চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সাক্ষাৎকারে কিঙ্কর  আহসান ও আব্দুল্লাহ আল ইমরান

পৃথিবীটা বইয়ের হোক 

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৪ অক্টোবর, ২০২১ | ৩:০৬ অপরাহ্ণ

একজন মনে করেন দেশে লেখক পরিচয় নিয়ে এখনও ক্রাইসিস আছে। অন্যজনের ভাবনা- লেখালেখি করেই জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব। লেখক জীবন নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও একটি জায়গায় একমত তারা। দুজনেই চান- পৃথিবীটা বইয়ের হোক।

‘গল্প নামে চট্টগ্রামে’ অনুষ্ঠানের ফাঁকে দেশসেরা আঞ্চলিক পত্রিকা পূর্বকোণের সঙ্গে আলাপচারিতায় দুই কথাসাহিত্যিক আব্দুল্লাহ আল ইমরান এবং কিঙ্কর আহ্ধসঢ়;সান বলেছেন লেখক জীবনের নানা কথা। যার চুম্বক অংশ থাকছে পূর্বকোণ পাঠকদের জন্য।

প্রশ্ন: আর্থিক কারণে অনেকে আপনাদের বই কিনতে পারে না। বলা হচ্ছে- আপনাদের বইয়ের দাম একটু বেশি। এসব কিছু মাথায় রেখে কি বই বের করা সম্ভব?

আব্দুল্লাহ আল ইমরান: দাম বই কেনার জন্য অন্তরায় বলে মনে করি না। যারা বই পড়তে পছন্দ করেন তারা দাম দেখেন না। তারা দেখেন বইটাতে লেখার মান আছে কিনা। গল্প তাকে আকর্ষণ করছে কিনা।

কিঙ্কর আহ্সান: এই প্রশ্নের উত্তর দুইভাবে দিতে চাই। একটা হচ্ছে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৫০ পৃষ্ঠার লেখা আর কিঙ্কর আহসান ৫০ পৃষ্ঠার লেখার দাম এক হবে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্টেন্টের দাম বেশি। আমরা রেস্টুরেন্টে বসে ৩০০ টাকার বার্গার খেয়ে ফেলি। কিন্তু ৩০০ টাকা দিয়ে বই কিনতে গেলে হাজারবার চিন্তা করি। কন্টেন্ট, শ্রম- সবকিছু চিন্তা করলে বাংলাদেশে বইয়ের দাম তুলনামূলকভাবে কম।

প্রশ্ন: লেখালেখি করে কি জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব?

আব্দুল্লাহ আল ইমরান: আমাদের দেশে যখন পরিচয় দেওয়া হয়- আমি লেখক, এরপরেও কিন্তু প্রশ্ন করা হয়- আপনি আর কি করেন? আমাদের দেশে লেখক পরিচয়টাকে মানুষ এখনও মেনে নিতে পারছে না। এ নিয়ে একটা ক্রাইসিস আছে। তবে অনেকে কিন্তু এই প্রথা ভাঙছেন।

কিঙ্কর আহ্সান: আমিতো করছি। আমি এ বছর বইয়ের জন্য ১০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে চুক্তি করেছি। বই যখন বিক্রি হয়, প্রকাশকও কিন্তু টাকা দিতে পিছপা হন না। আমরা ঘরের নিচে নামলে যেমন চাল-ডাল পাই, ঠিক এরকম প্রত্যেকটা জায়াগায় বই পাওয়া যেতে হবে। বইকে সহজলভ্য করতে হবে। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে- পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য যেমন চাল-ডাল দরকার, তেমনি মনের ক্ষুধা মেটানোর জন্য বই দরকার।

প্রশ্ন: লেখক জীবন নিয়ে কি কখনও হতাশ হয়েছেন?

আব্দুল্লাহ আল ইমরান: এরকম কখনও হয়নি। বরং লিখতে পারছি না বলে অভিমান হয়েছে। যখন ব্যস্ততার কারণে লেখায়, বই পড়ায় সময় দিতে পারিনা না, তখন খারাপ লাগে। কিন্তু লিখতে গিয়ে নিজেকে কখনও তুচ্ছ মনে হয়নি বরং নিজেকে ঐশ্বরিক ক্ষমতাবান মনে হয়েছে।

কিঙ্কর আহ্সান: এটা প্রায়ই হয়। বাংলাদেশের জন্য লেখকদের সংগ্রামটা অনেক কঠিন। এখানে ডিস্ট্রিবিউশন প্রসেস এখনও তৈরি হয়নি। আমাদের বই নিয়ে বিশ্বসাহিত্যে গিয়ে লড়াই করবো- এমন মানসিকতা আমাদের নেই। এখানে আসলে এমন লেখক, প্রকাশক, পাঠক লাগবে- যারা বিশ্বাস করেন এই দেশের লেখকরা একদিন পৃথিবী জয় করতে পারবেন।

প্রশ্ন: প্রিয় লেখক কে? কাদের লেখা পড়ে লেখালেখিতে আগ্রহী হয়েছেন?

আব্দুল্লাহ আল ইমরান: প্রিয় লেখক অনেক। বয়স অনুযায়ী লেখক পছন্দের প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়েছে। যখন দশম শ্রেণিতে পড়তাম তখন সমরেস বসু, সমরেশ মজুমদার, সুনীল গাঙ্গোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণের লেখা পড়ে উৎসাহ পেয়েছি। এরপর সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর কথা বলতে পারি, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কথা বলতে পারি।

কিঙ্কর আহ্সান: প্রিয় লেখকের তালিকা অনেক লম্বা। তবে আলাদা করে বলতে গেলে বিভূিতভূষণ আমাকে প্রবলভাবে মুগ্ধ করে। এর বাইরে মাহমুদুল হক, শহিদুল জহির আমাকে মুগ্ধ করে। কবিতায় আল মাহমুদ, আবুল হাসান, ধীরেন্দ্রনাথ আমাকে পাগল করে রাখে।

প্রশ্ন: আপনার নতুন কি বই আসছে?

আব্দুল্লাহ আল ইমরান: একটি নতুন উপন্যাসের কাজ শেষ করেছি প্রায়। উপন্যাসটির নাম পালিয়ে যাওয়ার দিনগুলি। এটি সামনের বইমেলায় প্রকাশ হবে।

কিঙ্কর আহ্সান: আমার নীলডুমুর নামে একটি উপন্যাস আসছে। জ্ঞানকোষ প্রকাশনীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। একটি ওয়েব সিরিজ হচ্ছে বঙ্গবিডি থেকে। হিজলতলী নামে ওয়েব সিরিজটি খুব শিগগরই আসছে।

প্রশ্ন: পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

আব্দুল্লাহ আল ইমরান ও কিঙ্কর আহ্ধসঢ়;সান: পাঠকদের উদ্দেশে শুধু এতোটুকুই বলি- যারা ভালোবাসেন তারাতো ভালোবাসেন। আর যারা ঘৃণা করেন এর পেছনে হয়তো কোনো কারণ আছে। তাদের ঘৃণাগুলো মুক্তার মতো কুড়াই। লড়াই করে যাবো তাদের ভালোবাসা পেতে। পৃথিবীটা বইয়ের হোক।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট