চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি

এনবিআরের সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে সিএন্ডএফ এজেন্টসের চার ব্যাখ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ অক্টোবর, ২০২১ | ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমসসহ দেশের সকল কাস্টমস হাউসের দৈনন্দিন কার্যক্রমের মধ্যে মিথ্যা ঘোষণা পণ্য আমদানিকে একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এক নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে এনবিআরের সেই গৃহীত সিদ্ধান্তকে স্থগিত ও সংশোধন করতে চার ব্যাখ্যা দিয়েছে চিটাগাং কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এসোসিয়েশন।
গত ৩ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এনবিআর সদস্য (কাস্টমস : নীতি ও আইসিটি) এর সভাপতিত্বে কাস্টমসের দৈনন্দিন কার্যক্রমের কিছু সমস্যা নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সকল কাস্টমস হাউসের কমিশনারগণ, এনবিআর প্রথম সচিব (কাস্টমস: নীতি), সিনিয়র সিস্টেম এনালিষ্ট (এসাইকুডা) দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস: মূল্যায়ন) উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় ৭টি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হয় গত ১১ অক্টেবর। সেই কার্যবিবরণীর ৭টি সিদ্ধান্তের প্রথমটিই ছিল মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বিষয়ক।
এনবিআরের ওই সভায় ‘মিথ্যা ঘোষণা সম্বলিত আমদানি চালান চিহ্নিতকরণ ও ন্যায় নির্ণয়নের ক্ষেত্রে কাস্টমস হাউজ/কাস্টমস স্টেশন নির্বিশেষে অনুসরণীয় নীতির অভিন্ন প্রয়োগ’ বিষয়ক আলোচনা সিদ্ধান্ত হয়, ‘সকল কাস্টমস হাউসে ন্যায়নির্ণয়নের ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতির প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিল অব এন্ট্রি ব্যতীত অন্যান্য আমদানি দলিলাদিতে মিথ্যা ঘোষণা থাকলে এবং বিল অব এন্ট্রিতে সঠিক ঘোষণা প্রদান করা স্বত্তে¡ও মিথ্যা ঘোষণা হিসেবে গণ্য হবে এবং উক্ত পণ্য চালানের ক্ষেত্রে ন্যায় নির্ণয়ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ন্যায় নির্ণয়নকারী কর্মকর্তা জরিমানার ক্ষেত্রে আইনের উল্লেখিত দন্ড সীমার মধ্যে স্বীয় বিবেচনার যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে পারেন।’
এনবিআরের এই সিদ্ধান্তের আলোকে চিটাগাং সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন চারটি অসংঙ্গতি উল্লেখ করে তার ব্যাখ্যা দিয়ে গত ১৮ অক্টোবর সোমবার এনবিআরের সদস্যকে (কাস্টমস : নীতি ও আইসিটি) চিঠি দেয় এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু।
সেই ব্যাখায় সিএন্ডএফ এজেন্টস জানায়, দ্য কাস্টমস এক্ট, ১৯৬৯ এর বিধি-৩২ অনুযায়ী যদি কোন পণ্য আমদানির ঘোষণায় বস্তুগত তথ্যে অসত্য হয় তবে সেই ঘোষণার ন্যা-নির্ণয়নের বিধি-বিধান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রচলিত নিয়ম চলমান রয়েছে এবং এসাইকুডা সফটওয়ারের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ‘বিল অব এন্ট্রি’ হলো শুল্কায়নের জন্য দাখিলকৃত ঘোষণা। তাই বিল অব এন্ট্রিতে সঠিক ঘোষণা দেওয়া হলে সেক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা বলার সুযোগ নেই।
সিএন্ডএফের ব্যাখায় আরো বলা হয়, দেশের বাস্তবতায় অধিকাংশ বাণিজ্যিক আমদানিকারক পণ্যের ক্লাসিফিকেশন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখেন না। যাঁরা যানেন, তাঁদেরও ক্ষেত্র বিশেষে ভুল হয়ে থাকে। পণ্যের জাহাজীকরণ দলিলাদি সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্টকে হস্তান্তর করার পর এইচ. এস. কোড ভুল পাওয়া গেলে উভয় পক্ষ সম্মিলিতভাবে তা সংশোধন করে সঠিক এইচ. এস. কোড বিল অব এন্ট্রিতে দাখিল করা হয়। সুতরাং, সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক শুল্ক-কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র, ইনভয়েসসহ অন্যান্য দলিলাদিতে ইচ্ছাকৃত ভুল এইচ. এস. কোড প্রদান করেছিলেন- এমন অনুমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আইন সম্মত নয়। সর্বোচ্চ হারে রাজস্ব প্রদানকারী আমদানীকারকগণকে অনুমানের ভিত্তিতে অভিযুক্ত করলে ব্যবসা-বাণিজ্য সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন চারটি ব্যাখ্যা দিয়ে মিথ্যা ঘোষণা পণ্য আমদানি বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার আগে এনবিআরকে পুনরায় বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন চিটাগাং সিএন্ডএফ এজেন্টসগণ।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট