চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

 অফডকগুলো পায় না বকেয়া 

সারোয়ার আহমদ 

১৭ অক্টোবর, ২০২১ | ১২:২৭ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ৩৮ ধরণের পণ্য খালাস হয় দেশের ১৯টি বেসরকারি অফডক থেকে। ওই ৩৮ ধরণের পণ্য ডিপোতে আসার পর নিয়ম অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে চালানটি খালাস করতে হয়। অন্যথায় সেটি নিলামযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এমন একটি ৪০ ফুটের কনটেইনার ৩০দিনের মধ্যে খালাস না হলে ওই কনটেইনারটি অফডকে সংরক্ষণ বাবদ আমদানিকারকের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট অফডকের পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৮৫ হাজার টাকা।  কিন্তু ওইসব নিলামযোগ্য কনটেইনারের পণ্য কাস্টমসের নিলাম প্রক্রিয়ায় বিক্রির পর কোন কালেই অফডকগুলো তাদের সেই পাওনা আর পায়নি। যদিও কাস্টমস আইন, ১৯৬৯ এর ধারা ২০১ (ঘ) অনুযায়ী পণ্যের হেফাজতকারী হিসেবে নিলামে পণ্য বিক্রির পর প্রাপ্ত অর্থ থেকে অফডকগুলোর পাওনা পরিশোধ করার কথা।

এদিকে, বেসরকারি অফডকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস এসোসিয়েশন (বিকডা)’র তথ্যমতে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত ১৯ টি অফডকে ৩ হাজার ১০৩ টিইইউস নিলাম যোগ্য কনটেইনার রাখা আছে। যার মধ্যে  ৮ থেকে ১০ বছর ধরে পড়ে থাকা কনটেইনারও রয়েছে। যেমন, পতেঙ্গার ইনকনট্রেড ডিপোতে ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে পড়ে আছে। সিসিটিসিএল ডিপোতে ৭ থেকে ৮ বছর ধরে পড়ে আছে এমন কনটেইনার আছে প্রায় ১২টি। এছাড়া বন্দর সংলগ্ন ইসহাক ডিপোতে এমনও ১২টি কনটেইনার আছে যেগুলো বছরের পর বছর পড়ে থাকায় আপনা আপনি ভেঙে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এমন অসংখ্য কনটেইনার বেসরকারি অফডকগুলো স্টোর বা সংরক্ষণ করে এবং পাহারা দেয়। অথচ এজন্য তারা কোন অর্থই পায় না। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করা কনটেইনারের পণ্য নিলামে বিক্রি হওয়ার পড়েও প্রাপ্ত অর্থ থেকে বকেয়া পাওনা তারা পায় না।

এ বিষয়ে বিকডা সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান পূর্বকোণকে বলেন, কাস্টমস আইন, ১৯৬৯ পাস হওয়া অব্দি এখন পর্যন্ত আইন অনুযায়ী অফডকগুলো নিলামে বিক্রি হওয়া পণ্য থেকে তাদের পাওনা পায়নি। অথচ অফডকে সেই পণ্যে কনটেইনার জায়গা দখল করে ছিল। ওই কনটেইনারের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে অফডক কর্তৃপক্ষ। তিনি আরো বলেন, এমন হাজার হাজার কনটেইনার অফডকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ওইসব নিলামযোগ্য কনটেইনার যে জায়গা দখল করে রয়েছে সেখানে অন্য কনটেইনার রাখা যেত এবং কনটেইনার মুভমেন্টের কাজেও সুবিধা হতো। কিন্তু এসব কনটেইনার আমরা পাহারা দেই, জায়গা দেই, কিন্তু নিলামে বিক্রির অর্থ থেকে নিয়ম অনুযায়ী কিছুই পাই না। এ বিষয়ে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআরকে) চিঠি দিয়েছি। বিষয়টি তারা বিবেচনায় রেখেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব মোহাম্মদ মেহরাজ-উল-আলম স¤্রাট পূর্বকোণকে বলেন, কাস্টমস আইন অনুযায়ী অফডকে থাকা নিলামযোগ্য কনটেইনারের পণ্য বিক্রির পর প্রাপ্ত অর্থ থেকে তাদেরও বকেয়া পরিশোধ হওয়ার কথা। কিন্তু আইন অনুযায়ী নিলামে বিক্রির পর প্রাপ্ত অর্থ থেকে প্রথমেই নিলামে বিক্রির ব্যয় পরিশোধ করতে হয়। এরপর পণ্যে ওপর প্রদেয় ফ্রেইট বা অন্যান্য চার্জ পরিশোধ করতে হয়। এরপর পণ্যের ওপর সরকারকে প্রদেয় কাস্টমস ট্যাক্স ও অন্যান্য কর পরিশোধ করতে হয়। তারপর পণ্যের হেফাজতকারী হিসেবে অফডক তাদের পাওনা পাওয়ার কথা। কিন্তু তারা হয়তো সেই বকেয়া পায় না।

বকেয়া না পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মেহরাজ-উল-আলম স¤্রাট আরো বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে একটি পণ্য নিলামে বিক্রির জন্য তোলা হলে পণ্যের সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ পাওয়া গেলেই সেটি বিক্রি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেকবার নিলামে তুলেও সেই কাক্সিক্ষত মূল্য পাওয়া যায় না। শেষ পর্যন্ত এত কম অর্থ পাওয়া যায় যে- ওই অর্থ থেকে ব্যয় ও শুল্ক কর পরিশোধ করার পর আর অবশিষ্ট থাকে না যে অফডকের বকেয়া পরিশোধ করা যাবে। ঠিক এ কারণেই অফডকগুলো আইন অনুযায়ী নিলামের অর্থ থেকে তাদের বকেয়া পাওনা থাকলেও তারা সেটি পায় না।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট