চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মায়ের কাছে তানজির ফোন

পুলিশকে বলবেন না ক্ষতি হয়ে যাবে

নাজিম মুহাম্মদ

১১ জুলাই, ২০১৯ | ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

জঙ্গি গ্রুপ আনসার আল
ইসলামের কর্মকা-ে
জড়িত থাকার অভিযোগ

বরাবরই শান্ত স্বভাবের ছিলো সাফিয়া আক্তার তানজি। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে খুব একটা বেশী কথা বলতো না। নিখোঁজের বারো দিনের মাথায় জঙ্গি গ্রুপ আনসার আল ইসলামের কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে গত সোমবার (৮জুলাই) বরিশালে র‌্যাবের হাতে তানজির আটকের খবর শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে হাফেজ আবদুস সালামের। বাসা থেকে বের হবার দিন সন্ধ্যায় মাকে ফোন করে বলেন, আমার বাসা থেকে বের হবার বিষয়টি পুলিশকে বলবেন না। বললে ক্ষতি হয়ে যাবে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে হাফেজ আবদুস সালাম জানান, তাদের নিজ বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মাস্টারহাট এলাকায়। দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে তানজি দ্বিতীয়। এস এস সি পাস করার পর তানজি সাতকানিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। এইচ এস সি পাশ করার পর একই কলেজে বিবিএ’তে ভর্তি হয়। নগরীর সল্টগোলা ধূপপাড়া এলাকায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে ফ্রি পোর্ট এলাকায় একটি মসজিদে ইমামতি করছেন। দুই বছর আগে তানজিকে (২২) সল্টগোলার বাসায় নিয়ে আসে।
তানজির ঘর ছাড়া প্রসঙ্গে আবদুস সালাম বলেন, গত ২৬ জুন সকালে কেনকাটার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এসময় মায়ের মুঠোফোনটি হাতে ছিল। জোহরের নামাজের পর মায়ের কাছে ফোন করে তানজি বলেন, ‘আমি আমার এক বান্ধবীর কাছে এসেছি’। বিকেলে চলে আসবো। পরে সন্ধ্যায় জান্নাতুল নাঈমা নামের একজনের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে বলেন,‘আমি বাসায় আসবো না। একটি ছেলের সাথে আমার বিয়ে হবে। আমার বাসা থেকে বের হবার বিষয়টি পুলিশকে বলবেন না। বললে ক্ষতি হয়ে যাবে। এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেন। পরে উক্ত নম্বরে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
হাফেজ সালাম বলেন, ফ্রি পোর্ট এলাকায় আমাকে সবাই চেনে। বাসা থেকে মেয়ের বের হবার বিষয়টি এলাকার লোকজন শুনলে মান সম্মান ক্ষুন্ন হবে- এই ভেবে কাউকে কিছু বলিনি। এরমধ্যে আমার বড় মেয়ের জামাইসহ আত্নীয় স্বজনসহ সম্ভাব্য বিভিন্নস্থানে তানজিকে খুঁজেছি। গত ৫ জুলাই র‌্যাব-২ থেকে ফোন করে মেয়ের নিখোঁজের বিষয়টি জানতে চাইলে আমি শংকিত হয়। গত ৭ জুলাই বন্দর থানায় গিয়ে মেয়ের নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করি।
এদিকে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লে.কর্নেল মো. এমরানুল হাসান জানান, কৌশলগত কারণে জঙ্গিরা নারী সদস্য বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করতো তারা। এরপর বিয়ের ফাঁদে ফেলে জঙ্গিবাদে জড়াতো সেই নারীকে। সম্প্রতি নাঈমা ও ফারুক নামের দুজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই মাস আগে সাফিয়া আক্তার তানজির সঙ্গে ফেসবুকের একটি গ্রুপে কয়েকজন মেয়ের পরিচয় হয়, যাদের একজন নাঈমা। এই নাঈমার মাধ্যমে তানজীর পরিচয় হয় বরিশালের একটি স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে। তার নাম সহিফুল ওরফে সাইফ। এই সাইফের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিভিন্নভাবে তানজীকে উৎসাহিত করেন নাঈমা। তানজীও সেই ফাঁদে পা দেন। একপর্যায়ে গত ২৬ জুন সাইফকে বিয়ে করার জন্য নাঈমার সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন তানজী।
বাড়ি ছেড়ে বরিশালে পৌঁছানোর পর তানজীকে নাম পরিচয় গোপন করে নাঈমার বোন হিসেবে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন সাইফ। তানজীর বাবা-মায়ের নামের জায়গায় বসানো হয় নাঈমার বাবা-মায়ের নাম। এরইমধ্যে তানজীর সঙ্গে সাইফের বিয়েও হয়। এই সময়ের মধ্যে তানজীকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্নভাবে প্ররোচনা চালান সাইফ ও নাঈমা। এরমধ্যে তানজির নিরুদ্দেশের বিষয়টি ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-২-এর একটি টিম গত ৮ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বরিশালের একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে তানজীকে উদ্ধার করে এবং গ্রেপ্তার করা হয় জান্নাতুল নাঈমাকে। তবে পালিয়ে যান সাইফ। পরবর্তীতে নাঈমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার ডেমরা এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার সকালে মো. আফজাল হোসেনকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাবের দাবি নাঈমা ও আফজাল জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তারা সদস্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল।
র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার (ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-৩) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, নাঈমা ও আফজাল ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নারীকে আনসার আল ইসলামের সদস্য করেছে। তাদের শনাক্ত করা ও পলাতক সাইফকে গ্রেপ্তারের চেষ্ঠা চলছে। নাঈমাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, জান্নাতুল নাঈমা চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। ২০১৬ সাল থেকে সে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আসছে। ফেসবুকের একটি গ্রুপে বিভিন্ন নারী সদস্যদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে সে আনসার আল ইসলাম জঙ্গি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হয়। সে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মহিলা সদস্য বৃদ্ধিতে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গ্রেপ্তার মো. আফজাল হোসেন সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, সে দীর্ঘদিন ধরে আনসার আল ইসলাম-এর সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে ঢাকার নিকটস্থ একটি এলাকার স্থানীয় সংগঠক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট