চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

লিজগ্রহীতা ২৬২ বাগান মালিকের কোন তথ্য নেই

ঘুরপাক নানা সমস্যায়

মোহাম্মদ আলী 

২৯ নভেম্বর, ২০২১ | ১২:২১ অপরাহ্ণ

নানা সমস্যার আবর্তে বাংলাদেশ রাবার বোর্ড। বাগানে বছরে দুইবার নির্দিষ্ট পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, দক্ষ টেপারের সংকট, প্রশিক্ষণের অভাবসহ নানা সংকটের কারণে রাবার গাছের সক্ষমতা অল্প সময়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

তাছাড়া কাছাকাছি ফ্যাক্টরি না থাকায় ছোট ছোট রাবার চাষীরা তাদের উৎপাদিত ল্যাটেক্স সরবরাহ করতে পারে না। ফলে অনেক সময় সংগৃহীত ল্যাটেক্স নষ্ট হয়ে যায়। রাবার শিট পরিবহনে এবং কষ সংরক্ষণকালীন রাবার বাগান মালিকদের কাছে চাঁদা দাবি নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তাতে প্রকৃত রাবার চাষীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। এছাড়া বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের নিজস্ব ল্যাবরেটরি নেই। নেই কোন গবেষক, বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক। এ নিয়ে রাবার চাষে আধুনিকায়ন করা যাচ্ছে না।  

এদেশে প্রস্তুতকৃত রাবারের পণ্য বিদেশে রপ্তানিতে ট্যাক্স দিতে হয় ৫%-১৫%। বিপরীতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত রাবারজাত দ্রব্যের ট্যাক্স রয়েছে শুধুমাত্র ১%। আমদানি-রপ্তানির এ বৈষম্যের কারণে রাবার চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাবার চাষীদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। রাবারকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করা হলে চাষীরা ঋণ প্রাপ্তিতে সুবিধা পেত। একই সাথে রাবারে বেশি বিনিয়োগ করতে পারতো।

এদিকে সরকার থেকে লিজ নেওয়া ২৬২ জন রাবার বাগান মালিকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাচ্ছে না বাংলাদেশ রাবার বোর্ড। ১৯৮০-৮১ সাল ও ১৯৯৪-৯৫ থেকে এসব ব্যক্তি ৪০ বছরের জন্য ২৫ একর করে ৬ হাজার ৫৫০ একর সরকারি জমি লিজ নিলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্যে কতজন রাবার চাষ করেছে তার কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে তাদের লিজের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত পুননবায়নের জন্য কেউ আবেদনও করেননি। ফলে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছে বাংলাদেশ রাবার বোর্ড।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সৈয়দা সারওয়ার জাহান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বান্দরবানের ২৬২ ব্যক্তিকে ১৯৮০-৮১ সাল ও ১৯৯৪-৯৫ সালে সংশ্লিষ্ট বান্দরবান জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাবার চাষে ৪০ বছরের জন্য ২৫ একর করে ৬ হাজার ৫৫০ একর সরকারি জমি লিজ দেওয়া হয়। তাদের ইজারা মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তাদের ইজারা নবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকদের বরাবরে চিঠি দিয়েছি।’

সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, ‘২৬২ জনের মধ্যে কতজন রাবার চাষ করেছে বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের কাছে তার কোন তথ্য নেই। এ কারণে সরকারের  রাজস্ব আদায় ব্যাহতসহ প্রকৃত রাবার চাষীরা নিরুৎসাহিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু বান্দরবান জেলা নয়, এর আগে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসক বরাবরে রাবার চাষে লিজ নেওয়া ব্যক্তিদের তথ্য জানতে বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

সূত্র জানায়, রাবার উৎপাদন এবং বিপণনে বিএফআইডিসি ছাড়াও বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১১টি রাবার বাগান রয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে বান্দরবানের ৩২ হাজার ৫৫০ একর জমি ১৩০৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে (২৫ একর করে জনপ্রতি)। বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে ১৮ সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটি প্রকৃত রাবার চাষীদের মধ্যে জমি লিজ দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তিন হাজার ৩শ একর জমিতে রাবার বাগান করে। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা  ২০ হাজার ৮শ একর জমিতে রাবার চাষ করে।

বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যত রাবার চাষ হয়, তারমধ্যে ৯৫ শতাংশ হয় বান্দরবান জেলায়। এ জেলায় ব্যক্তি মালিকানাধীন রাবার চাষের জমির পরিমাণ হচ্ছে ৩২ হাজার ৫শ একর। রাবার মালিক রয়েছেন ১৩০৭ জন। এরমধ্যে জমি লিজ নিয়ে চাষ না করাসহ বিভিন্ন কারণে জেলা প্রশাসনের কার্যলয় থেকে ৪০০ জনের লিজ বাতিল করা হয়। পরে এর মধ্যে ১০০ জনের লিজ পুনঃনবায়ন করা হয়।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট