চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভেজালবিরোধী অভিযান

বছরব্যাপী অভিযান তবুও অধরা নিরাপদ খাদ্য

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৪ অক্টোবর, ২০২১ | ১২:৩০ অপরাহ্ণ

দেশে সারাবছর ধরে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানোর পরও অধরাই থেকে যাচ্ছে নিরাপদ খাদ্য। অসাধু খাদ্য ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়া ভোক্তাদের অসহায়ত্ব যেনো ললাট লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিযান সংশ্লিষ্টদের অভিমত, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে দশটি উপায় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলা, নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখা, প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন বন্ধ করা, প্রচার মাধ্যমের দায়িত্বশীলতা, সামাজিক প্রতিরোধ, নৈতিক শিক্ষা, উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত সব ধাপে নজরদারি, ভেজালবিরোধী আইনের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ, ভেজালকারীদের কঠিন শাস্তি, কৃষি, খাদ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর তথ্যমতে, পণ্যের সঠিক মান না থাকায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম জেলায় ৮৩টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। সঠিক মান ধরে রাখতে না পারায় আরো ১৩টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করেছে। এক বছরে ৩৫৩টি অভিযানে ৮১ লাখ ৬৯ হাজার ৬শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান বিএসটিআই চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ও অফিস প্রধান মো. শওকত ওসমান।
বিএসটিআই, চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের তথ্যে আরো দেখা যায়, সংস্থাটি গত এক বছরে ১৯৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে ২৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত দুই বছরের তুলনায় চলতি বছরে বেড়েছে অভিযান ও জরিমানার পরিমাণ।
খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটি পরিচালিত বিগত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে বিএসটিআই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ২২২টি। অভিযানকালে মামলা হয় ৩১০টি। ২০১৮ সালে ১৩৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মামলা করা হয় ১৪১টি, ২০১৯ সালে ১৭৪টি মোবাইল কোর্ট করে মামলা করা হয় ২৫০টি এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে ১৯৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ২৭০টি মামলা দায়ের করা হয়।
বিএসটিআই চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. শওকত ওসমান বলেন, খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করতে বিএসটিআই এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানের ফলে খাবারে ভেজাল মেশানো আগের চেয়ে অনেকটা কমেছে। জরিমানার সংখ্যা বাড়ায় আগের চেয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। যেসব খাবারে বেশি ভেজাল মেশানো হয়, অভিযানে এসব প্রতিষ্ঠান ও বাজারের উপর বেশি নজর দেয়া হয়। তিনি বলেন, এতো কিছুর মধ্যে ভালো দিক হচ্ছে এবছর আমরা খাদ্যের সঠিক মান থাকায় ৫০৭টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছি এবং লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে ৭২২টি।
এ বিষয় হাটহাজারীর সাবেক ইউএনও মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এতো অভিযানের পরও খাদ্যে ভেজাল বন্ধ না হওয়ার কারণ ব্যবসায়ীদের অল্প পুঁজিতে বেশি লাভের আশা। সেজন্যই খাদ্যে ভেজাল কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই খাবারে ভেজাল মেশায়। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কোনো বিরতি না দিয়ে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। ভেজাল নিয়ন্ত্রণকারী সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভেজাল খাদ্যের অভিযান একবার হওয়ার পরে পরবর্তীতে সেটার ফলোআপ করা হয় না। খাবারের মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব মূলত বিএসটিআই এর। কিন্তু তাদের সেইভাবে ফলোআপ সিস্টেমটা নেই। বিএসটিআই আইনে আছে প্রতি ছয় মাস পর পর লাইসেন্স দেয়া প্রতিষ্ঠানকে ফলোআপ করতে হবে। কিন্তু মাসে কয়েকটা ফলোআপের টার্গেট থাকে যেগুলো শেষ হলেই তারা আর মাঠে থাকে না।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট