চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বন্যায় চন্দনাইশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

২২ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশে গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে সড়ক, কৃষি, সবজি, মৎস্য প্রকল্প, ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ-কালভার্ট সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে।
সূত্রমতে, গত ৪ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে সড়ক, উপ-সড়ক, ব্রিজ-কালভার্টের এপ্রোচ সড়ক ল-ভ- হয়ে যায়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য প্রজেক্ট, পুকুর, কাঁচা বসতঘর বন্যার পানিতে বিলীন হয়ে যায়। উপজেলার চন্দনাইশ, দোহাজারী পৌরসভা, বরকল, বরমা, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী, দোহাজারী, ধোপাছড়ি, হাশিমপুর, কাঞ্চননগর, জোয়ারা এলাকায় হাজার হাজার মানুষ বন্যার শিকার হয়। পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার শস্য ভা-ারখ্যাত দোহাজারী শঙ্খ তীরবর্তী হাজার হাজার একর সবজি ক্ষেত। এছাড়াও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা, আউশ ধান, পানের বরজ, মুরগির খামার, মৎস্য প্রজেক্ট ও অসংখ্য দোকান-পাট।
সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার দু’টি পৌরসভা, ৮টি ইউনিয়নে ১২০ গ্রামের ৮ হাজার পরিবার সম্পূর্ণ ও ৩০ হাজার পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮শ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ১৫ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১শ হেক্টর ধানি জমি সম্পূর্ণ, ২০৩ হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও ৭৬টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮ কি.মি. এর বেশি সড়ক সম্পূর্ণ ও ৩০ কি.মি. আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০টি ব্রিজ কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসাথে বাঁধ আধা কি.মি. সম্পূর্ণ ও আড়াই কি.মি. আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চন্দনাইশে ৩ হাজার মৎস্য পুকুর-দিঘির মধ্যে ৩ হাজার ২শ মেট্রিক টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। এতে ক্ষয়-ক্ষতি ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, ৫০ লক্ষ টাকার পোনা, ৩০ লক্ষ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতিসহ ৪ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিবেদন দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। চন্দনাইশে গত বন্যায় ১৫০ একর চারণভূমি, ১২৫ একর নেপিয়ার, পাকচন, জার্মান পাড়া পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্য সংকটে রয়েছে খামারীরা। ৪শটি টিউবয়েল বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে বিশুদ্ধ পানি পানে সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। চন্দনাইশে ৭টি সাইক্লোন সেল্টারে ২ হাজারের অধিক লোক অবস্থান নেয়। বন্যা চলাকালীন ১৬টি টিম চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিল। শতাধিক কাঁচা বসতঘর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে।
চন্দনাইশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে চলতি অর্থবছরে সদ্য নির্মিত কাবিখা প্রকল্পের সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে যায়। এছাড়া অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় নির্মাণ করা কাঁচা রাস্তা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় নির্মিত গ্রামীণ রাস্তা ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম বদরুদ্দোজা উল্লেখিত তথ্যবলী প্রতিবেদন আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রেরণ করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, বন্যায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট ও কাঁচা রাস্তা, মৎস্য প্রজেক্ট, আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা, সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে সরকারি সাহায্য যথাযথভাবে পৌঁছানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট