চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বছরে ধানি জমি কমছে ১%

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৬ অক্টোবর, ২০২১ | ১২:৩৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে কৃষি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। জমি, খাল-বিল, জলাশয় ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়িঘর, ইটভাটা, শিল্প-কারখানাসহ নানা স্থাপনা। এতে প্রতিবছর এক শতাংশ কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে খাদ্য ঘাটতিও। প্রতি বছর চট্টগ্রামে প্রায় চার লাখ ২৪ মে. টন খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে খাদ্য চাহিদা রয়েছে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ২৬১ মে. টন। খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ২০৪ মে. টন। বীজ ও ফসল অপচয় ৯৭ হাজার ৫৫৮ মে. টন। প্রকৃত খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪৬ মে. টন। খাদ্য ঘাটতি রয়েছে প্রায় চার লাখ ২৩ হাজার ৬১৫ মে. টন।

কৃষি বিভাগ বলছে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও উন্নতজাতের বীজ ব্যবহার বাড়ছে। এতে আবাদযোগ্য জমি কমলেও ফসল উৎপাদন কমেনি। চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ফসলি জমি কমলেও উচ্চফলনশীল, হাইব্রিড ও সর্বশেষ অবমুক্তকরণ জাতের বীজ ব্যবহারে ফসল উৎপাদন বেড়েছে। ফলে যেভাবে খাদ্য ঘাটতি থাকার কথা সেভাবে আর নেই। ক্রমান্বয়ে খাদ্য ঘাটতি পূরণের দিকে যাচ্ছি। ফলে জমি কমলেও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১০ দশকে প্রতিটি ফসলের উৎপাদন বেড়েছে।’

দেখা যায়, গত ১০ বছর ধরে চট্টগ্রামে ধানি জমি কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে নগর ও নগরীর আশপাশের উপজেলায় ব্যাপকভাবে আবাদযোগ্য জমি কমছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাসস্থল, শিল্প-কারখানাসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও অপরিকল্পিত নগরায়নে কৃৃষি জমি দ্রুত অকৃষি খাতে যাচ্ছে। বাদ পড়েনি সংরক্ষিত ভূমি, সরকারি খাস ভূমি, জলাধার। ১৯৯৭ সালে কৃষি জরিপ অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে চাষাবাদের আওতায় ছিল ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমি। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রামের ফসলি জমির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ১১ হাজার ২৩৫ হেক্টরে। ১৩ বছরে জমি কমেছে প্রায় ৬৮ হাজার ৭৬৫ হেক্টর।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) প্রতিবেদনে বলছে, দেশে বিভাগওয়ারি কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার প্রবণতা চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি। এ বিভাগে প্রতিবছর ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১২-১৩ সালে আমন মৌসুমে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমি। ফসল উৎপাদন হয়েছে চার লাখ ৭০ হাজার ১০২ মে. টন। কিন্তু পরবর্তীতে কয়েক মৌসুমে আবাদ কমে যায়। ২০১৮-১৯ সালে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৯ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৫১ হাজার ১৬০ মে. টন। আবার গত কয়েক বছরে আবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে (২০২১-২০২২ সাল) এক লাখ ৮২ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চাষযোগ্য জমি রয়েছে মাত্র ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এর এক-চতুর্থাংশই এখন হুমকির মুখে। কৃষি জমি অকৃষি খাতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্যমতেও বাণিজ্যিক কারণে এক-চতুর্থাংশ জমি হুমকির মুখে রয়েছে। কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইটভাটা, কলকারখানা, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণে প্রতিবছর এক শতাংশ হারে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। কৃষি প্রতিবেদন বলছে, বছরে প্রায় এক শতাংশ হারে ধানি জমি কমছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জেলায় খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। সবজির উৎপাদন বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জমির তুলনায় ফসল উৎপাদন বেড়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ও উন্নতজাতের বীজের ব্যবহারে ভালো ফসল পাওয়া যাচ্ছে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট