চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুই কারণে কমেছে সবজি রপ্তানি

মোহাম্মদ আলী

৭ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

দুই কারণে মধ্যপ্রাচ্যে সবজি রপ্তানি ৫০ শতাংশ কমে গেছে। সে সব দেশে শীতকালীন সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ থেকে বীজ ও ফলদ চারা প্রেরণের কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ফ্রেশ ভেজিটেবল এন্ড ফ্রুটস এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান উদ্দিন রুবেল দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘১৫ নভেম্বরের আগেও চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিমান বন্দর দিয়ে প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৭০ থেকে ৮০ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি করতো চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকরা। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যেত ৩০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন। কিন্তু এখন বাংলাদেশের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান, কুয়েত, কাতার ও বাহরাইনে শীতকালীন সবজি উৎপাদন মওসুম শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় সে সব দেশের উৎপাদিত সবজি সেখানকার মানুষ ক্রয় করছে। তাতে কমে গেছে বাংলাদেশের সবজি রপ্তানি। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে মাত্র ৪ থেকে ৫ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি হচ্ছে।’
ফোরকান উদ্দিন রুবেল বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে প্রচুর বাংলাদেশি রয়েছে। তাদের মধ্যেও বাংলাদেশি সবজির চাহিদা বেশি। তাছাড়া প্রবাসিদের অনেকে সেখানে সবজি চাষ করে। তারাও বাংলাদেশ থেকে সবজি ও ফলদ বীজ নিয়ে যাচ্ছেন। তাতে ওইসব দেশে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি সবজির চাষ হচ্ছে। এতে মার খাচ্ছে বাংলাদেশি সবজি রপ্তানি।’
রপ্তানিকারকরা জানান, বিমান চলাচল স্বাভাবিক থাকলে চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্যে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন সবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল থেকে সবজি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে ঢাকা বিমান বন্দর দিয়ে প্রতিদিন মাত্র ৮ থেকে ১০ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি করেন চট্টগ্রামের সবজি রপ্তানিকারকরা। এর সাড়ে তিন মাস পর গত ৯ আগস্ট থেকে পুনরায় চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে সবজি রপ্তানি শুরু হয়। তখন থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিমান বন্দর দিয়ে প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৭০ থেকে ৮০ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি করতো চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকরা। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যেত ৩০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন। কিন্তু গত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয় শীতকালীন সবজি চাষ মওসুম। তা চলবে টানা ৬ মাস। এ অবস্থায় আগামী এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে বাংলাদেশি সবজির চাহিদা অনেকখানি হ্রাস পাবে। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ মেট্রিক টন সবজি যাবে সেখানে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ফল ও সবজির চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বহির্বিশ্বে। এর মধ্যে তুলনামূলক বেশি রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে। সবজির পাশাপাশি মৌসুমী ফলও রপ্তানি করে রপ্তানিকারকরা। তবে গত কয়েকবছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে শীতকালে সবজি রপ্তানি একেবারেই কমে যায়। সেখানে ব্যাপক হারে সবজি চাষের কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা থেকে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবজি ও মৌসুমী ফলমূল রপ্তানি হলেও চট্টগ্রাম থেকে শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান ও বাহরাইনে রপ্তানি হয়। বিশেষ করে ওইসব দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে দেশি সবজি ও ফলমূলের চাহিদা বেশি। তাদের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সবজি রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪০ ধরনের তাজা শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে চাহিদা বেশি দেশি আলু, কচু, কচুর লতি, কচুর ফুল, কচুর মুখি, করোলা, তিত করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, শসা, শিমবিচি ইত্যাদি সবজি। তাজা ফলমূলের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, লিচু, জলপাই, কালোজাম, আনারস, পানিফল, পান ইত্যাদি।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট