চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সুমিতার আত্মহনন তিন কারণে!

ইমাম হোসাইন রাজু

১৬ অক্টোবর, ২০২১ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

যেখানে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে মায়ের স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বেছে নেয়ার ঘটনা অহরহ, সেখানে কীভাবে একজন মা তার দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মঘাতী হতে পারেন- গতকাল শুক্রবার নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে দুই সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় এমনই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেন এমন পথ বেছে নিয়েছেন সুমিতা- সেই প্রশ্ন দিনভর ঘুরপাক খায় প্রতিবেশীসহ তদন্তে আসা পুলিশ কর্মকর্তদের মাঝেও।

প্রাথমিকভাবে পুলিশ পারিবারিক কলহের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে সন্দেহ করলেও, সুনির্দিষ্ট তিনটি কারণ সামনে রেখে তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর মুরাদপুর মক্কা হোটেলের বিপরীতে এস আর শপিং সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় ইনানী হারবাল নামে একটি হারাবালের ওষুধ ব্যবসায়ী সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগও ছিল অন্তহীন। সে নিয়মিত মাদকসেবন করার পাশাপাশি ‘যৌন আসক্তও’ ছিল। এছাড়া অবৈধ সম্পর্ক থাকার সন্দেহ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রায় নিয়মিতই ঝগড়া ছিল। খবর নিয়ে জানা যায়, বছর দুয়েক আগে পাঁচলাইশ থানায় মৃত সুমিতার স্বামী সোহেল রানার বিরুদ্ধে নিজের মেয়ে সন্তানকে ‘যৌন হেনস্থার’ একটি অভিযোগ ছিল। সেটি তখন স্থানীয়ভাবেই মীমাংসা করা হলে তার স্ত্রীর মনে ক্ষোভ কিন্তু রয়ে যায়। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বামী সোহেল রানার ‘পরকীয়া’ এবং মাদক আসক্তি। মোটকথা আলোচ্য তিনটি বিষয়ই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে বলে পুলিশের বদ্ধমূল ধারণা। তদন্তের পর অবশ্য সেটি পরিষ্কার হবে বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে আশপাশের অন্য ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, প্রায় সময় সোহেল রানা ও স্ত্রী সুমিতার সঙ্গে ঝগড়া হতো। যা তারাও শুনতে পেত। কিন্তু ঠিক কী-কারণে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হতো, অবশ্য সে বিষয়টি কেউ স্পষ্ট করতে পারেনি। যদিও পুলিশের হেফাজতে থাকা সোহেল রানা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ফেসবুকে ও মোবাইলে অন্য মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে, এমন সন্দেহ করতেন স্ত্রী সুমিতা। যা নিয়েই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো প্রায় সময়। সর্বশেষ গত বুধবার রাতেও ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে স্বামী সোহেল রানাকে সন্দেহ করত স্ত্রী সুমিতা। এ নিয়ে দুই জনের মধ্যে প্রায় সমই ঝগড়া হতো। স্ত্রীর ধারণা, সোহেল রানার অন্য কারও সাথে সম্পর্ক আছে। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। তবে পরকিয়া বা কারও সাথে সম্পর্ক ছিল কি-না, তা এখনোও জানা যায়নি। বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে তদন্তের পর সবকিছুই পরিষ্কার হবে বলে আশাবাদ।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ‘সোহেল রানার বিরুদ্ধে ২ বছর আগে পাঁচলাইশ থানায় একটি যৌন হয়রানির অভিযোগ এসেছিল। ওই সময়ে পুলিশের দ্বারস্তেই সামাজিকভাবে অভিযোগের মীমাংসা করা হয়। একই সঙ্গে সে নেশাগ্রস্তও ছিল। সেটিও এখন সন্দেহ করা হচ্ছে। তা না হলে একজন মা কতটা কষ্ট পেলে নিজ হাতেই নিজ সন্তানদের এভাবে হত্যা করতে পারে?। পরকীয়ার বিষয়ে কোন তথ্য আছে কি-না, জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ওসি জাহেদুল কবির পূর্বকোণকে বলেন, ‘আই এম নট কনফার্ম। এ বিষয়ে কোন তথ্য আমার কাছে জানা নেই। তবে সে নেশা করত। প্রাথমিকভাবে যতটুকু জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তাতে পুরোপুরি রেজাল্ট আসেনি। এখন অপেক্ষা করছি, সুমিতার পরিবারের সদস্যদের জন্য। তারা আসলে আরও কিছু জানতে পারব।’

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট