চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

চারশ টাকার টিপ ছুরিতেই খুন-ছিনতাই, ডাকাতি!

নাজিম মুহাম্মদ

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ

পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর এলাকা থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত থাকার অপরাধে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের দুই জনের কাছেই পাওয়া যায় দুটি টিপ ছুরি। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর হালিশহরের মইন্ন্যাপাড়ায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই যুবকের কাছেও দুটি টিপ ছুরি পাওয়া যায়। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না টিপ ছুরির ব্যবহার। নগরীর থানাগুলোতে এ ধরনের ছুরি নিয়ে প্রতিদিন কেউ না কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে।
চারশ টাকা দামের ছয় ইঞ্চি সাইজের ছুরিতে ঘটছে খুন, ছিনতাই ডাকাতির মতো ঘটনা। হাতের কাছেই পাওয়া যায় অস্ত্রটি। ফুটপাত থেকে নামিদামি মার্কেটের ডিপার্টমেন্ট স্টোরে প্রকাশ্যে বিক্রি হয়। চীনের তৈরি বিভিন্ন সাইজের এ ছুরি ইচ্ছে করলেই ভেঙ্গে বাটের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলা যায়। আর দ্রæত খুলে যে কাউকে সহজেই আক্রমণ করা যায়। স্টিনলেস স্টিলের তৈরি বিদেশি এই ছুরির একপাশ ধারালো। ওই অংশ খোলা না থাকায় পকেটে রেখে নিরাপদে হাঁটাও যায়। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে নগরীতে। সবকটি ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছে চীনের তৈরি একই ধরনের ছুরি। এই ধরনের ছুরি সংসারের কোন কাজে ব্যবহার হয় না। ফলে পরিবারের সবজি কিংবা ফল কাটাকাটির তালিকায়ও নেই বিদেশে তৈরি এই ছুরি। ছিনতাইকারি, ডাকাত ও কিশোর-তরুণরা এসব ছুরি ব্যবহার করছে। তবে প্রকাশ্যে বিক্রি হওয়া এই বিপদজনক অস্ত্রটির দিকে নজর দিয়েছে নগর পুলিশ। প্রকাশ্যে টিপ কিংবা ছোট আকারের ছুরি বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে নগর পুলিশ। টিপছুরি পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট দোকানদারকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে নগরীর ষোল থানাকে নির্দেশনা দিয়েছেন নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।
পুলিশ কমিশনার তানভীর বলেন, টিপ ছুরিগুলো লুকিয়ে বহন করা খুবই সহজ। প্রায় সময় এ ছুরি নিয়ে আসামি ধরা পড়ছে। প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রি করতে দেখলে ছুরিগুলো জব্দ করতে থানাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া আছে। টিপ ছুরির অবাধ ব্যবহার কমাতে আমরা চেষ্টা করছি।
গত ১৮ মার্চ লালখান বাজারে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সাফায়েত হোসেন নামের ১৯ বছর বয়সী এক কলেজছাত্র আহত হয়েছেন। ১৮ মার্চ রাতে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করে।
আহত সাফায়েত ফেনীর দাগনভূঞার রাজাপুর মিয়া বাড়ির মীর হোসেনের ছেলে এবং পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র।
জানা গেছে, টাইগারপাস থেকে লালখান বাজারে যাওয়ার সময় ২ জন ছিনতাইকারী তাকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
পরে ছিনতাইয়ের অভিযোগে সুমন বিল্লাহ নামে এক যুবকসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর সুমন বিল্লাহ জানায়, তারা সাফায়াতের কাছ থেকে তার মুঠোফোনটি কেড়ে নিয়েছিলো। দিতে না চাইলে ছিনতাইকারীরা সাফায়েতকে টিপছুরি দিয়ে ১৬টি ছুরিকাঘাত করে।ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে ছুরিটি উদ্ধার করে গোয়েন্দারা।
গত ২৫ মার্চ পেশাদার ছিনতাইকারী ইমাম হোসেনকে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে আকবরশাহ থানা পুলিশ। তার কাছে একটি দেশীয় তৈরি অস্ত্র ও টিপ ছুরি পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীতে এই ধরনের ছুরি ব্যবহার করেই চারজনকে খুন করা হয়েছে ২০১৮ সালে। এরমধ্যে নগরীর বন্দর থানার ধুপপুল এলাকায় একই ধরনের ফোল্ডিং ছুরি দিয়ে বাসার ভেতরে জবাই করে খুন করা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা সজল নন্দীকে। এই খুনের ঘটনায় চার কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (মেট্টো)। পরে কিশোরদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বন্দর থানার মাইলের মাথা এলাকার হাজি শামছুল হকের পুকুর থেকে সজল হত্যায় ব্যবহৃত চীনের তৈরি ছুরিটি উদ্ধার করে পুলিশ।
২০১৮ সালের ১৬ জুন নগরীতে তিনটি হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে হালিশহরের আর্টিলারি রোডে কিশোর মো. সুমন হত্যা এবং একই দিনে নগরীর চট্টেশ্বরীতে যুবলীগ কর্মীদের হাতে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে আবু জাফর অনিককে (২৬) খুন করা হয়। নগরীর চট্টেশ্বরী রোডে আইমান জিহাদ নামের এক যুবককেও এই ধরনের ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। একইমাসে নগরীর বাকলিয়া তক্তারপোলে বন্ধু মোবারকের ছুরিকাঘাতে খুন হন জসিম উদ্দিন (২২)। এরমধ্যে পুলিশ হালিশহরে সুমন হত্যার ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার এবং হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরিটি রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারও করেছে।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট