চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

গণটিকা : অভিযোগ নয় সুশৃঙ্খল হোক

ইমাম হোসাইন রাজু 

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১:৪০ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ দেড় মাস পর আগামীকাল (মঙ্গলবার) ফের দেশজুড়ে চলবে দ্বিতীয়ধাপে গণটিকাদান কর্মযজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দেশজুড়ে একদিনে করোনাভাইরাসের ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের চেয়ে এ ধাপে দ্বিগুণ টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিনে একসঙ্গে ৮০ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সংক্রমণরোধে বড় ভূমিকা রাখবে ঠিকই। তবে প্রথম ধাপের গণটিকাদানে অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা আর স্বজনপ্রীতিসহ যে অন্তহীন অভিযোগ ছিল, তা যেন এবারের কর্মসূচিতে না হয়, সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেজিস্ট্রেশনবিহীন কিংবা এসএমএস ছাড়া এবার কাউকে টিকা দেয়া হবে না। প্রাধান্য পাবেন  বয়োজ্যেষ্ঠরা। যারা কেন্দ্রে এসে রেজিস্ট্রেশন করেই টিকা নিতে পারবেন।

গতকাল (রবিবার) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কাল (মঙ্গলবার) দেশজুড়ে একদিনে করোনাভাইরাসের ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে। পাশাপাশি চলমান টিকাদান কেন্দ্রগুলোতেও টিকা প্রদান করা হবে। এ কর্মসূচিতে যারা রেজিস্ট্রেশন করে টিকা পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়, এ ক্যাম্পেইন চলাকালে শুধুমাত্র প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হবে। পরবর্তী মাসের একই তারিখে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হবে। ক্যাম্পেইন শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের টিকা দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এমন ক্যাম্পেইনের ফলে বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী টিকার আওতায় আসলে, করোনার সংক্রমণরোধ আরও সহজ হবে। ইতোমধ্যে প্রায় আড়াইকোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা নিশ্চিত করা গেলে, আরও সহনীয় হবে করোনার সংক্রমণ।

টিকার পরিমাণ বেশি পৌঁছাতে হবে গ্রাম পর্যায়ে

ডা. মাহফুজুর রহমান

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘এমন কর্মযজ্ঞ অবশ্যই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। তবে গ্রাম পর্যায়ে টিকার পরিমাণ বেশি পৌঁছাতে হবে। একদিনে যদি ৮০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া যায়, এটা নিঃসন্দেহে বড় বিষয়। কথা হচ্ছে, এ কাজটি একদিন না করে আরও বেশিদিন করা উচিত। আর আগে যদি টিকা নিশ্চিত করা যেত, তাহলে সংক্রমণ হার বহু আগেই কমে আসতো। দেরিতে হলেও এ কাজটি যেন শতভাগ সুষ্ঠুভাবে করা যায়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আর যারা টিকা নিতে আসবেন, তাদেরও ধৈর্য ধরা উচিত। টিকা দেয়ার মতো জনবল না থাকলে পল্লী চিকিৎসকদের এ কাজে যুক্ত করা যেতে পারে। প্রয়োজনে কর্মশালা করে তাদেরকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেয়া যায়।

একদিনে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত

ডা. ইমরান বিন ইউনুস

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও গবেষক এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনুস পূর্বকোণকে বলেন, ‘একদিনে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার যে পরিকল্পনা, তা অবশ্যই উত্তম পরিকল্পনা এবং বাস্তবসম্মত। তবে কথা হচ্ছে, একদিন না করে এমন কর্মসূচি যদি প্রতি সপ্তাহে করা যায়, তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংক্রমণ আরও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। অথবা যখনই টিকা পাওয়া যাবে, ঠিক তখনই এমন উদ্যোগ নিয়ে কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। যদিও প্রথম পর্যায়ে গণটিকা নিয়ে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ছিল, সে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখা উচিত। যদিও এটিকে নেগেটিভ দেখি না। কথায় আছে ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালো’। অন্তত একটি অংশ হলেও টিকার আওতায় আসছে।

স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, শ্রমিক, ট্রান্সপোর্ট শ্রমিকদের দ্রুত টিকার আওতায় আনা উচিত উল্লেখ করে এ গবেষক আরও বলেন,  বিশেষ করে যদি প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বুথ বসিয়ে রিকশা চালক থেকে শুরু করে গণপরিবহনের চালক ও শ্রমিকদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করা যায়, সেটা অবশ্যই সংক্রমণ রোধে বড় ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের সংক্রমণ অনেকাংশেই কমে এসেছে।

 

গতবারের বিষয়টি মাথায় রেখেই এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে

ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির পূর্বকোণকে বলেন,  ‘গতবারের বিষয়টি মাথায় রেখেই এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। তবে এবারের কর্মসূচিতে রেজিস্ট্রেশনবিহীন কাউকে টিকা দেয়া হবে না। রেজিস্ট্রেশন থাকলেও যাদের এসএমএস পাঠানো হবে, শুধুমাত্র তারাই টিকা গ্রহণ করতে পারবেন। ইতোমধ্যে রবিবার (গতকাল) রাত থেকে এসএমএস পাঠানোর কাজ চলছে। তবে গতবারের মতো কোন স্লিপ বা বিশেষ প্রক্রিয়ায় টিকা দেয়া হবে না। এটি আমরা নিজেরাই তদারকি করবো। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ যারা আছেন, যাদের রেজিস্ট্রেশন নেই, তাদের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হবে। বয়োবৃদ্ধদের স্পট রেজিস্ট্রেশন করে টিকার ব্যবস্থা করা হবে। নির্দেশনা দেয়া আছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থাৎ যে পরিমাণ টার্গেট রয়েছে, তা পূরণ হওয়া পর্যন্ত টিকা দেয়া হবে’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট