চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ব্যয় হবে ২৪শ কোটি টাকা # ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে

রড নির্মাণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে জিপিএইচ গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ জুলাই, ২০১৯ | ১:৪২ পূর্বাহ্ণ

রড নির্মাণের জন্য বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এলো জিপিএইচ গ্রুপ। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই প্রযুক্তি সংযোজন করেছে শীর্ষ স্থানীয় এই শিল্প গ্রুপ। যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৪শ কোটি টাকা। বিশ্বের সর্বাধুনিক কোয়ান্টাম আর্ক প্রযুক্তির এ কারখানায় কাঁচামাল স্ক্র্যাপ থেকে শুরু করে লোহা উৎপাদন হবে মেশিনের মাধ্যমে। এতে দুর্ঘটনা ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে আসবে। এতে সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে পরিবেশ-প্রতিবেশ দূষণরোধ ছাড়াও বিদ্যুৎ, পানির সাশ্রয় হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রায় দেড়শ একরের জমির উপর প্রতিষ্ঠিত প্রকল্পটি চলতি বছরের মধ্যে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রকৌশলীরা। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিকমতো থাকলে আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হয়েছে প্রায় ৮.৪ লাখ মে. টন। তবে পরবর্তীতে ১০ টনেরও বেশি উৎপাদন করা যাবে বলে জানান প্রকৌশলী মোস্তাক আহমদ। জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। আগামী ২০ বছরের

পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। এরমাধ্যমে এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ এবং দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।’ বড় পর্দায় প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী জাহিদা সুমন। বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রড উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল বিলেট ও রোলিং কারখানা স্থাপনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন ক্ষমতা বজায় রাখা সম্ভব। প্রস্তাবিত প্রকল্পে যেকোন মাপের বিলেট ও রড উৎপাদন করা যাবে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একই ছাদে স্ক্যাপ থেকে বিলেট ও রড উৎপাদন করা হবে। ব্যবহৃত হবে উন্নত প্রযুক্তির টেকনোলজি। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। কারণ রড উৎপাদনের জন্য বেশির ভাগ বিলেট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। প্রকৌশলী জাহিদ সুমন বলেন, ইউরোপের নামকরা টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান প্রাইম মেটাল টেকনোলজির মেশিনারি ব্যবহার করা হয়েছে। পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় অক্সিজেন উৎপাদনেও উন্নত ও অত্যাধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। বায়ু নিঃসরণে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। যা বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মাত্রার চেয়ে অনেক কম কার্বন নিঃসরণ করবে। প্রকৌশলীরা দাবি করেন, কার্বন নিঃসরণের বিশ্বব্যাংকের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৫০ মি.গ্রাম আর ডিওই মাত্রা ৭৫ মি.গ্রাম। কিন্তু জিপিএইচের কার্বন মাত্রা হবে ১০ মি.গ্রাম।
প্রকৌশলী জাহিদ সুমন বলেন, রড উৎপাদনে প্রতিটনে ৩শ ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে গ্যাসের প্রয়োজন হবে মাত্র ৩৫ ঘনফুট। বিপুল পরিমাণ গ্যাস সাশ্রয় হবে। যা দিয়ে অন্তত ৩৭ হাজার পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ১ টন ইস্পাত পণ্য তৈরিতে খরচ হবে ৩১০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। বর্তমানে খরচ হচ্ছে ৫৫০-৬৫০ কিলোওয়াট। গ্যাস ছাড়াও প্রচুর বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
কাঁচামাল থেকে শুরু করে উৎপাদনে খরচ কমে আসায় উৎপাদিত পণ্যের কম রাখা হবে কিনা জানতে চাইলে জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলমাস শিমুল বলেন, ‘সব দিক দিয়ে উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে। কিন্তু ব্যবহৃত টেকনোলজির খরচ প্রচলিত টেকনোলজির চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করা হয়েছে। একমাত্র আমরা ঝুঁকি নিয়ে বড় বিনিয়োগ করেছি।’ তবে অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে দাম কিছুটা সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি।
মো. আলমাস শিমুল আরও বলেন, এতে ১০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। প্রতি বছর সরকার ২২৬ কোটি টাকার রাজস্ব পাবে।
প্রকৌশলী আসিফ উল হক বলেন, দেশ-বিদেশের এক শ প্রকৌশলী এই প্রকল্পে কাজ করছেন। যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি ব্যবহৃত হয়েছে জার্মানি, জাপান, আমেরিকা, ইটালি, অস্ট্রেয়িলার নামকরা বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির। উৎপাদিত পণ্যের মানের শত নিশ্চয়তা দিয়ে তিনি বলেন, স্ক্যাপ কাটা, পুড়ানো থেকে শুরু করে ব্যালেট ও রড উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে পণ্যের নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, স্ক্যাপের জন্য বড় দুটি শেড নির্মাণ করা হয়েছে। এতে প্রায় তিন লাখ টন স্ক্র্যাপ মজুত রাখা যাবে। তিনি বলেন, স্ক্র্যাপ থেকে রড উৎপাদন পর্যন্ত ৩০টি পদার্থ লেগে থাকে। যারজন্য পণ্যের মান বজায় রাখা কঠিন হয়ে যায়। সেই পদার্থ দূরীভূত করার জন্য আলাদা মেশিন বসানো হয়েছে। যাতে পণ্যের গুণগত মান একশ ভাগ বজায় থাকে।
প্রকল্পের সিভিল বিভাগের প্রকৌশলী মোস্তাক আহমদ বলেন, সম্প্রসারিত নতুন প্রকল্পে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বছরে ৮ দশমিক ৪ লাখ মে. টন। উৎপাদনের দুই বছর পর পর্যায়ক্রমে তা ১০ লাখ মে. টনের বেশি উপনীত করা হবে। জিপিএইচের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা বছরে প্রায় ২ লাখ মে. টন। নতুন প্রকল্পসহ প্রায় ১০ লাখ মে. টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।
সীতাকু-ে পানির সংকটের কথা চিন্তা করে পাহাড় লাগোয়া জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক পানি ধরে রেখে কারখানায় ব্যবহার করা হবে। বন ও পরিবেশ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়েল অনুমতি নিয়ে এই জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের। তবে কারখানায় ব্যবহৃত পানি বাইরে যাবে না উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কারখানায় ব্যবহৃত পানি পুনর্ব্যবহার করা হবে। এক ফোটা পানিও বাইরে ফেলা হবে না।’
এই প্রকল্পকে ঘিরে জিপিএইচ নির্মাণ করেছে সুদ্যৃশ্য একটি বহুতল ভবন। এই ভবনে থাকবে হেলিপ্যাডসুবিধাসহ ৫ তারকামানের হোটেলের সমব্যবস্থা। এই ডরমেটরি থাকবে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মকর্তা, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, কর্মরতদের থাকা-খাওয়ার সুবিধা, মিউজিয়াম, লাইব্রেবিসহ উন্নত বিশ্বের সব ধরনের সুবিধা। ২৪ ঘণ্টা এম্বুলেন্স সুবিধাসহ চিকিৎসক, নার্সও থাকবে।
জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বড় হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিডেন্স ও মানুষের মেধা-মনন ও শ্রমের ফলে অর্থনৈতিক ভিত শক্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৯৫ শতাংশ মানুষ নিজ উদ্যোগে ঝুঁকি নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও ১-২ শতাংশ শিল্প মালিক হচ্ছেন দ্বিতীয় প্রজন্মের। পৈত্রিকসূত্রে মালিক হয়েছেন।
গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, দেশের জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত হবে। তা বিবেচনা করে আমরা বড়, আধুনিক কারখানা করার উদ্যোগ নিয়েছি। সিমেন্ট কারখানার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, চার ধাপে উৎপাদন বাড়ানোর কারণে আমরা মার্কেট শেয়ার বাড়াতে পারিনি। অন্যরা কিন্তু বাজার নিয়ে নিয়েছে। অথচ আমাদের শেয়ার বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাই দেশে প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বড় শিল্প গ্রুপের নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।

 

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট