চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

পারিবারিক কলহের বলিমাসহ দুই শিশু সন্তান

২ মেয়েকে বিষ খাইয়ে দিয়ে বিষপানে মায়ের আত্মহত্যা রাঙ্গুনিয়ায়

নিজস্ব সংবাদদাতা

১ মে, ২০১৯ | ২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় এক নারী তার দুই শিশু সন্তানকে বিষ খাইয়ে দিয়ে নিজেও বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ভোররাত ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু ঘটে। এরআগে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় পারিবারিক কলহের জেরে নিহত ডেইজি আকতার (২৮) দুই মেয়ে ইলাফ নুর তাইফা (৬) ও ইসরাত নুর (১০ মাস) কে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ পান করেন। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের সিকদারপাড়া গ্রামে মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে। ডেইজি আকতারের স্বামী মুদি দোকানি নুরুন্নবী বাহদুর স্ত্রী ও দুই সন্তানের মৃত্যুর পর হাসপাতালে লাশ ফেলে পালিয়ে গেছেন। স্বামীর সাথে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদের জেরে স্ত্রী ডেইজি দুই সন্তান নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। ডেইজি একই ইউনিয়নের মীরেরখীল গ্রামের কবির আহমদ লেদুর মেয়ে। ২০০৯ সালে নুরুন্নবী বাহদুরের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের ছয় মাস পর থেকেই তাদের সংসারে অশান্তি বিরাজ করছিল। কারণে-অকারণে স্বামী মারধর করতো বলে জানিয়েছেন ডেইজির বড় ভাইয়ের স্ত্রী শামীমা আক্তার।
স্থানীয় নাছির উদ্দিন বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে বাহদুরের ভাই নুরুজ্জামান ঘরে বিষের গন্ধ পেয়ে চেঁচামেচি করে প্রতিবেশীদের ডেকে আনে। পার্শ্ববর্তী মুদির দোকানে অবস্থানরত স্বামী নুরুন্নবী বাহদুরও ওই সময় দোকান থেকে ছুটে আসে। পরে স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে প্রথমে দুই মেয়ে ও পরে মা ডেইজি’র মৃত্যু ঘটে।
ডেইজি আকতারের ভাবী মনোয়ারা বেগম জানান, বিভিন্ন অজুহাতে টাকা দাবি করে সময়-অসময়ে মারধর করতো বলে অত্যাচার সইতে না পেরে ডেইজি ঘন ঘন বাপের বাড়ি চলে আসতো। এরপর গ্রাম্য মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় বাহদুর অত্যাচার না করার অঙ্গীকার করে ডেইজিকে নিয়ে যান।
ডেইজির আরেক ভাবী শামিমা জানান, বিয়ের দুই বছর পর বাহদুর সৌদি আরব চলে যায়। বিয়ের ৪ বছর পর প্রথম সন্তান জন্ম নিলে সে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এসে বাড়ির পাশে একটি মুদির দোকান দেয় এবং বউয়ের গহনা বিক্রি করে দুইটি সিএনজি অটোরিক্সা কিনে ভাড়া দেয়। এমনকি সে পাকা বাড়ি নির্মাণ করাকালীন সময়ে ডেইজির ভাই ৫০ হাজার টাকা নগদ প্রদান করেন। বিদেশ থাকাকালীন সময় থেকে স্ত্রীকে পরকীয়ার সন্দেহ করতো তার স্বামী। তাদের মধ্যে প্রতিদিন এই নিয়ে বিভিন্ন সময় ঝগড়া লেগে থাকতো বলে তিনি জানান।
সর্বশেষ মারা যাওয়ার দিন দুপুরে ডেইজিকে বেদম মারধর করেছে। বিষপানের ২০ মিনিট আগেও তার সাথে ঝগড়া করেছিল বলে জানায় তার প্রতিবেশীরা।’
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, ডেইজি প্রথমে তার দুই মেয়েকে বিষ খাইয়ে দেন এবং পরে তিনি নিজেও বিষপান করেন বলে আমরা জেনেছি। পারিবারিক অশান্তির জেরে ডেইজি এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবুও এ ঘটনার পেছনে অন্য কিছু আছে কিনা, কেউ বিষ খাইয়ে দিয়েছে কিনা, সেটা তদন্ত করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট