃষি জমি। গতকাল এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এর মধ্যে চাষের জন্য জমির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন কৃষকরা। এর মধ্যে তাজউদ্দিন, জসীম, সালাউদ্দিন ও দিদারসহ বেশ কয়েকজন কৃষক পুদিনা চাষের জন্য জমিতে ব্যস্ত সময়ে পার করছেন।

তবে এরমধ্যে ব্যতিক্রম তাজ উদ্দিন। নতুন আবাদ করার পাশাপাশি তিনি এ সময়েও পুদিনা বাজারজাত করছেন। প্রায় ৪০ শতক বা ১ কানি জমিতে তিনি পুরো বছরজুড়ে পুদিনার চাষ করেন। বছরের পাঁচ থেকে ছয়বার তিনি পুদিনা বিক্রি করেন। নগরীর বাজারে তাঁর পুদিনার চাহিদাও বেশ। তিনি বলেন, শীতকালে পুদিনা চাষে তেমন একটা কষ্ট হয় না। ১ কানি জমিতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও বিক্রি হয় লাখ টাকার উপরে। বর্ষাকালে খরচ অনেক বেড়ে যায়। তবে রমজানকে সামনে রেখে পাশাপাশি আরও কিছু জমিতে পুদিনার আবাদ শুরু করছেন তিনি।

সীতাকুণ্ড ২৭ নম্বর মধ্যম সলিমপুর ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সূপর্ণা বড়–য়া বলেন, ‘শুধুমাত্র এ এলাকায় এবার প্রায় ১ হেক্টর জমিতে পুদিনা চাষ হচ্ছে। রমজান মাসে যাতে নগরীর ক্রেতাদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী পুদিনা পৌঁছে দিতে পারে কৃষকরা সে লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। গত বৃহস্পতিবারও পুরো এলাকার ঘুরে কৃষকদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। তিনি এবারও কৃষকরা ভাল লাভ পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’

তিনি আরও জানান, যেসব কৃষক শুধু রমজান মাস টার্গেট করে পুদিনার চাষ করেন, তাঁরা ইচ্ছা করলে সারা বছর পুদিনার আবাদ করতে পারবেন। এতে আর্থিকভাবে বেশ লাভবানও হওয়া যাবে। কারণ সারা বছর পুদিনার চাহিদা থাকে।

জানা যায়, কৃষকের উৎপাদিত পুদিনা সরাসরি বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। পাইকার এসে পুরো জমির ফসল কিনে নেয়। পাইকারি ক্রেতা সোহেল মিয়া জানালেন, গত মাসে প্রায় ১ লক্ষ টাকা দিয়ে এককানি জমির পুদিনা কিনেছেন। ৩০/৪০ হাজার টাকা লাভ হতে পারে। তিনি বলেন, সারা বছর পুদিনার চাহিদা রয়েছে। নগরীর উন্নত মানের হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে চাটনি, জুস, সালাদ তৈরিতে এবং ফুড ডেকোরেশন ছাড়াও বিভিন্ন খাদ্যে সুগন্ধের জন্য পুদিনা ব্যবহার করে থাকে। বেকারি পণ্যেও পুদিনার ব্যবহার রয়েছে। বর্তমানে এখানকার পুদিনা ঢাকায়ও সরবরাহ করা হচ্ছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট