চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এবার ১২’শ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প পাউবো’র

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২২ জুলাই, ২০১৯ | ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ায় বিভিন্ন খালের ভাঙন ও জলাবদ্ধতারোধে ১২শ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে জলাবদ্ধতা ও খালের ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে উপকৃত হবেন ১২ ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ হবে।
এছাড়াও শ্রীমাই খালের ওপর ৪৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণের আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪.৫০ মিটার উচ্চতার এই এলিভেটর ড্যাম পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রথমবারের মতো নির্মাণ করতে যাচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক পানি ধরে রেখে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের সুবিধার আওতায় আসবে।
আজ (সোমবার) প্রকল্প দুটি পরিদর্শন করবেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। সঙ্গে থাকবেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীরসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পটিয়ায় ভাঙনরোধ ও জলাবদ্ধতামুক্ত হবে। খালের তীরের বাঁধটি যানবাহন চলাচল উপযোগী সড়কে পরিণত করারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এরফলে ভাঙনরোধ, সেচ সুবিধা ছাড়াও যোগাযোগব্যবস্থা ও ইকো-ট্যুরিজমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
পটিয়া সংসদীয় আসনের সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পুরো পটিয়া সুরক্ষিত হয়ে যাবে। বন্যা বা জলাবদ্ধতা বলতে আর কিছুই থাকবে না। একই সঙ্গে পটিয়ার চেহারাও পাল্টে যাবে।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ‘গ্রাম হবে শহর’। সেই মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে পটিয়ার উন্নয়ন। জলাবদ্ধতা নিরসন ছাড়াও খালের তীরে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। যোগাযোগক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, প্রকল্পে শিকলবাহা খাল থেকে মুরালিখাল, বোয়ালখালী খালের বামতীরে (পটিয়া অংশ) ২৫ দশমিক ১১ কিলোমিটার অংশে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও শিকলবাহা খালের শাখা খাল চাঁনখালী খালের ডানতীরে ৪ দশমিক ৫২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। দুটি খালে ভাঙনরোধে ২৯ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও সোনাছড়ি, হাজিপাড়া, আমজু সওদাগর, বাকাহারা শাখা খাল, আলম রাজম-ল খাল, উপ-কাজীর খাল, মীর বাড়ি খাল, চৌধুরী-আহ্লাই খাল, চাঁনখালী খাল, শ্রীমাই খাল, খানমোহনা খাল, শ্রীমাই শাখা খাল, দক্ষিণ ভূর্ষি খাল খনন করা হবে। ৩৬ কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করা হবে। ফলে সাত হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা বাড়বে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী অনুপম দাশ।
এছাড়াও গরুলুডা খালের ডান তীরে শূন্য দশমিক ১৫ কিলোমিটার, শিকলবাহা খালের ডান তীরে দশমিক ৬শ কি. মি, বোয়ালখালী খালের বাম তীরে শূন্য দশমিক ২ শ কি.মি ও শ্রীমাই খালের বাম তীরে শূন্য দশমিক ৭৫০ কি. মিটারসহ মোট এক দশমিক ৭০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ করা হবে।
প্রকল্পে ১৮টি ভেন্ট রেগুলেটর বসানো হবে। তম্মধ্যে খাটালি খাল, মাদারী খাল, মু-রী খাল, মেলঘর, জঙ্গলখাইন, দক্ষিণ ভূর্ষি, কালু ফকির খালে সাতটি। কাজীর খাল, আলম খাল, ঘোষের খাল, শ্রীমাই শাখা খাল, মোহনা খালে ৫টি ভেন্ট রেগুলেটর বসানো হবে। ব্রাহ্মণ আশিয়া চর কানাই মরা বৈদ্য খালে চারটি এবং কেরেঞ্জা খালের আউটফলে একটি গরুলুডার খালে একটি করে রেগুলেটর বসবে।
বাঁধের ঢালে ও দুই পাশে ওয়ার্কওয়ে ও বনায়ন করা হবে। এজন্য ১৯৩ দশমিক ২৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। বাঁধের জন্য ৬৯ দশমিক ৪ হেক্টর, রেগুলেটরের জন্য ৬ দশমিক ৫৯ হেক্টর, খালের ওয়ার্কওয়ের জন্য ১০৭ দশমিক ৭১ হেক্টর এবং ডাইভার্সন খালের জন্য ১০৭ দশমিক ৭১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
পটিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আশিয়া, হাবিলাসদ্বীপ, ধলঘাট, বড়লিয়া, দক্ষিণ ভূর্ষি, জঙ্গলখাইন, ভাটিখাইন, ছনহরা কচুয়াই, হাইদগাঁও, কেলিশহর ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ উপকৃত হবে।
জলাবদ্ধতা প্রকল্প ছাড়াও শ্রীমাই খালে একটি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণের প্রকল্প রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রকল্পটি নিয়েছে পাউবো। প্রাকৃতিক পানি ধরে রেখে চাষাবাদ করার জন্য প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ সুবিধা পাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী অনুপম দাশ পূর্বকোণকে বলেন, আশিয়া ও কালিয়াইশ ইউনিয়নের শিকলবাহা, মুরালী ও চাঁনখালী খালের ইন্দ্রপুল এবং ইন্দ্রপুল থেকে বোয়ালখালী খালের মিলিটারি পুল হয়ে পশ্চিম গোমদ-ী ও কোলাগাঁও ইউনিয়নের গরুলুডার খাল পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, ভেল্লাপাড়া সেতু থেকে কালিগঞ্জ সেতু পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার অংশে বাঁধ আগে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ইন্দ্রপুল থেকে কৃষ্ণখালের সাড়ে ৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। কৃষ্ণখালী খালের সাড়ে চার কিলোমিটার অংশে বাঁধ নির্মাণ হলে পৌরসদরে আর জলাবদ্ধতা হবে না।
তিনি আরও বলেন, বাঁধের প্রশস্ততা হবে ২০ ফুট। পরবর্তীতে বাঁধটির উপর রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। রাস্তা নির্মাণ করা হলে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি’ বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মাননীয় পানিসম্পদ মন্ত্রী প্রকল্পটি পরিদর্শনে আসছেন। আশা করছি, খুব শিগগিরই প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর পটিয়ায় বন্যা, জলাবদ্ধতা লাঘব হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট