চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নতুন বিড়ম্বনা ‘কোথায় যাবেন’

সারোয়ার আহমদ 

২৭ নভেম্বর, ২০২১ | ১:২২ অপরাহ্ণ

নগরীর রাস্তায় ও মোড়ে মোড়ে শুরু হয়েছে নতুন বিড়ম্বনা। মাঝ রাস্তায় কিংবা মোড়ে দাঁড়ালেই মোটরসাইকেল রাইডারদের প্রশ্ন, ‘কোথায় যাবেন’? নিজ থেকে কেউ গাড়ি না খুঁজলেও রাইডারদের এমন অহরহ প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে নগরীর প্রায় প্রতিটি রাস্তায়।

অথচ এসব রাইড শেয়ারিং রাইডারদের অ্যাপে রিকুয়েস্ট আসার পর নির্ধারিত ব্যাক্তিকেই যাত্রী হিসেবে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে অ্যাপ বাদ দিয়ে দর কষাকষি করেই ভাড়া নিচ্ছেন অধিকাংশ মোটরসাইকেল রাইডাররা। এতে যেমন নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে, তেমনি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় রাইড শেয়ারিং সেবার বিষয়টি।

রাইড শেয়ারিং বিশ্বে ২০১০ সালে শুরু হলেও বাংলাদেশে এর পরিচিতি পায় ২০১৬ সালের দিকে। যাত্রাপথে ব্যক্তিগত গাড়িতে যাত্রী বহন করে বাড়তি কিছু অর্থ উপার্জনের এক নতুন দিগন্ত শুরু হয়েছিল পাঠাও ও উবার নামের কিছু রাইড শেয়ারিং অ্যাপসের মাধ্যমে। খুব অল্প সময়ে রাইড শেয়ারিং বিষয়টি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠলে অনেকেই এটিকে সরাসরি পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু পাঠাও-উবারের মত যেসব প্রতিষ্ঠান রাইড শেয়ারিং বিষয়টি সবার কাছে তুলে এনেছিল এখন তাদের অ্যাপ বাদ দিয়েই রাইডাররা লোকাল গাড়ির মতো দর কষাকষি করে যাত্রী তুলছেন। ফলে অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিংয়ের বিষয়টিই চাপা পড়ে যাচ্ছে।

এদিকে রাইড শেয়ারিং সেবাকে নিয়ে সরকার ভাবছে বৃহৎ ভাবে। এ নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা হয় ‘রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭’। যা ২০১৮ সালের ৮ মার্চ থেকে কার্যকর ধরা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী রাইড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর অধীনে এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট নিতে হবে।

বিআরটিএ’র সূত্র অনুযায়ী এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত এমন রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৪টি। নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ছাড়াও প্রতিটি রাইডারদের ‘রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ নেওয়ার কথা। বিআরটিএ ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে এই সার্টিফিকেট নিতে হবে রাইডারদের। কিন্তু গত নীতিমালা প্রণয়নের পর তিন বছরে এই সার্টিফিকেট পেয়েছে শুধু রাজধানী ঢাকার ২৫ হাজার রাইডার। কিন্তু চট্টগ্রামে রাইডারদের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটের আওতায় আনা যায়নি।

এদিকে সাম্প্রতিক রাইড শেয়ারিংয়ের বিষয়ে অনেক অভিযোগ আসায় অ্যাপ ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা রেখে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিআরটিএ। বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলেছে, অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা দেওয়ার জন্য সরকার রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭ করেছে। এ নীতিমালা অনুযায়ী বিআরটিএ থেকে রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট নিয়ে নেওয়ার পর রাইড শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে এই সেবা প্রদান ও গ্রহণ এবং সুনির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া আদায়ের শর্ত রয়েছে।

“সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কতিপয় মোটরযান চালক এ নীতিমালার শর্ত পালন করছেন না। শর্ত পালন না করে চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা প্রদান ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, যা রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালার পরিপন্থী’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চুক্তিভিত্তিক মোটরযান পরিচালনাসহ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে সংশ্লিষ্ট রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, মোটরযান মালিক, মোটরযান চালক এবং সেবাগ্রহণকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমন বিজ্ঞপ্তির পরেও এখন নগরীতে পাঠাও-উবার অ্যাপে ঢুকে কোন রাইডার পাওয়া যায় না। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও রাইডার রাইড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে না। কিন্তু রাস্তার মোড়ে ঠিকই রাইডার মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

অ্যাপ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নেওয়া ব্যাপারে সম্মিলিত রাইডার্স অব চট্টগ্রামের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ পূর্বকোণকে বলেন, পাঠাও-উবার রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কমিশন বাড়িয়ে দিয়েছে। রাইডাররা ভাড়া নিয়ে নিজের লাখ টাকার গাড়িতে তেল পুড়িয়ে ভাড়া নিয়ে গন্তব্যে যায়। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো কমিশন হিসেবে ২৫/৩০টাকা কেটে রাখে।

এর বিনিময়ে রাইডারদের কোন সেবা দেয় না। এমনকি রাইড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাইডারদের সাথে কোন আলোচনা ছাড়াই এককভাবে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণে অনেকেই ক্ষোভ থেকেই চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নেয়। তবে আমরা অনেকবার দাবি করার করার পর পাঠাও কিছুটা তাদের কমিশন কমিয়েছে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেটি তারা করেছে। আমরা চাই ২৪ ঘণ্টাই একই কমিশন তারা নিক। আমরাও সংগঠনের প্রতিটি সদস্যকে অ্যাপ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। তারও আমাদের আশ^স্ত করছেন অ্যাপ ছাড়া রাইড দিবেন না।

একই বিষয়ে পাঠাও এর সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফাহিম আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি সম্প্রতি রাইড শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু চালক ও যাত্রী ‘অফ-লাইন ট্রিপের’ প্রতি ঝুঁকছেন। অ্যাপ বহির্ভূত রাইড সার্ভিসে নানা নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় তা বন্ধ করতে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। এছাড়া চালক ও যাত্রীদের এ বিষয়ে আরো সচেতন করতে নিয়মিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্পেইনের আয়োজন করছি। বিষয়টি তদারকি করা প্রয়োজন।

এদিকে সিএমপি’র ট্রাফিক-উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলী হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে মোটরবাইকে অ্যাপ ছাড়াই দর কষাকষি করে যাত্রী বহন করছে। এতে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকে যাত্রীরা; কেননা অ্যাপে ব্যবহারের ক্ষেত্রে চালকরা নিবন্ধিত থাকেন বলে তাদের তথ্য কোম্পানিগুলোর কাছে থাকে। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক ভাড়ার ক্ষেত্রে চালককে চিহ্নিত করার সুযোগ বেশিরভাগ সময় থাকে না।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট