চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

চালুই করা গেল না মৃতদেহের বিনামূল্যের গোসলখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ নভেম্বর, ২০২১ | ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ

চমেক হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া গরিব ও দুস্থদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গোসল ও কাফন পরানোর জন্য আধুনিক গোসলখানা নির্মাণ করে এনজিও সংস্থা আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন। মৃতদেহের আধুনিক এ গোসলখানাটি নির্মাণ করা হলেও চালুর আগেই তা বন্ধ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষের দাবি, নীতিমালা অনুসরণ না করার কারণেই এটি বন্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সকল শর্ত মেনেই নির্মাণ করা হয়েছে। কোন ত্রুটিই তাতে নেই। বরং কারও কান কথায় বিভ্রান্ত তথ্যের কারণেই এটি বন্ধ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুমোদন নিয়েই গত ৮ আগস্ট গোসলখানা নির্মাণের কাজ শুরু করে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন। যা গত ১৪ সেপ্টেম্বর কক্ষ নির্মাণসহ সকল যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শেষ করে। এরমধ্যে গত ২২ নভেম্বর সাইনবোর্ডটি নামিয়ে ফেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে কক্ষে তালাও ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, গত ২২ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ১১টায় পরিচালক, মসিজেদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও অন্যান্যরা আমাদের টাঙ্গানো সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে দেন, একইসঙ্গে কক্ষের দরজায় শিকল দিয়ে তালা দেন। কিন্তু হঠাৎ কী কারণে এমনটি করা হলো, তা আমরা কিছুই জানি না। এরমধ্যে হাসপাতালের দেয়া নীতিমালা অনুযায়ী সাইনবোর্ড তৈরি করে গত বুধবার তা টাঙ্গাতে গেলে মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন এসে বাধা দেন। একই সঙ্গে সাইনবোর্ড লাগালে সমস্যা হবে বলে হুমকিও দেন।’

বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক পূর্বকোণকে বলেন, ‘অনুমোদন দেয়ার সময় আমাদের কমিটির করে দেয়া কিছু নীতিমালা দেয়া হয়েছিল। সেই নীতিমালা অনুসারে কাজ করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা নীতিমালা অনুসরণ করেনি। নীতিমালায় একটি রুলস আছে, কর্তৃপক্ষ চাইলে যেকোন সময় এ চুক্তি বাতিল করতে পারবে। যেহেতু তারা চুক্তি অনুযায়ী শর্ত পালন করেনি, সে জন্য গত ২২ নভেম্বর আরেক চিঠিতে তাদের জানিয়েছি, আপনারা চুক্তি পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বিধায় আমরা তা বাতিল করলাম।’

সংগ্রহ করা অনুমতির সময় দেয়া নীতিমালায় মরদেহ গোসলখানাটি সম্পূর্ণ অস্থায়ী, চমেক কেন্দ্রীয় মসজিদের যেকোন প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি প্রতিস্থাপন ছাড়াই সরানোর অধিকার রাখে। গরিব-দুস্থদের সাহাযার্থে করা হয়েছে, এখানে কোন প্রকার আর্থিক লেনেদন করা যাবে না, একজন কেয়ার টেকার নিয়োগ করতে হবে, উল্লেখিত শর্তসমূহ ভঙ্গ হলে অথবা কোন প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ উক্ত গোসলখানাটি ভেঙে ফেলার সম্পূর্ণ এখতিয়ার সংরক্ষণ করেন বলে ৯টি শর্ত উল্লেখ করা হয় তাতে।

কী প্রয়োজন এবং কী ধরণের ত্রুটি পাওয়া গেছে এমন প্রশ্নে পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘পূর্ব থেকেই সরকারিভাবে একটি গোসলখানা আছে, সেটা সুন্দরভাবেই চলছে। তাছাড়া এরমধ্যে একটা খবর পেলাম তারা টাকা নিতে দানবক্সের ব্যবস্থা করছে। যেহেতু হাপসাতালে রোগীদের সবকিছুই ফ্রিতে করানো হচ্ছে, সেখানে এমনটি কখনোই আমি করতে দেব না।’

হাসপাতালের পরিচালকের বক্তব্য তুলে ধরলে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কোন নীতিমালা অনুসরণ করিনি বা কোন নীতিমালাটি ভঙ্গ করেছি, তা আজ পর্যন্ত আমাদের জানানোই হয়নি। কিংবা কারণ দর্শানোর নোটিশও আমরা পাইনি। বিনা কারণেই উদ্দেশ্য প্রণোদিততভাবে গোসলখানাটি বন্ধ করা হয়েছে বলে মনে করি।’

কারও কান কথায় দানবক্সের মতো ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরাতো এখনও কাজও শুরু করেনি। দানবাক্স কোথায় পেয়েছে? সেটি আমাদের দেখিয়ে দেয়া হোক। কিংবা কোন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছি, তাও দেখিয়ে দেয়া হোক। বরং তিনি নিজেই আমাদের সঙ্গে একদিন আলোচনায় বলেছিলেন, কেউ কাফনের বিনিময় দিতে চায়, সেটি ডোনেশন আকারে মানি রিসিট দিয়ে গ্রহণ করা হয়। আমরা তাতে সম্মত হয়ে পৃথকভাবে ব্যাংক একাউন্ট খুলেছি। উনার মতো বিজ্ঞ মানুষ কারও কান কথায় এমন সিদ্ধান্ত নেবে তা আমরা কোনভাবেই আশা করতে পারি না।’

নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের দেয়া সাইনবোর্ডে ‘গরিব-দুস্থদের জন্য বিনামূল্যে কাফনসহ গোসলের ব্যবস্থা’ এই বাক্যটি উল্লেখ করা থাকলেও নীতিমালায় দেয়া সাইনবোর্ডে বাক্যটি বাদ দেয়া হয়। মূলত এ গোসলখানাটি চালু হলে একটি পক্ষের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, সে জন্য তারাই পরিচালককে ভুল বুজিয়ে এমন কাজ করছেন। তবুও আমরা আশা রাখি, গরিব দুস্থদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে সুদৃষ্টি রাখবেন।

 

পূর্বকোণ/মামুন/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট