চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নামেই মডেল থানা

১৪ জানুয়ারি, ২০২২ | ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নাজিম মুহাম্মদ

মডেল থানা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি রয়েছে। আসলে মডেল থানা কী? নগরীর ষোল থানার মধ্যে তিনটি থানাকে মডেল থানা বলা হয়। সেগুলো হলো- পাঁচলাইশ, পতেঙ্গা ও ডবলমুরিং মডেল থানা। মডেল থানা লিখা হলেও সেখানে বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা কিন্তু নয়। সব থানাই মডেল আবার কোনোটাই মডেল না।

পতেঙ্গা মডেল থানার তো নিজস্ব ভবনই নেই। যা আছে তাও অনেকটা পরিত্যক্ত। মডেল থানায় যেসব উপকরণ ও সুবিধা থাকার কথা ছিল সেটা কখনোই ছিল না। অবকাঠামো, গাড়ি ও আবাসনসহ কোনও কিছুতেই থানাগুলো কখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ থানা হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, ডিএফআইডি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়নে ২০০৫ সালে শুরু হয় সংস্কার কার্যক্রম। অনেকটা পাইলট প্রকল্প হিসাবে এ কার্যক্রমের একটি প্রকল্প ছিল ‘মডেল থানা’। সে সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার কিছু থানাকে মডেল থানা নাম দেয়া হয়। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ের পর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পুলিশ সংস্কার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাই মডেল থানা নিয়ে যেসব কার্যক্রম চলমান ছিল, তাও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মডেল থানা ছাড়াও কমিউনিটি পুলিশিং, নারী পুলিশ নেটওয়ার্ক তৈরিতে সহায়তা, পুলিশ প্রশিক্ষণের জন্য পাঠ্যক্রম, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে আলাদা কক্ষ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারগুলো এ প্রকল্পের আওতায় ছিল। পুলিশের আইন সংস্কার নিয়েও কিছু কাজ করা হয়।

চট্টগ্রামের তিনটি মডেল থানার দায়িত্ব পালনের পর এখন তিনি নগরীর ডবলমুরিং মডেল থানার ওসি। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ সংস্কার কার্যক্রমের একটি প্রকল্প ছিল ‘মডেল থানা’। এটি হওয়ার কথা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। লবণের বাটি থেকে শুরু করে কনফারেন্স রুমসহ যা যা থাকার প্রয়োজন, এ সংক্রান্ত সবধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট থাকবে। সেবা প্রার্থীরা দ্রæত সেবা পাবেন। এটা হচ্ছে মডেল থানা। অথচ আমাদের এই মডেল থানায় এগুলোর অনেক কিছুরই ধারাবাহিকতা নেই।”

পতেঙ্গা মডেল থানা। নামেই মডেল কিন্তু বাস্তবে মডেলের যে নমুনা, তার কিছুই নেই। কথা ছিলো মডেল থানার একটি অত্যাধুনিক ভবন থাকবে। পর্যাপ্ত যানবাহন থাকবে। অপারেশন, ইন্টেলিজেন্স ও ইনভেস্টিগেশনে আলাদা টিম থাকার কথা ছিল। যেন থানার সব সদস্য সব বিষয়ে পারদর্শী হতে পারেন। মডেল থানার কর্মরত কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা অন্য থানার কর্মকর্তাদের চেয়ে বেশী হবার কথা ছিল। প্রত্যেক মডেল থানায় একটি এম্বুলেন্স থাকার কথা ছিল। দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ গড়তে নেয়া এ উদ্যোগ পরবর্তীতে আঁতুড় ঘরেই মারা যায়।
পতেঙ্গা থানাকে মডেল বলা হলেও থানা ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে অনেক আগে। চট্টগ্রাম স্টিল মিলের একটি পরিত্যক্ত ভবনকে থানা ভবন হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, ২০০৬ সালের দিকে পতেঙ্গা থানাকে মডেল থানা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সে সময় ছয়টি গাড়ি দেয়া হয়েছিলো। একটি ভবনও নির্মাণ করা হয়। যা এখন সার্ভিসে ডেলিভারি সেন্টার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মূল থানা ভবনটি বেপজা থেকে নেয়া একটি পরিত্যক্ত ভবন। তবে এক একর ৩৮ শতক জায়গা রয়েছে যেখানে নতুন থানা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

পাঁচলাইশ মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, “জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, ডিএফআইডি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় পাঁচলাইশ মডেল থানা ভবন নির্মাণ করা হয়। অনেকটা পাইলট প্রকল্প হিসাবে নেয়া এ প্রকল্পে পরবর্তীতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়নি। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সব থানাকে সমান দৃষ্টিতে দেখা হয়। মডেল থানায় বাড়তি সুযোগ সুবিধা আছে তা কিন্তু নয়। ওসি জাহেদুল বলেন, দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। সে হিসাবে জনবল বাড়ছে না। কিছু কাজ সুনির্দিষ্ট করা থাকলে সুবিধা হতো। যেমন দিন আর রাতে মিলে পাঁচলাইশ মডেল থানায় ১২টি ডিউটি দল কাজ করে। একই কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্তের কাজও করাতে হয়। তদন্ত, ডিউটি, অপারেশন আলাদা আলাদা টিম থাকলে কাজ করতে সুবিধা হতো।”

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট