চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজারে বনভূমির ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দে স্থগিতাদেশ

অনলাইন ডেস্ক

১১ অক্টোবর, ২০২১ | ৮:০৯ অপরাহ্ণ

বন বিভাগের আপত্তি সত্ত্বেও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের লক্ষ্যে কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জায়গার বরাদ্দ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই বরাদ্দ কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

সোমবার (১১ অক্টোবর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিঞা ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিবেশ ও বন সচিব, ভূমি সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান কবির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

প্রসঙ্গত, গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৭০০ একর বনভূমি প্রশাসন একাডেমির জন্য বরাদ্দ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আরেকটি প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে ‘সংরক্ষিত বনভূমির’ ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির ওই এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন।

বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে ভূমি মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ দিয়েছে। বন বিভাগের দাবি, এই জমি তাদের। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ নিষেধ। এ কারণে বন বিভাগ থেকে ‘এই ভূমি বন্দোবস্তযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রে দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনভূমিকে অকৃষি খাসজমি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে, বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়া সমৃদ্ধ এই বনভূমির ইজারা দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার কেবল বন বিভাগের। বন বিভাগ ভূমি মন্ত্রণালয়কে লেখা তাদের চিঠিতে বলেছে, ১৯৯০ সালে জারি করা ভূমি মন্ত্রণালয়েরই একটি পরিপত্রে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড় ও পাহাড়ের ঢাল বন্দোবস্তযোগ্য নয় এবং ওই জমি মূলত বন বিভাগ বনায়নের জন্য ব্যবহার করবে। বন আইন অনুযায়ী, এ ধরনের সংরক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা করা নিষিদ্ধ।

ভূমি মন্ত্রণালয় বলেছে, বরাদ্দ দেওয়া জমির ৪০০ একর পাহাড় ও ৩০০ একর ছড়া বা ঝরনা। তারা জমির মূল্য ধরেছে ৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু একাডেমির জন্য প্রতীকি মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা।

এই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ মো. মনিরুজ্জামান কবির।
শুনানিতে তিনি বলেন, ৭০০ একর বনভূমির মালিক বন বিভাগ। এই বনভূমির মালিক না হওয়া সত্ত্বেও বনবিভাগের আপত্তি উপেক্ষা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এ ভূমি বরাদ্দ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

শুনানিতে আইনজীবী বলেন, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা রক্ষার জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। সেখানে সরকারের একটি বিভাগ ৭০০ একর বনভূমি ধ্বংস করে সেখানে প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের জন্য এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে। যদি এখানে একাডেমি করা হয় তাহলে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসবে।

পূর্বকোণ/এএ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট