চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

মন্তব্য প্রতিবেদন

শুভ সূচনা হোক নতুন দিনের

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী

২৭ নভেম্বর, ২০২১ | ৩:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ ২৭ দিন পর আজ খুলছে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক)। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে হোস্টেলও খুলে দেয়া হবে। এভাবেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে চমেকের শিক্ষা ব্যবস্থা। ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ছুটির পর শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় আবার সরব হবে ক্যাম্পাস, এটাই প্রত্যাশা করছি।
মহামারী করোনার কারণে দেড় বছর চমেক ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর কলেজ খোলার দেড় মাসের মাথায় গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। আহত ৫ শিক্ষার্থীর একজন বলা যায় মুমূর্ষূ অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তির পর বেঁচে ফিরেছে। দু’দিন ধরে হানাহানির পর কর্তৃপক্ষ ৩০ অক্টোবর কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির প্রতিবেদন এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় দোষী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। ১৯৭৯ সালের পর চমেক কর্তৃপক্ষ ছাত্ররাজনীতির আড়ালে কৃত অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাতের বিরুদ্ধে আরেকবার একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জড়িত শিক্ষার্থীদের বহিস্কার করার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহসকে সর্বমহল প্রশংসা করেছে।
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে আজ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালুর প্রাক্কালে শিক্ষার্থীদের প্রতি একটাই সনির্বন্ধ অনুরোধ, এই সময়ে শিক্ষা অর্জনই হোক আপনাদের মূল ব্রত। আমরা সবাই জানি, মেধাবী শিক্ষার্থীরাই চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়তে আসেন। আর এই শিক্ষার সঙ্গে মানুষের জীবন- মরণ সম্পর্ক। এখানে খামখেয়ালীপনার কোন স্থান নেই। ফাঁকি দেয়া কিংবা শিক্ষার বাইরে ভিন্ন কোন জগত নিয়ে ভাবার তেমন অবকাশ নেই। প্রথা পরম্পরায় দেশের সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র- রাজনীতির অস্তিত্ব আছে। সেই ধারা বহন করছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজও। উন্নত বিশ্বে এ ধরণের বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নেই। কিন্তু চলমান বাস্তবতায় মেডিক্যাল শিক্ষায় রাজনৈতিক চর্চা সেই অর্থে মানানসই কিনা, সেটা ভাবতে হবে আপনাদের। শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে দাবি- দাওয়া থাকলে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক আদর্শগত মত পার্থক্যের কারণে কিংবা বহিরাগতের প্রভাবে তাদের কারো ক্রীড়নক হয়ে সহপাঠি বা ‘ভাইয়ে ভাইয়ে’ হানাহানি কোনক্রমেই কাম্য নয়। অশুভ প্রভাবের খপ্পরে পড়াদের ডাকে যখন- তখন তথাকথিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার বিষয়ে সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। মনে রাখতে হবে, অনাকাঙ্ক্ষিত একেকটি ঘটনা ঘটলেই চমেক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হওয়া কয়েকশ রোগীর চিকিৎসা ব্যহত হয়। ঘটনা যদি একটু আগ্রাসী হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতি হয় অবর্ণনীয়- অপূরণীয়। বাবা- মা, অভিভাবকগণ অনেক স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতে পাঠান। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের পরিবর্তে কতিপয় শিক্ষার্থী অপ-রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে নিজেরা ভবিষ্যতকে ধূলিস্যাৎ করেন অন্য শিক্ষার্থীতের জীবনও অন্ধকারে ঠেলে দেন। এই যে অপতৎপরতা বছরের পর বছর চমেকে চলে আসছে, সেই ধারা এবার থেমে যাক। নতুন দিনের শুভ সূচনা হোক আজ থেকে, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের কাছে এটাই প্রত্যাশা। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হোক দেশের আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট