চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আজ চাঁদনী যাবে শ্বশুরবাড়ি

মরিয়ম জাহান মুন্নী 

১৫ অক্টোবর, ২০২১ | ১:৩৮ অপরাহ্ণ

অভাবের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ছোটকাল থেকেই অভাবের মধ্যে বেড়ে ঊঠে চাঁদনী। এখন তার বিয়ের বয়স। কিন্তু বারবার পাত্র পাওয়ার পরও দরিদ্রতার কারণে ঘটছিল না সংযোগ। চাঁদনীর সেই দুঃখ ফুরিয়েছে অবশেষে। চাঁদনির মলিন মুখে এখন চাঁদের হাসি।

আজ শুক্রবার কনের সাজে সেজে চাঁদনী যাবে শ্বশুরবাড়ি। চাঁদনীর অসহায় বাবা-মায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে সামাজিক সংগঠন আলোর আশা যুব ফাউন্ডেশন। সরকার নিবন্ধিত এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগেই আজ টাইগার পাস এলাকায় আয়োজন করা হয়েছে চাঁদনীর বিয়ের অনুষ্ঠান। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার এলাহি ফয়সাল বলেন, চাঁদনী আলোর আশা যুব ফাউন্ডেশন পরিচালিত বয়সভিত্তিক পাঠদান সোহা স্কুলের শিক্ষার্থী। সোহা স্কুলে তিন ধরণের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থী।

চাঁদনী ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের একজন। ক্লাস টু পড়া অবস্থায় অর্থের অভাবে পড়ালেখা বন্ধ হয় তার। পরবর্তীতে সংগঠনটির সহযোগিতায় দ্বিতীয়বার পড়াশোনার সুযোগ পায় সে। আঠারো বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণী পাস করেছে। পাশাপাশি সংগঠনটির সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সেলাই কাজ এবং ব্লল্কের কাজে পারদর্শী। বিয়ের আয়োজনে কমতি নেই কোন কিছুরই। গেট, প্যান্ডেল স্টেজসহ সবই সাজানো হয়েছে। আয়োজন করা হচ্ছে ১৫০ জন মানুষের খাবার। খাদ্য তালিকায় রয়েছে কোরমা, পোলাও, মুরগি, মাছ, ডিম, মিনারেল পানি, কোল্ডডিংক্স। গায়ে হলুদে মিষ্টি কেক ফলসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে টেবিলও সাজানো হয়েছে। ধনী পরিবারের মেয়ের বিয়ের মত প্রায় সব কিছুই আছে চাঁদনীর বিয়েতে। কনের ইচ্ছে অনুযায়ী কোনো কিছুর কমতি রাখেনি সংগঠনটি।

বিয়ের পর পড়াশোনা করার ইচ্ছে জানতে চাইলে চাঁদনী আক্তার জানায়, আমার ইচ্ছে আছে। যদি আমার স্বামী সুযোগ দেয় তবে পড়তে চাই।  মা সুমি বেগম বলেন, আমি গরিব মানুষ, চাঁদনীর বাবা অসুস্থ ঘর বসা। একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করি। আমারও বয়স হয়েছে। যে কোনো সময় মারা যেতে পারি। অর্থের অভাবে মেয়ের বিয়ে কোনোভাবেই দিতে পারছি না। ছোট মেয়েটাও বড় হয়ে গেছে। দুই মেয়ে নিয়ে আমি খুব দুঃখে আছি। এখন আমি খুব খুশি।

আলোর আশা যুব ফাউন্ডেশন অভিভাবক হয়ে আমার মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। আমার ভাই-বোন হয়ে সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। আমি সবার জন্য দোয়া করি, এরা সবাই যেন সব সময় ভালো থাকে।

চাঁদনীর বাপের বাড়ি পটিয়ায়। কিন্তু সেখানে তাদের কোনো বাসস্থান নেই। সংগঠনের সদস্যরা বলেন, আমরা চাঁদনীর নয়, আমরা যেন আমাদের মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি। সংগঠনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, জামাই তরকারি ব্যবসায়ী। চাঁদনীর জন্য যোগ্যপাত্র পাওয়ায় সংগঠনের ১১ জন সদস্যের আর্থিক সহায়তায় চাঁদিনীর বিয়ে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দুঃখ কষ্ট বয়ে নিয়ে বেড়ে উঠা চাঁদনী যেন তার বিয়েতে নতুন করে কষ্ট না পায় এবং নিজেকে সুবিধাবঞ্চিত মনে না করে এ কারণে চাঁদনীর বিয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব বহন করছে সামাজিক সংগঠনটি।’

বিয়ের মত এত বড় আয়োজন যাতে ভেস্তে না যায় তাই কমিটি গঠন করে দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া হয়। সবার একনিষ্ঠ স্বেচ্ছা শ্রমের কারণে আজ আশা করছি চাঁদনীর বিয়ে সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট