চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাথা তুলছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, প্রস্তুত হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর

এ এম হোবাইব সজীব, মহেশখালী

৯ জানুয়ারি, ২০২২ | ১২:৪৮ অপরাহ্ণ

এ এম হোবাইব সজীব, মহেশখালী

পাশেই যতদূর চোখ যায়, চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। প্রথম  দেখায় ঠিক বোঝার উপায় নেই জায়গাটি কোথায়। মনে হয় উন্নত বিশ্বের প্রথম সারির কোনো এক সমুদ্রবন্দর। কিন্তু না, এটি আসলে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ি-ধলঘাটা। এখানে নির্মাণ করা হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর। নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে ট্রানজিট পোর্ট তথা আঞ্চলিক বন্দর, যার মাধ্যমে সেবা প্রদান করা যাবে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত অঙ্গরাজ্য, নেপাল, ভুটানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে। জানা যায়, ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত দুটি জেটি নির্মাণ করে জাহাজ ভেড়ানোর টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে, গভীর সমুদ্র বন্দরসহ একগুচ্ছ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বদলে যাচ্ছে মহেশখালীর চিত্র। এরইমধ্যে কর্মযজ্ঞে মাথা তুলছে বিদ্যুকেন্দ্র, প্রস্তুত হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দরের জেটিও।

এখানে বছর চারেক আগেও উপজেলার মাতারবাড়ি-ধলঘাটায় দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে চোখে পড়ত শুধুই লবণ চাষ ও চিংড়ি মাছের ঘের। দিন পাল্টে এখন সেখানে টারবাইন, চিমনি মাথা তুলে উঁকি দিচ্ছে। আস্তে আস্তে সেখানকার নির্মাণযজ্ঞ একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবয়ব পেতে শুরু করেছে। আর দূরে গভীর সমুদ্রে একটি বন্দর স্থাপনের পরিকল্পনাও বাস্তব রূপ পেতে শুরু করেছে। তীরে জেটি তৈরির কাজও ইতোমধ্যে এগিয়েছে অনেকটা, ভিড়েছে প্রকল্পের জন্য আনা মালবাহী জাহাজও।

মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় এসব নির্মাণ কাজকে কেন্দ্র করে দিন-রাতের নিবিড় কর্মযজ্ঞে এরইমধ্যে আমূল পাল্টে গেছে সমুদ্র তীরবর্তী এই অঞ্চলের যুগ যুগ ধরে দেখে আসা সেই দৃশ্যপট। দেখা গেছে, সরকারের অগ্রাধিকার এই প্রকল্পে ক্রেন আর নানা ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে বিশাল এক নির্মাণযজ্ঞের কাজ করে চলেছেন দেশি-বিদেশি হাজারো কর্মী। সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নিয়ে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র করছে সেখানে। সঙ্গে কয়লা আমদানির জন্য একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজও চলছে।

প্রাথমিকভাবে বন্দরটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য হলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী এটিই হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর। পাশাপাশি মাতারবাড়িকে গড়ে তোলা হবে বিদ্যুৎ ও শিল্পোৎপাদন এবং জ্বালানি আমদানির হাব হিসেবেও। সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয় মিলে ধাপে ধাপে সেখানে বাস্তবায়ন করবে ৬৮টি প্রকল্প।

এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্যাস আমদানির জন্য টার্মিনাল ছাড়াও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ পুরো প্রকল্প এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে হাজার হাজার বিঘা জমি বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক মিটার উঁচু করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে এই এক বছরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি জেটিতে ৪৯টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হয়েছে।

মাতারবাড়ী প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ পূর্বকোণকে বলেন, আমাদের দুটি জেটি ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। একটা কয়লার জন্য, আরেকটা তেলের। চ্যানেল প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রথমে ছয়টি জেটি এবং পরে আরও জেটি নির্মাণ করবে।

উল্লেখ্য, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে জাইকার কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যাবে ১২ হাজার ৮৯৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষ দেবে ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং সরকার দেবে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট