চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

৮৬ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর স্বপ্নভঙ্গ

ইমরান বিন ছবুর  

৩ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:০৯ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ সারাদেশে গতকাল (বৃহস্পতিবার) একযোগে শুরু হয়েছে আলীম ও সমমানের পরীক্ষা। দেশের সব পরীক্ষার্থীর ন্যায় চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকার আহসান উলুম জামেয়া গাউছিয়া কামিল মাদ্রাসার ৮৬ শিক্ষার্থীও পরীক্ষা দেয়ার আশায় ছিলেন। যথাসময়ে সম্পন্ন করেছেন পরীক্ষার প্রস্তুতিও। পরীক্ষা শুরুর আগের দিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তবে পরীক্ষার দিন সকালে তারা জানতে পারেন, তাদের রেজিস্ট্রেশন এবং ফরম পূরণ কোনটিই সম্পন্ন হয়নি। কর্তৃপক্ষের এমন উত্তরে এই ৮৬ শিক্ষার্থীর মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। অন্যদিকে, অধ্যক্ষ আবুল বয়ান হাশেমীর পিতার ইন্তেকাল, দরবার ও পারিবারিক ঝামেলার কারণে যথাসময়ে রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না বলে জানান বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে আহসান উলুম জামেয়া গাউছিয়া কামিল মাদ্রাসায় ৮৬ জন আলীম পরীক্ষার্থী ছিলেন। করোনাকালীন সময়ে ক্লাস না হওয়ায় আলীমে ভর্তির পর থেকে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন মাদ্রাসায় আসেননি। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা ছাড়াই সবাইকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এরপর গত তিনমাস ধরে রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণের জন্য বিভিন্ন সময়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক যোগাযোগ করেছেন। হচ্ছে এবং হবে করে করেই দিন পার করেছেন কর্তৃপক্ষ।

পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসরাত জাহান জানান, অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মত আমরাও যথাসময়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। পরিবারের সবাই জানেন আমি এবার আলীম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছি। গত তিন মাস ধরে আমরা রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশ পত্রের জন্য একাধিকবার মাদ্রাসায় গিয়েছি। তারা হচ্ছে-হবে করে দিন পার করেছেন। সর্বশেষ গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে মাদ্রাসায় প্রবেশ পত্রের জন্য গেলে প্রবেশপত্র পাননি বলে জানান মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার দিন সকাল পর্যন্ত আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবো বলে আশায় ছিলাম। এখন আমরা কি করবো?

জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল বয়ান হাশেমী বলেন, আমার পিতা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী (রা.) ২০২০ সালের ২ জুন ইন্তেকাল করেন। পিতার ইন্তেকাল পরবর্তী বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ও আনুসাঙ্গিক ধকল সামাল দিতে গিয়ে মাদ্রাসার নিয়মিত কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্নের সর্বশেষ তারিখ ছিল ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর। নির্দিষ্ট তারিখের কিছুদিন পর ৮৬ শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করলে মাদ্রাসা বোর্ড তা গ্রহণ করেনি। এরপর ২০২১ সালের মার্চে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলেও আমাদের মাদ্রাসার ৮৬ শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় আমরা বোর্ডে যোগাযোগ করি। রেজিস্ট্রেশন না করায় আমাদের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়নি বলে জানান মাদ্রাসা বোর্ড।

তিনি আরো বলেন, এরপর থেকে আমি মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে একাধিকবার গিয়ে ধর্ণা দিয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেননি। বোর্ডের চেয়ারম্যান আমাকে কয়েকবার বলেছেন, আপনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বলেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বললে, তিনি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান কেন রেজিস্ট্রেশন করেননি তা আমি জানি না। আমি চেয়ারম্যানকে বলেছি, আমার ভুল হয়ে থাকলে আপনি আমাকে সাসপেন্ড করুন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ করে দিন।

বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়াম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদ বলেন, কোন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেনি তার অর্থ হচ্ছে ওই শিক্ষার্থীর ভর্তিই সম্পন্ন হয়নি। তার তো পরীক্ষা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আহসান উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ প্রতিটি বোর্ড পরীক্ষার সময় এমন করেন। আমি আড়াই বছর ধরে বোর্ডের চেয়াম্যানের দায়িত্বে রয়েছি। এরপর থেকে উনি প্রতিটি বোর্ড পরীক্ষার আগে বিভিন্ন ঝামেলা নিয়ে বোর্ডে আসেন। পরীক্ষার আগ মুহূর্তে এসে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়নি, ফরম পূরণে ভুল হয়েছে বলে বিভিন্ন কাজ নিয়ে আসেন। এইবার আলীম পরীক্ষা শুরুর মাত্র এক থেকে দেড় মাস আগে তিনি শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে চাচ্ছেন। এটা কি সম্ভব পরীক্ষার এক থেকে দেড় মাস আগে রেজিস্ট্রেশন করা?

বোর্ডের চেয়াম্যান আরো বলেন, উনি গতবার দাখিল পরীক্ষার সময় আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, দেরি করে আর কোন কাজ তিনি আনবেন না। তারপরও উনি পরীক্ষার আগ মুহূর্তে এসব কাজ নিয়ে আসেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট