চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ ট্রমা সেন্টার মিলবে কবে

ইমাম হোসাইন রাজু 

১৭ অক্টোবর, ২০২১ | ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে আসেন মো. রিয়াজ উদ্দিন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকু-ে দুর্ঘটনা ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পর চমেক হাসপাতালে আনা হয় তাকে। কিন্তু শরীরের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে প্রায় তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মাত্র ৩০ বছরের এ যুবক। চিকিৎসকদের ভাষ্য, ঘটনার পরপরই যদি রিয়াজের চিকিৎসা নিশ্চিত করা যেত, হয়তো বেঁচে যেতে পারতেন তিনি।

রিয়াজের মতো, কক্সবাজারের বাসিন্দা মাহবুবুল আলম। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়েক টমটম গাড়ি চড়ে নিজের কর্মস্থলে যাওয়ার সময় পথিমধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। কিন্তু আশপাশের কোন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ছুটে আসতে হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। এরফলে জীবন ফিরে পেলেও মাহবুব হারিয়ে ফেলেন হাঁটা চলার শক্তি। বরণ করেন পঙ্গুত্ব। চিকিৎসকরা বলছেন, অনেকক্ষেত্রে দুর্ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যে সঠিক চিকিৎসা পেলে পঙ্গুত্ব থেকে বাঁচা সম্ভব। অথচ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাঝপথে একটি ট্রমা সেন্ট্রার থাকলেও তাতে চালু নেই চিকিৎসা সেবা। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে হয়তো পঙ্গুত্ব থেকে বাঁচতে পারতেন মাহবুব।

শুধু মাহববু নয়, দেশে দুর্ঘটনার দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে পঙ্গুত্ব হচ্ছেন অনেকেই। দুর্ঘটনার পর বেশিরভাগ সময়ই চিকিৎসার জন্য পূর্ণাঙ্গ ট্রমা সেন্টার থাকার কথা থাকলেও, বৃহত্তর চট্টগ্রামে নেই এ ধরনের কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল।

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহতদের চিকিৎসার স্বার্থে চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ ট্রমা সেন্টার চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। জাহাজ ভাঙা শিল্পে প্রায়শ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলের একাধিক সড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ হওয়ার পরও এ অঞ্চলে এতদিনেও একটি পূর্ণাঙ্গ ট্রমা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হলো না, এই আক্ষেপ চট্টগ্রামবাসীর।

চমেক হাসপাতালের তথ্যমতে, ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনায় শুধুমাত্র হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে দৈনিক গড়ে রোগী আসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন। কোন সময় এ সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েও যায়। যাদের অনেকেই সঠিক সময়ে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় পঙ্গুত্ব হয়ে পড়েন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাঝামাঝিতে লোহাগাড়ায় প্রায় ৮ বছর আগে একটি ট্রমা সেন্টার চালু করা হয়। প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে চালু হলেও তাতে জনবল আর যন্ত্রপাতি না থাকায় কোন কাজেই আসছে না। এরইমধ্যে নগরীর অদূরে হাটহাজারীতে একটি ট্রমা সেন্ট্রার ইতোমধ্যে স্থাপনও করা হয়েছে। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের পর বছর পাঁচেক আগে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয়।

কিন্তু  সেটিও এখন পর্যন্ত চালুই হয়নি। তারমধ্যেই রাউজানে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে নতুন আরেকটি ট্রমা সেন্টারের। যদিও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার কিংবা ঢাকা-চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম অংশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলেও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েই চিকিৎসার জন্য আসতে হয় নগরীর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই। আর দূরের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে পথিমধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অনেকেই। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, এসব দুর্ঘটনার পর যদি সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে অন্তত পঙ্গুত্ব ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও কমে আসত।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিভিন্ন সার্ভেতে দেখা গেছে, শুধুমাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় দিনে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। আর আহত হয় অন্তত দেড়শ’ জন। এরমধ্যে চট্টগ্রামও পিছিয়ে নেই। মহাসড়কের পাশে ট্রমা সেন্টাওে যদি সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যেত, তাহলে অবশ্যই অসংখ্য প্রাণ রক্ষার পাশাপাশি পঙ্গুত্বের সংখ্যাও কমে আসতো।

যদিও দীর্ঘদিন আগেই লোহাগাড়াসহ দেশের ২৩টি জেলায় এ সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু জনবলসহ বিভিন্ন কারণে তা চালুই করা যায়নি। তাই এ বিষয়ে নজরে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা আরও বেশি কাজ করবে বলে আশাবাদী।’ ট্রমা সেন্টারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মত প্রকাশ করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর পূর্বকোণকে বলেন, দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহতদের চিকিৎসার্থে বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত ট্রমা হাসপাতাল অবশ্যই দরকার। ফলে পঙ্গুত্বও অনেক কমে আসবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট