চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

৮৬ বালুমহাল, দরপত্র মাত্র ২৭কোটি

কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১ মে, ২০১৯ | ২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বালুগ্রাসীদের কারণে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ৮৬ বালুমহালের মধ্যে ২৭টিতে ইজারার দরপত্র জমা পড়েছে। একটি মহাল ইজারা নিয়ে আশপাশের মহাল থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে বালুখেকোরা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি বছর ৮৬ বালু মহাল ইজারার দরপত্র আহ্বান করে জেলা প্রশাসক। দরপত্রের বিপরীতে ৪৯টি ফরম বিক্রি করা হয়। কিন্তু জমা পড়েছে ২৭টি দরপত্র। বাংলা সনের হিসাবে এক বছরের জন্য বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। দুই দফায় টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ইজারার কার্যাদেশ দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১০-১২টি মহালের টাকা জমা পড়েছে। চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত কার্যাদেশ প্রদানের সময় রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের অধীনে এক সময়ে ১১৭টি বালুমহাল ছিল। এই থেকে ৫০-৫৫টি মহাল ইজারা দেওয়া হত। তবে কয়েক বছর ধরে ইজারাদারের সংখ্যা কমে আসছে। একটি মহাল ইজারা নিয়ে আশপাশের একাধিক মহাল দখল করে বালু উত্তোলন করে আসছে। ২০১৭ সালে ইজারাযোগ্য বালুমহালের সংখ্যা ছিল ৯৮ টি। কিন্তু প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী থেকে বালুমহাল বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে বিভাগীয় কমিশনার। হালদা নদীর বালুমহাল বিলুপ্তির পর ৮৬টি বালুমহাল ইজারার দরপত্র আহ্বান করে আসছে জেলা প্রশাসন। প্রতি মৌসুমে বালুমহাল ইজারার সংখ্যা কমে আসছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারি দলের প্রভাবশালীরা বালু ব্যবসায়ী জড়িত। সরকারের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কৌশল চলে আসছে। অনেক সময় আধিপত্য বিস্তার করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, চলতি ২৭টি দরপত্র জমা পড়েছে। তারমধ্যে রাউজানে সরকারিভাবে ১২টি বালুমহাল রয়েছে। কিন্তু দরপত্র জমা পড়েছে মাত্র একটি মহালের। বাকি ১১টি মহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলে আসছে। রাঙ্গুনীয়ায় ১১টি মহাল চিহিৃত করা হলেও তালিকার বাইরে রয়েছেন অন্তত ৫-৬টি মহাল। ১১টি মহালের মধ্যে ইজারার দরপত্র জমা পড়েছে ছয়টি। অন্যগুলো ইজারা না নিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হয়েছে। সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সিন্ডিকেট লুটেপুটে খাচ্ছে সরকারি অধিকাংশ বালুমহাল।
জেলা প্রশাসন ৬ বছর ধরে বালুমহাল থেকে রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সি-িকেটের কবলে আটকে গেছে বালুমহালগুলো।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে বালুমহাল ইজারা বাড়ানো যাচ্ছে না। বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে। প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে ইজারা না নিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বেড়ে চলেছে। উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে বালুখেকোদের যোগসাজশের কারণে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বাড়ছে।
সরকারি তালিকায় বোয়ালখালীতে কোন বালুমহাল নেই। অথচ কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন চর জেগে উঠছে। জেগে উঠা এসব চর থেকে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করা হলেও প্রশাসনের তালিকায় নেই। বোয়ালখালীর কধুরখীল, চরণদ্বীপ ও খরণদ্বীপে নদীতে জেগে ওঠা অন্তত ৬টি চর থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। অবৈধভাবে বালু তোলা হলেও প্রশাসনের দুর্বলতায় তা সরকারি তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অপরদিকে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে সরকারিদলের কয়েকজন নেতা। বোয়ালখালী ছাড়াও রাউজান ও রাঙ্গুনীয়া অংশের অন্তত ১০টি স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকারিদলের শীর্ষ গুটিকয়েক নেতাকর্মী সিন্ডিকেট করে বছরের পর বছর ধরে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট