চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কী নেই স্টেডিয়াম মার্কেটে

দেশি-বিদেশি ক্রীড়া সামগ্রীর অনন্য সম্ভার

দেবাশীষ বড়–য়া দেবু

১১ জুলাই, ২০১৯ | ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

ছেলে বায়না ধরেছে, তার একটা নতুন ক্রিকেট ব্যাট চাই। অগত্যা ছেলের পীড়াপীড়িতে বাবা রাজি হলেন। এক বন্ধুর পরামর্শেই এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মার্কেটে গেলেন সওদা করতে। শুধু ওই বাবাই নন। এভাবে ছেলে বা মেয়ে, কখনো কখনো নিজের প্রয়োজনেও অনেকেই হাজির হন স্টেডিয়াম মার্কেটে। কি চাই, ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট ও বল, ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট, কর্ক ও নেট, বুট, কেডস, পেন্ট জার্সিসহ খেলাধুলা বিষয়ক আনুসাঙ্গিক সবকিছুই পাওয়া যায় স্টেডিয়াম মার্কেটে। এ ছাড়া বেশ কয়েকবছর ধরে এ দোকানগুলোতে ব্যায়ামের জিনিসপত্রও পাওয়া যাচ্ছে। এই যেমন ট্রেড মিল, সাইকেল অরবিটেক, পেট কমানোর বেলি বেন্স এবং বডি বিল্ডিং-এর মাল্টি মেশিনসহ আরো অনেক কিছুই যুক্ত হয়েছে ফুটবল ও ক্রিকেট ব্যাট বলের সাথে।
সেদিন কথা হচ্ছিলো এক দোকানের স্বত্বাাধিকারী আলহাজ শফিউল আলম শফি’র সাথে। স্টেডিয়াম মার্কেটের ঠিক মাঝখানে শিশু পার্কের বিপরীতে বেশ বড়সড় পরিসরে ওনার দোকান চিটাগাং স্পোর্টস’র অবস্থান। এতো কিছু থাকতে এই ব্যবসায় আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক সময় ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতাম। ১৯৭৬/৭৭ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে নিয়মিতভাবে প্র্যাকটিস করতাম। মিউনিসিপ্যাল

মডেল হাই স্কুল দলের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলাম। সেই মোহ থেকেই স্পোর্টস গুডস এর ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হয়েছি। তিনি জানান, তার দোকান (চিটাগাং স্পোর্টস)-টি ১৯৮৪ সাল থেকে বিকিকিনি’তে নামে। খেলাধুলা এবং ব্যায়াম বিষয়ক যা চাইবেন সবই পাবেন এ দোকানে। এখানে দেশি-বিদেশি ক্রীড়া সামগ্রীর বিপুল সমাহার। পাকিস্তানের শিয়ালকোট থেকে আসে ক্রিকেট ব্যাট (ভারত থেকেও আসে), চীন, জাপান ও তাইওয়ান থেকে ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট, চীন থেকে আসে ব্যায়ামের ট্রেডমিল ও ডামবেলসহ অন্যান্য সামগ্রী, চীন, ব্যাংকক ও ভারত থেকে বুট, কেডস। এভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে বাস্কেটবল, টেবিল টেনিস ব্যাট ও বোর্ড, হকি স্টিকসহ অন্যান্য ক্রীড়া সামগ্রীসহ আছে নিজস্ব ফ্যাক্টরির তৈরি ক্যারম বোর্ড। এছাড়া বাস্কেটবল, ভলিবল, হ্যান্ডবল, টেবিল টেনিস বোর্ড, বক্সিং গ্লাভস, হকি স্টিক, দাবা, বাগাডুলি ও মনোপুলিস বাচ্চাদের স্কুটি, এসকেট বোর্ড রোলার স্কেটস ইত্যাদি সবই পাওয়া যাবে এই দোকানে। এখানে প্রায়ই সব ক্রীড়া সামগ্রী ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে আসে। দেশের বাইরে থেকে আসে উন্নত মানের ক্রীড়া সামগ্রী। একসময় তিনি নিজে গিয়ে বাইরে থেকে এ সব সামগ্রী নিয়ে আসতেন। কিন্তু এখন ইন্টারনেট ও মেইলের যুগ। দোকানে বসেই দেশ-বিদেশে সকলের সাথে অনায়াসেই যোগাযোগ ও লেনদেনও করা যায়।
তবে, চট্টগ্রামে সবচেয়ে পুরানো দোকানের নাম ক্রীড়া বিতান। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে স্টেডিয়াম মার্কেটে খেলাধুলার সরঞ্জাম নিয়ে প্রথমবারের মতো এ দোকানটি বসেছিলো বলে, এ দোকানের স্বত্বাধিকারী মোফাচ্ছেল হোসেন বাচ্চু জানান। ১৯৫৯ সাল থেকে তিনি নিউ মার্কেটে চামিং স্পোর্টস নামে এক দোকানে চাকুরি করতেন। পরে নিজেই দোকান দেন স্টেডিয়াম মার্কেটে। প্রায় ১৫/২০ বছর ধরে দোকানটি একচেটিয়া ব্যবসা করেছে। বয়সের ভারে এখন বিশ্রামে রয়েছেন। তার ছেলে তোফায়েল হোসেন খান এ ক্রীড়া বিতানের দেখভাল করছেন। দোকানটি এখন অবশ্য আগের জায়গায় নেই। আগে ছিল শিশু পার্ক গেটের ঠিক উল্টো দিকে। ২০০৭ সাল থেকে চলে গেছে আরো বায়ে। এতে কেবল ক্রীড়া বিতানই নয়। আরো কয়েকটি দোকানকে বায়ের দিকে চলে যেতে হয়েছে। মূলত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের গ্যালারি দ্বিতল হওয়ার পর থেকেই এই পরিবর্তন। সেখানে আগে গ্যালারি একতলা থাকাবস্থায় ক্রীড়া বিতানের পাশে কোহিনুর স্পোর্টস, পানামা স্পোর্টস, সেলিম স্পোর্টস ও ইউসুফ স্পোর্টস নামে ৪টি দোকান ছিল। কিন্তু গ্যারারি দ্বিতল হওয়ার পর থেকে ক্রীড়া সামগ্রীর দোকানগুলো বা দিকে স্থানান্তরিত হয়েছে। এছাড়া দ্বিতল গ্যালারিতেও বেশ কয়েকটি বড়োসড়ো ক্রীড়া সামগ্রীর দোকান রয়েছে। এখানে সবমিলিয়ে ২০টি দোকান রয়েছে। এদিকে চিটাগাং স্পোর্টস’র ঠিক পাশে চ্যাম্পিয়ন স্পোর্টস নামে আরো একটি দোকান রয়েছে। এক সময় তারাও জমজমাট ব্যবসা করেছিলো। এখন তারা ব্যায়ামের সামগ্রীর উপর পসরা সাজিয়েছেন।
স্টেডিয়াম মার্কেটের সব দোকানেই থরে থরে সাজানো সব ক্রীড়া সামগ্রী। এতে একটা ক্রিকেট ব্যাট বা বলের দাম কতো হতে পারে। একটা ট্রেডমিলের দামই বা কতো, এছাড়া কতো টাকায় পাওয়া যেতে পারে একজোড়া দেশি বা বিদেশি বুট। এদিকে আমি অবাক হয়েছি একটা ট্রেডমিলের নাম শুনে। জনাব শফির মাধ্যমে জানলাম একটি মোটোরাইস ট্রেডমিলের সর্বোচ্চ দাম ৭ লক্ষ টাকা। আরো কমেও পাবেন ২,৩ বা ৪ লক্ষ টাকায়। তবে ম্যানুয়েল’র দাম তুলনামূলক অনেক অনেক কম, এগুলো পাবেন ১৫ থেকে ২২ হাজার টাকার মধ্যে। মোটোরাইস সাইকেল অরবিটেক’র দামও ট্রেডমিলের মতো। পাকিস্তান থেকে আনা এক একটি ভাল ক্রিকেট ব্যাটের দাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আবার ২৫শ টাকা দিয়েও পাবেন। চীন, তাইওয়ান এবং জাপান থেকে আসা এক একটি ব্যাডমিন্টর র‌্যাকেটের দাম ২৫ হাজার টাকা। দেশিগুলো পাবেন ১৫শ টাকায়। চীন থেকে আসা ভাল একটা ফুটবলের দাম ২ হাজার ৫শ টাকা (কম দামে ৪৫০ টাকায় পাওয়া যাবে) হলেও একই জায়গা ও ভারত থেকে আসা একজোড়া বুটের দাম ২২ শত থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। কথা প্রসঙ্গে জনাব শফি আরো বলেন, বিশ^কাপ এলেই আমাদের জার্সি বিক্রিটা তুলনামূলকভাবে অনেকটা বেড়ে যায়। ক্রিকেট থেকে ফুটবল বিশ^কাপে জার্সির ব্যবসাটা বেশ জমজমাট হয়। ক্রিকেটে কেবল বাংলাদেশের জার্সিই বিক্রি করতে পারি। কিন্তু ফুটবলে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ফ্রান্স এমনকি পতাকাও বিক্রি হয় দেদারসে। ৪ থেকে ৫’শ টাকায় এসব জার্সি পাওয়া যায়। এ সকল জার্সি ছাড়া বিভিন্ন ধরনের জার্সির বিপুল সমাহার রয়েছে এই দোকানে।
এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন লিগের জন্য দলগুলো স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে জার্সি ক্রয় করে। এছাড়া রেডিমেইড ট্রাউজারও এখানে পাওয়া যায়। আবার অর্ডার করলে বাইরে থেকেও এনে দেয়। দোকানে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন করা থাকে। সেখান থেকে পছন্দ করা যাবে অথবা নিজেও পছন্দসই ডিজাইন দিতে পারবেন। সাধারণত সপ্তাহের প্রত্যেকদিন খোলা থাকে স্টেডিয়াম মার্কেটের দোকানগুলো। কিছু কিছু দোকান শুক্রবারে বন্ধ থাকে। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার দিকে খোলা হলে কোন বিরতি (শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য আধঘণ্টার মতো বন্ধ থাকে) ছাড়াই রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট