চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

পরিত্যক্ত হতে চলেছে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল!

১৫ জানুয়ারি, ২০২২ | ১২:৫৯ অপরাহ্ণ

মোহাম্মদ আলী 

১০ সমস্যায় অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল। টার্মিনালে রয়েছে কমপক্ষে ৩০টি গাড়ি মেরামতের অবৈধ গ্যারেজ। এতে গাড়ি মেরামত, ডেন্টিং, পেইন্টিং সবই করা হয়। অপরিষ্কার, নালা-নর্দমার অভাবে পুরো বছরজুড়ে জলাবদ্ধতা, টয়লেটের অভাব, অপর্যাপ্ত পানীয়জল ও আলোকায়ন, নিরাপত্তাহীনতা, স্বাস্থ্যসম্মত হোটেল, কুলিং কর্নার ও যাত্রী বিশ্রামাগারের অভাব দীর্ঘদিন ধরে। সিমেন্টের ছাদ ভেঙে পড়ার কারণে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে অনেক ভবন। তাই প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে এ টার্মিনাল থেকে যাত্রী বিমুখ হয়ে পড়ছে। সিডিএ প্রতি বছর টার্মিনাল থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করলেও সংস্কারের জন্য এক টাকাও খরচ করে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গার ওপর ১৯৯৩ সালে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। বর্তমানে এ টার্মিনাল থেকে কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া, চন্দ্রঘোনা, কক্সবাজার, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, লামা, আলীকদম, মহেশখালী, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া ও বোয়ালখালীর ১৮টি রুটে কমপক্ষে ৬ শতাধিক বাস চলাচল করে। শুরুতে কয়েক বছর বাস টার্মিনালটির পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলেও ধীরে ধীরে তা হারাতে বসে। টার্মিনালের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে রয়েছে প্রায় ৩০টি অবৈধ গ্যারেজ। জায়গা দখল করে এসব গ্যারেজ বসার কারণে    টার্মিনালের পুরো পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। এসব গ্যারেজে গাড়ি মেরামত, ডেন্টিং, প্যান্টিং সবই করা হয়।

জলাবদ্ধতা এ টার্মিনালের অন্যতম সমস্যা। টার্মিনালের প্রবেশ পথে নালায় ওয়াল নির্মাণের কারণে এ সমস্যা আরো প্রকট হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে শ্রমিক নেতারা। শ্রমিক নেতাদের যুক্তি হচ্ছে, বাইরের নালা সংস্কারের পাশাপাশি টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ পানি নিষ্কাশনের জন্য ভেতরে নালা নির্মাণ করতে হবে। অন্যথা বৃষ্টির পানি অপসারণ না হলে জলাবদ্ধতা হবে বেশি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে পুরো টার্মিনাল ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। তাতে যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও পারে না। টার্মিনাল চালুর সময়ে টয়লেট নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘ ২৯ বছরেও এগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে এগুলো অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

পুরো টার্মিনালে নেই কোন বৈদ্যুতিক বাতি। তাতে সন্ধ্যা নামলে টার্মিনালজুড়ে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। কারা শ্রমিক ও কারা বহিরাগত তা শনাক্ত করা কঠিন পড়ে। রয়েছে পানীয়জলের সংকট, এতে শ্রমিকরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৯৯৬ সালে টার্মিনালে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। কিন্তু ফাঁড়ির ভবনের ছাদ ছুয়ে পানি পড়ার কারণে বিগত প্রায় ৬ মাস আগে এটিও তুলে নেওয়া হয়। তাতে চরম নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছেন যাত্রী, বাস মালিক-শ্রমিক।

পুরো টার্মিনালে নেই স্বাস্থ্যসম্মত হোটেল ও কুলিং কর্নার। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হোটেল ও কুলিং কর্নারে আহারের কারণে প্রতিনিয়ত পেটের পীড়ায় ভুগেন। পুরো টার্মিনালে নিরাপত্তা ওয়াল থাকলেও পাশের ভূমির মালিকরা তা ভেঙে ফেলে। এ কারণে সম্পূর্ণ অরক্ষিত পুরো টার্মিনাল। সংস্কার না থাকায় টার্মিনালের বেশিভাগ ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। টিকেট কাউন্টারগুলোর দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে। ছাদের সিমেন্টের টিন ভেঙে পড়ার কারণে বৃষ্টি নামলে পানি পড়ে রুমের অভ্যন্তরে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুসা দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘নানামুখী সমস্যায় টার্মিনালটি অনেকটা পরিত্যক্তের পর্যায়ে চলে গেছে। চালু হওয়ার পর বিগত ২৯ বছরে টার্মিনালে কোন সংস্কার করেনি সিডিএ। অথচ প্রতিবছর এটি থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করে সরকারি সংস্থাটি। কিন্তু সংস্কারের জন্য খরচ করে না এক টাকাও। এ কারণে নিরুপায় হয়ে ২০২০ সালে অক্টোবরে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাস চলাচল বন্ধ রেখে শ্রমিক-মালিক আন্দোলনও করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি সিডিএ।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট