চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কম দামের চাল বেশি দামে বিক্রি ব্র্যান্ডের প্যাকেটে

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১৭ অক্টোবর, ২০২১ | ১:০৭ অপরাহ্ণ

চাল ব্যবসায় নেমেছে দেশের কয়েকটি বড় কোম্পানি। কম দামের চাল বিভিন্ন নামী-দামি কোম্পানির ব্র্যান্ডের প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দামে। বাজার একই ধরন ও মানের চালের সঙ্গে এসব ব্র্যান্ডের চালে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তি থাকে। এছাড়াও ভারত, পাকিস্তানের আমদানি করা প্যাকেট বলে বিক্রি হচ্ছে আরও উচ্চমূল্যে। কম দামের চাল কৃষক, মধ্যস্বত্বভোগী ও মিলারদের কাছ থেকে কিনে বেশি দামে বিক্রি করাকে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

নগরীর চালের অন্যতম বড় মোকাম পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন বলেন, দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপ বা ব্যবসায়ী এখন ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় নেমেছে। প্রতিটি পণ্য আকর্ষণীয় মোড়কে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। যেমন পাইকারি বাজারে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৬০ টাকা দরে। আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৮ টাকা দরে। জিরাশাইল পাইকারি বাজারে ৫৪ টাকা। ব্র্যান্ডের প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে। অথচ এসব কোম্পানির কোনো মিল নেই। মধ্যস্বত্বভোগী ও মিলারদের কাছ থেকে মজুদ করে। পলিশ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে প্যাকেটজাত করে উচ্চ দামে বিক্রি করে।

দীর্ঘদিন ধরে চালের বাজার অস্থির। সরকার শুল্ক কমিয়ে সরকার-বেসরকারি উদ্যোগে নেয়। বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির পরও বাজার স্থিতিশীল করা যাচ্ছে না। এ জন্য আমদানিকারক, বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, মিলার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেছেন চাল ব্যবসায়ীরা।

খুচরা ব্যবসায়ী ও ষোলশহর ২নং গেট কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ এয়াকুব চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্যাকেটজাত করা এক কেজি ওজনের চিনিগুড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা দরে। একই চাল মানভেদে ৯০ টাকা থেকে এক শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন মানের চাল প্যাকেট-ভর্তি করে বিক্রি করছে বিভিন্ন কোম্পানি। ব্য্রান্ডের উপর নির্ভর করে কেজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি থাকে।’

খুচরা ব্যবসায়ী এয়াকুব চৌধুরী বলেন, ‘বাসমতি চালের নামে চলছে তেলেসমাতি। দেশীয় কোম্পানির প্যাকেটজাত বাসমতি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে মানভেদে ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। পাকিস্তানি আমদানি করা বাসমতি কেজিতে ২৭০ টাকা ও ভারতের হায়দ্রাবাদের বাসমতি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা দরে।’ এসব প্যাকেট কি সরাসরি আমদানি করা হয়-এমন প্রশ্নের জবাবে এয়াকুব চৌধুরী বলেন, ‘কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাই বলে বিক্রি করেন।’

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘পাইকারি বাজারে মানভেদে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ২৭শ টাকা থেকে ২৮শ টাকা দরে।’

সেই হিসাবে পাইকারি বাজারে বাসমতি চাল কেজিপ্রতি ৫৪ ও ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বড় শিল্প গ্রুপ, বড় মিলার, মধ্যস্বত্বভোগী ও নামী-দামি ব্রান্ডের কোম্পানিগুলোর কাছে প্রচুর চাল মজুত রয়েছে। কিন্তু মনিটরিং না থাকায় সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে। ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানো হচ্ছে। সরকারি শুল্ক হ্রাসের সুবিধা নিয়ে চাল আমদানিতেও জড়িত এসব সিন্ডিকেট। এসব কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বাজার মনিটরিং না থাকায় চালের বাজার স্থিতিশীল করা যাচ্ছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। কম দামের চাল উন্নত ব্রান্ডের প্যাকেটে ভরে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

কৃত্রিম সুগন্ধি ব্যবহার

কম দামি চাল উন্নত ব্র্যান্ডের প্যাকেটে ভর্তি করে বেশি দামে বিক্রি ছাড়াও চাল মিশানো হচ্ছে কৃত্রিম সুগন্ধি। ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা এসব সুগন্ধি চট্টগ্রামেও মিশানো হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বেশি ব্যবহার করছে নামী-দামি ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো। চট্টগ্রাম ছাড়াও উত্তর বঙ্গের মিলার ও বড় ব্যবসায়ী কম দামের চাল বেশি দামে বিক্রি করার জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করছেন।

পাহাড়তলী মোকামের নিজাম উদ্দিন বলেন, নগরীর চাক্তাই ও পাহাড়তলীতে কয়েকটি গুদামে কৃত্রিম সুগন্ধি ব্যবহার করা হচ্ছে। অতি মুনাফার জন্য একশ্রেণির মিলার ও ব্যবসায়ী নিজেদের গুদামে এ ধরনের প্রতারণায় নেমেছেন। এতে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট