চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়ায় ভয়াবহ পাহাড়ধস ও ঢল

পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী স্বামী-স্ত্রী নিহত, নিখোঁজ ১

এম জাহেদ চৌধুরী হ চকরিয়া-পেকুয়া

১৫ জুলাই, ২০১৯ | ২:২৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় ঢলের পানি না নামতেই ফের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। দু’ উপজেলার ৮ লাখ মানুষের মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ। ঢলের পানিতে তলিয়ে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানি প্রবেশ করায় ৩ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। ভারী বর্ষণে ঘরের উপর পাহাড় ধসে পড়ে নিহত হয়েছে স্বামী-স্ত্রী। ঢলে ভেসে নিখোঁজ রয়েছে এক যুবক। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪ টায় মাতামুহুরী নদীর ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার প্রায় এক মিটার উপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া-পেকুয়ার লাখো মানুষ পানিবন্দি ছিলো ৩দিন। শনিবার পানি নামতে শুরু করেছিলো। কিন্তু শনিবার দিবাগত রাতে পার্বত্য উপজেলার লামা ও আলীকদমে অতি বর্ষণ হলে গতকাল (রবিবার) ভোররাতে ভয়াবহ ঢল নামে চকরিয়া-পেকুয়ায়। মাতামুহুরী নদীর দু’কুল উপচিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করা পানি বসতঘরে ডুকতে শুরু করে রাত দেড়টা থেকে। মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যেই পাহাড়ি গ্রাম ছাড়া দু’ উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার সিংহভাগ অংশে বসতবাড়িতে কয়েক ফুট পানি ওঠে। গতকাল (রবিবার) বিকেল ৪টার দিকে শত শত বাড়িতে ৪-৫ ফুট পানি ওঠে। দু’ উপজেলার অভ্যন্তরীণ সকল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় সড়ক ডুবে যাওয়ায়। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়ার বমুবিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, চিরিংগা, সাহারবিল, পূর্ব ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, বিএমচর, কোণাখালী, ডুলাহাজারা-খুটাখালী,

ঢেমুশিয়া, বদরখালী ও চকরিয়া পৌরসভা এবং পেকুয়ার উজানটিয়া, মগনামা, সদর ইউনিয়ন, শিলখালী, বারবাকিয়া, টৈটং ও রাজাখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রাম ছাড়া সমতলের সিংহভাগ ঘরে পানি উঠেছে। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও হারবাং এলাকা।
চকরিয়া-পেকুয়ার সিংহভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে ঢলের পানি প্রবেশ করায়। তন্মধ্যে চকরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আ.ক.ম গিয়াস উদ্দিন কলেজের ভিতরে-বাইরে প্লাবিত হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম পানি না কমা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, এই ইউনিয়নটি পাহাড়ি ঢলে হিট পয়েন্টে পড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে প্রপার কাকারার লোকজন। বেড়িবাঁধ ও গাইডওয়াল ভেঙ্গে ও লোটনি-হাজিয়ান দিয়ে মাতামুহুরীর পানি পাড়া গায়ে প্রবেশ করে। শুধুমাত্র কয়েকটি পাহাড়ের বাসিন্দা ব্যতিত এই ইউনিয়নের অন্তত অর্ধ লক্ষ মানুষ এখন পানিবন্দি। কার্পেটিং, ব্রিকসলিং, প্লাডসলিং ও গ্রামের কাঁচা-রাস্তাগুলো ঢলের তোড়ে কমবেশি ভেঙ্গে গেছে। পানি কমলে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। এরই মধ্যে এই ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।
অনুরুপভাবে অপরাপর ইউনিয়নগুলোতেও ঢলের তোড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন বলেছেন, বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা যাবে।
এদিকে, প্লাবনে টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় ও ঘরে পানি উঠায় রান্না-বান্না করতে না পেরে তীব্র খাবার ও পানীয়জলের সংকট দেখা দিয়েছে। উপোস রয়েছে অত্যাধিক পানি উঠা বেশ ক’টি গ্রামের মানুষ।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রথম দফার বন্যায় প্লাবিত পরিবারগুলোর জন্য চাল-ও শুকনো খাবার বরাদ্দ হয়েছে।
তবে বানভাসিরা জানায়, ১০ কেজি করে চাল পেলেও প্রথমে তিনদিনের বন্যা এবং রবিবারের (গতকাল) ভয়াবহ বন্যায় নাওয়া-খাওয়া বন্ধ থাকলেও কোন পরিবারই শুকনো বা রান্না করা খাবার নিয়ে যায়নি তাদের কাছে কেউ।
স্বামী-স্ত্রী নিহত :
গতকাল (রবিবার) ভোররাত দেড়টার দিকে ভারী বর্ষণে বসতঘরের উপর পাহাড় ধসে পড়ে মোহাম্মদ ছাদেক (৩০) ও তার স্ত্রী ওয়ালিদা বেগম (২১) নিহত হয়েছেন। চাপা পড়ার ৩০ মিনিট পর স্থানীয় লোকজন মাটি খুঁড়ে স্বামী-স্ত্রী’র মরদেহ বের করেন। তারা ৫ বছর আগে বিয়ে করলেও তাদের সংসারে কোন সন্তান নেই।
ইউএনও নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার পর থেকে পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণ বসবাসরত বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে একাধিকবার বলা হয়েছে। এরপরও গুটি কয়েক পরিবার ছাড়া কেউই ঘর ছেড়ে যায়নি।
যুবক নিখোঁজ :
চকরিয়ার বিএমচর ইউনিয়নে গতকাল (রবিবার) সকাল ১০টার দিকে ঢলের পানিতে তলিয়ে থাকা একটি রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকালে ঢলের তোড়ে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন মোহাম্মদ রাজু (২৬) নামের এক যুবক। ব্যাপক খোঁজ করেও বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তার সন্ধান মিলেনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট