চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে গত ৭ বছরে

সুস্থ শিশু জন্ম দিয়েছেন এইডস আক্রান্ত ২১ মা

ইমাম হোসাইন রাজু

১ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

ফটিকছড়ির সাজেদা বেগম (ছদ্মনাম)। এইচআইভি পজিটিভ এ নারী সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে ওই নারীকে অভয় দিয়ে কিছু পরামর্শ দেন একজন অভিজ্ঞ গাইনি বিশেষজ্ঞ। সেগুলো অনুসরণ করার পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখার পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্ববধানে থেকেই ওই প্রসূতি জন্ম দেন সুস্থ নবজাতক। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেলো সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর মধ্যে এইচআইভি’র অস্তিত্ব নেই।
অর্থাৎ ওই প্রসূতি নিজে এইডস আক্রান্ত হয়েও এইচআইভি নেগেটিভ শিশু জন্ম দিয়েছেন। তাও একটি নয়, পরপর দুটি সন্তানের জন্ম হয়েছে এইডস আক্রান্ত এই নারীর। দুই সন্তানই এখন পর্যন্ত সুস্থ আছেন। নিয়মানুযায়ী যারা নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন চিকিৎসকেরও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু সাজেদা বেগমই নয় (ছদ্মনাম)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে গত ৭ বছরে এইডস আক্রান্ত এমন ২১ জন গর্ভবর্তী মা সুস্থ- সবল শিশুর জন্ম দিয়েছেন। যারা এখন পর্যন্ত সুস্থ রয়েছেন। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রিভেনশন অব মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (পিএমটিসি) সেন্টারের বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন মানুষ এইচআইভি পজিটিভ বা এইডস আক্রান্ত হলেও নিয়মিত চিকিৎসা নিলে তিনি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। তারমধ্যে চিকিৎসার মাধ্যমে এইডসে আক্রান্ত মায়েরা এইচআইভি নেগেটিভ ও সুস্থ-সবল শিশুর জন্ম দেয়াও সম্ভব। তাই সচেতনা বাড়ানোর পাশাপাশি এনিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শর্মিলা বড়–য়া পূর্বকোণকে বলেন, ‘এইচআইভি সংক্রমণ আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের বিনামূল্যে সেবা দেয়া হয়ে থাকে। তাদের যখনই সন্তান প্রসবের সময় আসে, তখন চিকিৎসকদের নিয়মিত সেবা প্রদানের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করা হয়। ইতোমধ্যে এই সংক্রমণের সংখ্যা যেমন কমে এসেছে, তেমনি সুস্থ সন্তান জন্মও দিয়ে যাচ্ছেন আক্রান্ত নারীরা। যদি সচেতনতা বাড়ানো যায় তবে আশা করি এইডসের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে আসবে বলেও মত এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের।’
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যে জানা যায়, ২০২০ সালে এইডস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৯ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। তার আগের বছর ২০১৯ সালে শনাক্ত হয় ৭১ জন রোগী। যাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১০ জনের। এদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৫ জনে। এর আগের বছর ২০১৭ সালে তা ছিল মাত্র ৩০ জনে।
চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাকালে জানা যায়, চট্টগ্রামের নারীরা তাদের প্রবাসী স্বামীদের দ্বারাই এইচআইভির সংক্রমিত হচ্ছেন। যাদের মধ্যে ওমান, দুবাই, আরব আমিরাত প্রবাসীর সংখ্যাই বেশি। প্রবাসীদের অসচেতনতায় তাদের স্ত্রীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এইচআইভি এই ভাইরাসে। অনেক সময় অসেচতনা বা চিকিৎসার বাইরে থাকায় জন্ম নেয়া শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এ ভাইরাসে। তবে চিকিৎসা নিলে এইডস থেকে দীর্ঘসময় ধরে বেঁচে থাকা সম্ভব বলেও মত তাঁদের।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট