চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সাফল্য দেখালো মা ও শিশু হাসপাতাল

চট্টগ্রামে বেসরকারি পর্যায়ে শিশুর প্রথম ব্রেন সার্জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:৪৫ অপরাহ্ণ

সন্ধ্যায় বারান্দায় খেলছিলো আড়াই বছরের শিশু প্রাপ্তি দেবী। হঠাৎ তিন তলা থেকে নিচে পড়ে যায় সে। ভেঙে যায় মাথার হাড়। শুরু হয় ব্যাপক রক্তক্ষরণ। স্বজনরা দ্রুত তাকে নিয়ে যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। তবে সেখানে আইসিইউ বেড খালি না থাকায় প্রাপ্তিকে নিয়ে পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছুটেন তারা। পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় ওই হাসপাতালও ফিরিয়ে দেয় প্রাপ্তিদের। বাবা প্রকাশ নাথ ও মা শাম্পু দেবীর ঘর আলো করে রাখা প্রাপ্তি দেবীর জীবনের আলো যখন নিভু নিভু তখনই এগিয়ে আসে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রামে বেসরকারি পর্যায়ে প্রথম কেস হিসেবে শিশু প্রাপ্তি দেবীর ব্রেন সার্জারি করান হাসপাতালটির নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মঈনুদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াস। কীভাবে হলো এই সফল সার্জারি- পেছনের গল্পটা ডা. ইলিয়াসের মুখেই শোনা যাক। ডা. ইলিয়াস পূর্বকোণকে বলেন, ১৩ নভেম্বর রাতে প্রাপ্তি দেবীকে মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর দ্রুত তাকে আমরা অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাই। অপারেশন করাতে গিয়ে দেখি- তার মাথার হাড় চার পাশে ভাঙা। এক্সট্রা ডুরাল, সাব ডুরালসহ মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। মগজগুলো গলে গলে বের হয়ে যাচ্ছিলো। এই পরিস্থিতিতে অপারেশন করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে আমরা অপারেশন শুরু করি। তিনি বলেন, চমেক হাসপাতাল ছাড়া নগরীর অন্য কোথাও ব্রেন সার্জারি এবং স্পাইনাল সার্জারির সুবিধা নেই। কোনো হাসপাতালই এ ধরনের রোগী ভর্তি করাতে চায় না। কিন্তু চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে প্রথম হিসেবে মা ও শিশু হাসপাতালে আমরা সেটা করেছি। সফলভাবেই শিশু প্রাপ্তি দেবীর ব্রেন সর্জারি করা হয়েছে। পরে আইসিইউতে রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ।
স্বজনদের সঙ্গে শিশু প্রাপ্তি দেবীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় তরুণ রুবেল বড়ুয়া। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, চমেক হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে আমরা প্রাপ্তিকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানেও ভর্তি করাতে ব্যর্থ হই। এক বন্ধুর মাধ্যমে মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা প্রাপ্তিকে ভর্তি করাতে রাজি হন। দ্রুতই তাকে মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই।
রুবেল বডুয়া বলেন, প্রাপ্তিকে শুধু চিকিৎসা সেবাই দেয়নি মা ও শিশু হাসপাতাল। এ ধরনের একটি অপারেশনের ক্ষেত্রে আড়াই লাখ টাকার বেশি বিল এলেও তারা শুধু খরচটুকু নিয়েছে। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে আমরা সেটা দিয়েছি। মা ও শিশু হাসপাতালের ট্রেজারার মোহাম্মদ সানাউল্লাহও আমাদের সহায়তা করেছেন। সবার চেষ্টায় নতুন জীবন পেয়েছে শিশু প্রাপ্তি দেবী।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট