চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সময়ের দাবি, অভাব উদ্যোগের

১৫ জানুয়ারি, ২০২২ | ১:১৬ অপরাহ্ণ

ইমরান বিন ছবুর 

 

নগরীর আট সরকারি কলেজের আসন সংখ্যা ৯ হাজার ৫৩০টি। ২০২১ সালের প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৭৯১ জন শিক্ষার্থী। আসন সংকটের কারণে এসব শিক্ষার্থীদের একাংশ সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। সরকারি কলেজগুলোতে যদি ডাবল শিফট করা যায়, তাহলে ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে।

এইচএসসিতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয় নগরীর সরকারি সিটি কলেজে। বাংলাদেশের একমাত্র ডাবল শিফটের কলেজও এটি। পাঠদান চলে সকালে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সিটি কলেজের দিবা ও বৈকালিক শাখা মিলে আসন রয়েছে মোট দুই হাজার ১৫০টি। তবে নগরীর অন্যান্য সরকারি কলেজে আসন সংখ্যা সিটি কলেজের প্রায় অর্ধেক।

শিক্ষাবিদদের মতে, সরকারি সিটি কলেজের মত নগরীর অন্যান্য সরকারি কলেজে যদি দুই শিফট চালু করে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ কম খরচে সরকারি কলেজ পড়াশুনার সুযোগ পাবে। তবে এরজন্য প্রয়োজন হবে, অবকাঠামো ও পর্যাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারী।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কলেজ শাখা সূত্রে জানা যায়, নগরীর আট সরকারি কলেজে আসন সংখ্যা হচ্ছে ৯ হাজার ৫৩০টি। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৪০০, মানবিক বিভাগের আসন সংখ্যা ২ হাজার ৫৩০ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৬০০টি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)’র নির্বাহী সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সরকারি কলেজগুলোতে যদি ডাবল শিফট চালু করা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ভালো একটি কাজ হবে। আরো অনেক শিক্ষার্থী কম খরচে সরকারি কলেজে পড়াশুনার সুযোগ পাবে। তবে শুধুমাত্র তো ডাবল শিফট করলেই কাজ শেষ না, এখানে আরো অনেক কাজ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ঠিকভাবে চালানোর জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অবকাঠামোর ব্যবস্থা করতে হবে। এই সবকিছুর জন্য সরকারের ভাবতে হবে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন, একটি কলেজে দু’টি শিফট চালানো অনেক জটিল কাজ। শুধুমাত্র শিক্ষার্থী ভর্তি করালেই হবে না। এর পাশাপাশি শিক্ষক ও অবকাঠামোর প্রয়োজন হবে। আমাদের দেশে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয় না। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কলেজে শিক্ষক সংকট থাকার পরও পদ সৃষ্টি না হওয়ায় শিক্ষক সংকট থেকে যায়।

শিক্ষকতা ও শিক্ষা প্রশাসনে তিন দশকেরও অধিক সময় ধরে যুক্ত চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মুজিবুল হক জানান, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই শিফট চালু করতে গেলে আলাদা শিক্ষক এবং অবকাঠামোর প্রয়োজন রয়েছে। এসব নিশ্চিত করা গেলে এরপর ডাবল শিফট চালুর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নগরীর সরকারি কলেজগুলো এসব বিষয় নিয়ে কখনো ভেবেছে বলে আমার জানা নেই।

তিনি আরো বলেন, অবকাঠামো না বাড়িয়ে শুধুমাত্র শিক্ষার্থী ভর্তি করালে তো হবে না। তাদের ক্লাসে বসার জায়গা দিতে হবে এবং তাদের পড়ানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। চট্টগ্রাম কলেজে এত ভবন থাকার পরও আমরা অনেক চাপ দেখেছি। শিক্ষার্থীরা যদি নিয়মিত ক্লাস করে, অনেক শিক্ষার্থী আসন সংকটের কারণে বসতে পারবে না।

জানতে চাইলে সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সুদীপা দত্ত বলেন, দুই শিফট হওয়ার ফলে একাদশ শ্রেণিতে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী আমাদের কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। অন্যদিকে, দুই শিফট হওয়াতে আমাদের কিছু সমস্যা হচ্ছে। যেমন : অবকাঠামোগত সুুবিধা ও শিক্ষক সংকট। এসব সমস্যার কারণে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

নগরীর সরকারি ৮ কলেজের আসন সংখ্যা : চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে মোট আসন সংখ্যা ১ হাজার ৪০টি। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৬৬০ এবং মানবিক বিভাগে ৩৮০টি। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে মোট আসন সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৫টি। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৬৬০টি, মানবিক বিভাগে ৪৬০টি এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৬১৫টি আসন রয়েছে। সরকারি সিটি কলেজের মোট আসন সংখ্যা ২ হাজার ১৫০টি। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য আসন রয়েছে ৬৬০টি। মানবিক বিভাগে দিবা ও বৈকালিক শাখায় আসন সংখ্যা ৭৩০টি। একইভাবে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে দিবা ও বৈকালিক শাখা মিলে আসন রয়েছে ৭৬০টি। সরকারি কমার্স কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৮৫০টি আসন রয়েছে। চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ৪০০টি। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৫০০টি, মানবিক বিভাগে ৪০০টি এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫০০টি আসন রয়েছে।

এছাড়া, বাকলিয়া সরকারি কলেজে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ৩৫৫টি। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৫০টি, মানবিক বিভাগে ৩৮০টি এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫২৫টি আসন রয়েছে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৯০ করে মোট ১৮০টি আসন রয়েছে। চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩৮০টি, মানবিক বিভাগের জন্য ১৮০টি এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ২৬০টি আসন রয়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট