চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কৈলাসে ফিরলেন দেবী দুর্গা, বিসর্জনে সমাপ্ত শারদীয় দুর্গোৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ অক্টোবর, ২০২১ | ১১:৩৬ অপরাহ্ণ

দশমী পূজা, অঞ্জলি ও প্রতিমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতনী ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গা ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে। পরের বছর শরতে আবারও ফিরে আসবেন এ প্রত্যাশায় চোখের জলে ভক্তরা বিদায় দিলেন দেবী দুর্গাকে। ঘোটক বা ঘোড়ায় আসা দেবী ফিরলেন দোলায় চেপে। গত সোমবার ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় ‘আনন্দময়ীর’ নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনে তা শেষ হল।

সকালে দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ, অঞ্জলী, শান্তির জল প্রদান, দর্পণ বিসর্জন আর দেবীর আরাধনায় শেষ হয়া দশমীর আচার-অনুষ্ঠান। এরপর বিসর্জনের আগে দেবীর চরণে সিঁদুর দিয়ে জগতের কল্যাণ চান ভক্তরা।

এদিকে শুক্রবার বিকেল ২টা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের ঘোষণা থাকলেও জেএমসেন হল পূজা মণ্ডপে হামলা চেষ্টার প্রতিবাদে সাময়িকভাবে প্রতিমা বির্সজন বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে প্রশাসন থেকে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে আবারো পতেঙ্গায় প্রতিমা বির্সজন শুরু হয়। তবে চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলায় কোন রকম সমস্যা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বির্সজন সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে হামলা চেষ্টার পর প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদরা ছুটে আসেন জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে। তারা পূজা পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন। এসময় পরিপূর্ণ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হলে প্রায় তিন ঘণ্টা পর আবারো প্রতিমা বির্সজন শুরু হয়। নগরীর প্রায় দেড়শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় পতেঙ্গায়। তবে এ ঘটনার পর নগরীর মণ্ডপগুলোর বেশিরভাগ প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় স্থানীয় পুকুর বা জলাশয়ে।

মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য্য বলেন, জে এম সেন পূজা মণ্ডপে হামলার ঘটনায় আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তবে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং সর্বাত্মক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর আমরা তিনঘণ্টা পর প্রতিমা বিসর্জন শুরু করি। নগরীতে এবার ২৭৭টি পূজা মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুর্গাপূজা।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বির্সজন সম্পন্ন হয়েছে। জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত বলেন, কোন প্রকার বিশৃংখলতা ছাড়াই সবগুলো প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। জেলায় এবার ১৫৫৩টি সার্বজনীন ও ৪১১টি পারিবারিকসহ মোট ১৯৬৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবারের মত এবার মণ্ডপের পাশে পুকুর, দীঘি, জলাশয়, খাল ও নদীতে প্রতিমা বির্সজন দেয়া হয়।

সন্দ্বীপ: উপজেলার ২৮ টি মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা বিসর্জ্জন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে শুরু করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জ্জন দেওয়া হয়। সন্দ্বীপ উপজেলায় এবছর ২৮ টি মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের সভায় মণ্ডপ গুলোকে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বেশকিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পূজা চলাকালীন সময়ে ইউনিয়ন ভাগ করে মণ্ডপগুলোতে টহল পুলিশ মোতায়েন ছিল।

শুক্রবার সকালে দশমী পূজা শেষে মণ্ডপগুলোতে বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু করা হয়। দুপুর ১টার আগে প্রায় ১০টি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জ্জন সম্পন্ন হয়। দুপুর ৩টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে বাকি প্রতিমা বিসর্জ্জন দেওয়া হয়। বেশিরভাগ মন্দিরে পার্শ্ববর্তী পুকুরে প্রতিমা বিসর্জ্জন হয়। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উমেশ চন্দ্র মজুমদার রবি জানান, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিকেল চারটার মধ্যে সবগুলো মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জ্জন সম্পন্ন হয়েছে। বিসর্জনের সময় প্রতিটি মন্দিরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট