চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

ঝুঁকিতেও নেই নিরাপত্তার গরজ

ইমরান বিন ছবুর 

১৫ অক্টোবর, ২০২১ | ১:২১ অপরাহ্ণ

মো. আরাফাত (২০)। গাইবান্ধা জেলা সদরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের মো. জয়নাল আবেদীনের ছেলে। নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন সিজিএস কলোনির নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনে কাজ করতেন।

গত ১ অক্টোবর ওই ভবনের ৭ তলায় কাজ করার সময় ভবন থেকে নিচে পড়ে যান। সহকর্মীরা তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচাতে পারেননি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার দিনই মারা যান মো. আরাফাত নামের এই নির্মাণ শ্রমিক। নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছাড়াই বহুতল ভবনে কাজ করতে গিয়ে আরাফাতের মত অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তাদের কেউ মৃত্যু বরণ করছেন, আর কেউ হচ্ছেন চিরতরে পঙ্গু। নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি, নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করার ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।

অন্যদিকে, নিরাপত্তার ব্যাপারে মালিক-শ্রমিক সচেতনা হলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ৭৮ ক ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘শ্রমিকের ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা ব্যতীত কাউকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।’ আইনে এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।  নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকদের জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে একের পর এক বহুতল ভবন। হেলমেট, গামবুট, নিরাপত্তা বেল্টসহ নিরাপত্তা উপকরণ ছাড়াই কাজ করছেন শ্রমিকেরা।

একাধিক নির্মাণ শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজমিস্ত্রি ও রঙ মিস্ত্রিদের কাজ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। আস্তর ও রং করার ক্ষেত্রে দেয়ালের বাইরে থেকে বাঁশের মাচায় দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। নিচে জাল দেওয়া না থাকলে পা পিছলে বা মাচা ভেঙে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম জেলায় গত ছয় বছরে ৩০টি দুর্ঘটনার তথ্য তারা লিপিবদ্ধ করেছে। এসব দুর্ঘটনায় ১৬ জন নির্মাণ শ্রমিক নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছেন। হতাহতের শিকার হওয়া শ্রমিক ও তাদের পরিবারের করা সাহায্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তর এ তথ্য লিপিবদ্ধ করে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে ৩০টি দুর্ঘটনার বিপরীতে সাহায্যের জন্য আবেদনের তথ্য থাকলেও বাস্তবে দুর্ঘটনার সংখ্যা এর কয়েকগুণ হবে বলে মনে করছেন নির্মাণ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। 

চট্টগ্রাম জেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. রুস্তম আলী বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করেই কাজে নামিয়ে দেন। হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। কিন্তু আমাদের দেশে কোরিয়ান বা চাইনিজ কোম্পানীগুলো শ্রমিকদের শতভাগ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেই তাদের কাজে নিয়োগ দেয়। সেইফটি ছাড়া সেখানে কোনো শ্রমিক কাজ করতে পারে না। আমাদের ইউনিয়ন থেকে আমরা প্রায় সময় নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলি। তবুও মালিক পক্ষের শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ নেই।

রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) চট্টগ্রাম রিজিওন্যাল কমিটির চেয়ারম্যান  আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, রিহ্যাবের সদস্যরা শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেই কাজে নিয়োগ দেন। কিন্তু রিহাবের বাইরেও অনেক আবাসন ব্যবসায়ী রয়েছেন। এছাড়া, ব্যক্তি মালিকানাধীনও ভবন নির্মাণ করা হয়। যাদের অনেকেই শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন না। ফলে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাশ বলেন, শুধুমাত্র সচেতনার অভাবে কাজ করতে গিয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে প্রতিবছর অসংখ্য শ্রমিক হতাহতের সম্মুখীন হোন। এসব দুর্ঘটনায় মালিক-শ্রমিক দু’জনেরই দায় রয়েছে। একটু সচেতন হলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। বহুতল ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার সময় পর্যান্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখে কাজ করলে এসব ঝুঁকি এড়ানো যায়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট