বান্দরবানে পাহাড় ধসে ২ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছে। পানিতে ভেসে মৃত্যু হয়েছে একজনের। গতকাল (রবিবার) ভোররাতে লামা উপজেলার মধু ঝিরি এলাকায় পাহাড় ধসে নুরজাহান বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নূরজাহান বেগমের ছেলে মোহাম্মদ ইরান ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। লামা পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাত একটার দিকে পৌরসভার মধু ঝিরি এলাকায় নুরজাহান বেগমের ঘরের উপর পাহাড় ধসে পড়লে তার মৃত্যু হয়। মাটি চাপা পড়ে আহত হয় পরিবারের দুই সদস্য। পৌর মেয়র জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে লামা পৌর এলাকার ষাট শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সাতটি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঁচ শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সড়কে পানি ওঠায় চকরিয়া লামার সাথে আলীকদম উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এদিকে পাহাড় ধসে বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের পোড়া পাড়া এলাকায় মেন পং ম্রো (২৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, বাগানে কাজ করতে গেলে মেন পং এর উপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এদিকে বান্দরবানের মনজয় পাড়া এলাকায় পাহাড়ি ঝিরি পার হতে গিয়ে প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়া অং সিং নু (৩৫) মারমার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকালে পাড়ার কাছের পাহাড়ি ঝিরি পার হতে গিয়ে তিনি স্রোতে ভেসে যান।
এদিকে বান্দরবানে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। জেলা শহরের দশটি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার বন্যার্ত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। এদিকে সাংগু-
মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় টানা পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বান্দরবানের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ। অন্যদিকে জেলা শহরের সাথে তিন উপজেলা রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলার সাথেও বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। জেলা শহরের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকা এখন পানির নিচে। জেলা শহরের বাস স্টেশন, ইসলামপুর, ওয়াবদা ব্রিজ, আর্মি পাড়া, মেম্বার পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সাঙ্গু নদীর পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকার তিন হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা শহরে বিদ্যুৎ বিভাগের দুটি উপকেন্দ্রে নদীর পানি প্রবেশ করায় গত দুদিন থেকে জেলা শহর ও রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় জেলা শহর ও উপজেলাগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দ্রুত বাড়ছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি না থাকায় দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শফিউল আলম জানিয়েছেন, বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় ১৩১ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ইতিমধ্যে ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৭০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে সাড়ে ৪শ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও নগদ সাত লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।