চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জালিয়াতি করে পণ্য খালাস, হয়নি কায়িক পরীক্ষা-শুল্কায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৫ নভেম্বর, ২০২১ | ১:১৫ অপরাহ্ণ

আমদানিকৃত পণ্য খালাসের আগে শুল্ক নির্ধারণ ও কায়িক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেই বাধ্যবাধকতাকে আড়ালে রেখে কোন রকম কায়িক পরীক্ষা ছাড়াই আমদানি করা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি খালাসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তা। আর এ কাজে সহযোগিতা করে দুই সিএন্ডএফ এজেন্ট।

শুধু তাই নয়, কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা ও সিএন্ডএফ এজেন্টের সহযোগিতায় জাল কাগজপত্র তৈরি করে শুল্কায়নের সরকারি রাজস্বের ২৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫০২ টাকা আত্মসাৎ করেন তারা। দুদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দালিলিক প্রমাণ পাওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুই কর্মকর্তা ও দুই সিএন্ডএফ এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

গতকাল বুধবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়। একই কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আবু সাঈদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা (সাব টিম-১২ ও অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রশাসন শাখা) নাছির উদ্দিন মাহমুদ খান, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (সেকশন-বি) মো. রবিউল ইসলাম মোল্লা, নেপচুন ট্রেডিং এজেন্সির মালিক ইকবাল হোসেন মজুমদার ও বনলতা শিপিং এজেন্সির মালিক আব্দুল মান্নান চৌধুরী।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক মো. লুৎফুল কবীর চন্দন বলেন, দালিলিক প্রমাণ পাওয়ায় কমিশনের অনুমোদনক্রমেই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুদক জানায়, ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর এলসির মাধ্যমে ঢাকার মেসার্স রয়েল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান চায়না থেকে ইলেক্ট্রনিক্স বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানি করে। যা জাহাজযোগে একই বছরের ২১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আমদানিকারক পণ্যের শুল্ক পরিশোধের জন্য সিএন্ডএফ এজেন্ট নেপচুন এজেন্সি নিকট সকল রেকর্ডপত্র সরবরাহ করেন। একই সঙ্গে সিএন্ডএফ এজেন্সির চাহিদামতো তিনধাপে সর্বমোট ১৯ লাখ টাকা প্রেরণ করেন। সর্বশেষ একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর সকল কার্যক্রম শেষে মালামাল খালাস করে নিয়ে যাওয়া হয়।

দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্কের চাহিদাকৃত অর্থ জমা দিলেও দুই রাজস্ব কর্মকর্তা ও দুই এজেন্সির মালিক অগোচরে জাল কাগজপত্র তৈরি করে কাস্টম হাউসে মাত্র ২ লাখ ৬৮ হাজার ১২৯ টাকা পরিশোধ করেন। এছাড়া কোন রকম কায়িক পরীক্ষা না করেই পণ্য খালাস করেন। যদিও সর্বশেষ শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর পণ্যগুলো আটক করার পর যাচাই-বাছাই করে দেখায় যায় এসব পণ্যের প্রকৃত শুল্ক ২৭ লাখ ১ হাজার ৬৩২ টাকা। অর্থাৎ বাকি ২৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫০২ টাকা নিজেরা আত্মসাৎ করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম মোল্লা রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে চালানের পণ্যের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য কায়িক পরীক্ষা না করেই দ্রুত সময়ের মধ্যেই তা খালাস করেন। অন্যদিকে, একইভাবে রাজস্ব কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ খান এসব ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শুল্কায়ন করেন। যদিও তিনি ক্যাপিটাল মেশিনারি খালাসকালে কায়িক পরীক্ষা করা হয় বলে উল্লেখ করেছেন। তবে খালাসকালে কায়িক পরীক্ষার নির্দেশনা প্রদানের কোন প্রমাণ পাওয়া  যায়নি। এতে প্রমাণিত হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জালিয়াতি করে নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ও অন্যকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি ২৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫০২ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট