চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নতুন তিন প্রজাতির সাপের সন্ধান

মরিয়ম জাহান মুন্নী 

৪ অক্টোবর, ২০২১ | ২:৩৩ অপরাহ্ণ

দেশে নতুন তিন প্রজাতির সাপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরমধ্যে একটি চট্টগ্রামে। গত তিন বছর গবেষণা চালিয়ে ভেনম রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ নামে সাপ নিয়ে  গবেষণা পরিচালনাকারী একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা নতুন প্র্রজাতির সাপগুলো আবিষ্কার করেন।  বাংলাদেশ সরকারে অর্থায়নে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণের অধীনে প্রতিষ্ঠিত আলোচ্য সেন্টারটির গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ। যিনি ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রধান গবেষক।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল তিন বছর ধরে সারাদেশে গবেষণা চালিয়ে সাপগুলো সন্ধান পান। তিনি জানান, আবিষ্কৃত তিনটি সাপের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম নগরীর ফইল্যাতলী সমুদ্র উপকূল থেকে,  দ্বিতীয়টি চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং তৃতীয়টি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় পাওয়া যায়। গবেষণায় প্রাপ্ত সাপের মধ্যে রয়েছে বালি সাপ (ইংরেজিতে ‘দ্যা সেন্ড স্নেক’। বৈজ্ঞানিক নাম চংধসসড়ঢ়যরং পড়হফধহধৎঁং), ‘কমলাবতী’, (ইংরেজিতে ‘কোরাল রেড স্নেক’ ও বৈজ্ঞানিক নাম ঙষরমড়ফড়হ কযবৎরবহংরং) এবং ইরানী সামুদ্রিক সাপ (ইংরেজি ’পার্সিয়ান গালফ সী স্নেক’ যার বৈজ্ঞানিক নাম  ঐুফৎড়ঢ়যরং খধঢ়বসড়রফবং)।

বিষধর সাপ গবেষণায় রাষ্ট্রীয় একমাত্র প্রতিষ্ঠান ভেনম রিসার্চ সেন্টারের আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চল থেকে এ তিনটি নতুন সাপ সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের সামুদ্রিক অঞ্চলে প্রথম শনাক্ত হল ’পার্সিয়ান গালফ সী স্নেক’। সামুদ্রিক এ সাপটি বিষধর। অন্য দুই সাপ মারাত্মক বিষধর নয়, তারা প্রকৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, চলতি বছরের ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি স্থানীয় বাজারে মাছ বিক্রেতার ঝুড়িতে মাছের সঙ্গে সাপটি দেখা যায়। খবর পেয়ে সাপটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ভেনম রিসার্চ সেন্টারে নিয়ে আসা হয়। মাছ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের ফইল্যাতলী বাজার থেকে মাছ কিনে এনেছিলেন তারা। সেগুলোর সঙ্গে সাপটিও চলে আসে। পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সাপটির তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে সাপটির প্রজাতি সম্পর্কে নিশ্চিত হই।

‘বালি সাপ’ বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকার চরাঞ্চলে প্রথম পাওয়া যায়। এই সাপটি যেখানে পাওয়া যায় পুরো এলাকাটি বন্যার পানিতে ডুবে ছিল। প্লাবিত চরের একটি বাবলা গাছের ভাসমান ডালে সাপটি দেখা যায়। এই প্রজাতির সাপ এর আগে ভারত, পাকিস্থান ও মিয়ানমারে পাওয়া যেত।

‘কমলাবতী’ সাপটি ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার একটি বাঁশঝাড়ে মাটি খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া যায়। সাপটি সংগ্রহ করেন শহিদুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক  স্ন্যাক রেসক্যুয়ের।

গায়ের রঙের সাথে মিল রেখে সাপটির বাংলা নাম রাখা হয়। সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪-২৫ বার দেখা গেছে। ১৯৩৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে সর্বপ্রথম এই সাপটির দেখা পাওয়া যায়। হিমালয়ের অদূরবর্তী অঞ্চলে পাওয়া যায়। সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাপটি এখন দিক পরিবর্তণ করেছে। তবে সাপটি পৃথিবী থেকে বিপন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে। এই সাপের বিস্তার রয়েছে ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের ৮ শতাংশ সংরক্ষিত বনভূমিতে। বিভিন্ন কারণে সাপটি মারা যাচ্ছে। তাই এখনি সাপ সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে অভিমত প্রাণী বিজ্ঞানীদের।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট