চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘রোল মডেল খুঁজতে বাইরে যেতে হয়নি আমাদের’

পূর্বকোণ সেন্টারে ইউসুফ চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১:৫৪ অপরাহ্ণ

ব্যতিক্রমী এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চট্টলদরদী ও দৈনিক পূর্বকোণের স্বপ্নদ্রষ্টা মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হয়েছে। গতকাল (রবিবার) পূর্বকোণ সেন্টারের ইউসুফ চৌধুরী কনফারেন্স হলে ইউসুফ চৌধুরী পরিবারের তিন প্রজন্মের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই দাদা কর্মবীর ইউসুফ চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবনের অজানা অনেক তথ্য তুলে ধরেন নাতি-নাতনিরা। পূর্বকোণের সাংবাদিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা মুগ্ধ হয়ে শুনেন, কীভাবে একজন ইউসুফ চৌধুরী সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে নিজচেষ্টায় মহীরুহে পরিণত হয়েছিলেন। চট্টগ্রামের গণমানুষের কণ্ঠ হয়েছিলেন।

মধুর স্মৃতিচারণ করে নাতনি তানিতা চৌধুরী বলেন, দাদা প্রতিটি কাজ খুব যত্ন সহকারে করতেন। তাঁর সাথে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি চোখের সামনে ভাসছে। দাদার সাথে যে সময় ব্যয় করেছি, গত কয়েকদিনে তা খুব মনে পড়ছে। কাজের প্রতি দাদার যে ডেডিকেশন ও ডিসিপ্লিন, তা সবার জানা আছে। ছোটবেলা থেকেই দাদার খুব কাছে ছিলাম। তিনি ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ-কালাম শেষে পত্রিকা পড়তেন। আমি পড়তে বসতাম। দাদা, কম কথা বলতেন, শুনতেন বেশি।

পড়াশুনার ব্যাপারে দাদার খুব আগ্রহ ছিল জানিয়ে তানিতা চৌধুরী আরো বলেন, আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট দিলে তিনি খুব আগ্রহ নিয়ে তা দেখতেন। কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছি তাও দেখতেন। তিনি প্রতিটি কাজ খুব যতœ সহকারে করতেন। পত্রিকার প্রতি উনার অন্যরকম টান ছিল। আমরা দেশের বাইরে গেলে হোটেলে যেসব পত্রিকা থাকতো, আমরা তা দাদার জন্য নিয়ে আসতাম। তিনি প্রতিটি পত্রিকা মনযোগ সহকারে পড়তেন।

আরেক নাতনি জোহানা চৌধুরী বলেন, দাদার পাশে বসা নিয়ে আমাদের মাঝে ঝগড়া হতো। খেতে বসলে দাদা মাছের কাঁটা বেছে বেছে আমাদের পাতে তুলে দিতেন। দুপুরে অফিস থেকে এসে বিশ্রাম নিয়ে ডেইরি ফার্মে যেতেন। দাদার সাথে ডেইরি ফার্মে যাওয়ার জন্য আমরা দু’জন বসে থাকতাম। তাকে যতটুকু ভালোবাসতাম, ততটুকু ভয়ও পেতাম। দাদা খুব চুপচাপ ছিলেন। অনেক সময় তাকে সরাসরি কোন আবদার করতাম না। দাদীর মাধ্যমে আবদার করতাম।

নাতনি রাইসিনা চৌধুরী বলেন, ক্রিয়েটিভ কাজ করার জন্য দাদা সবসময় আমাদের উৎসাহ দিতেন। আমাদের লেখাপড়া নিয়ে তিনি খুব সচেতন ছিলেন। যত বড় হচ্ছি দাদার গুণাবলির ব্যাপারে আরো বেশি জানতে পারছি। এমন দাদা পেয়ে আমরা সবাই গর্বিত। আমাদের রোল মডেল খুঁজতে কখনো বাসার বাইরে যেতে হয়নি। দাদা খুব ভালো উদাহরণ তৈরি করেছেন আমাদের জন্য। কিভাবে মর্যাদার সাথে সাদামাটা জীবন-যাপন করতে হয়, তিনি আমাদের সেসব শিক্ষা দিয়ে গেছেন। দাদা যখন চলে যান, তখন আমার বুঝার বয়স হয়নি। এটা নিয়ে আমার খুব দুঃখ হয়। দাদাকে যদি এখন পেতাম, উনার থেকে অনেক কিছু শিখতে পারতাম।

দি পূর্বকোণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সবাই মিলে বাবার জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি। তেমনি আজকের দিনটি আমার মায়ের মৃত্যু দিবসও। সবমিলে একরকম হাসি-কান্নার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দিনটি। আমার বাবা ছিলেন একজন সৃজনশীল জ্ঞানের অধিকারী মানুষ। যেকোনো কাজ তিনি তার ছেলে-মেয়ে, ভাই, বোন, ভাতিজাসহ সবাইকে নিয়ে করতে পছন্দ করতেন। সবাইকে নিয়ে কাজ করতেন বলেই আজকে আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে সুন্দর একটি সম্পর্ক রয়েছে। আলাদা আলাদা থাকলেও একটা একান্নবর্তী পরিবারের মতই আছি। এই শিক্ষাটা আমার বাবা থেকেই পেয়েছি আমরা। বাবার প্রতিটি কাজে মা সহযোগিতা করতেন। দৈনিক পূর্বকোণ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সেরা আঞ্চলিক পত্রিকা হিসাবে যে স্বীকৃতি লাভ করেছে এটি সবার অবদান। সামনেও যেন এ অবস্থানটি ধরে রাখতে পারি সেই লক্ষ্যে সবাই কাজ করে যাবেন, এ প্রতাশা করি।

পূর্বকোণ লিমিটেডের পরিচালক জাসির চৌধুরী বলেন, দাদার সাথে আমার ছোটবেলার কিছু মিষ্টি স্মৃতি আছে। যেগুলো এখনো মনে পড়লে ভালো লাগে। ইচ্ছে হয় দাদার সাথে যদি আরো কিছু সময় কাটাতে পারতাম! কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। সেই মিষ্টি স্মৃতিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দাদার সাথে আমি ও আমার ছোট ভাইবোনরা সবাইকে নিয়ে ডেইরি ফার্মে যেতাম। দাদা আমাদের সেখানে নিয়ে যেতেন, আইক্রিম, চিপস কিনে খাওয়াতেন।

ইউসুফ চৌধুরীর ভাতিজা সত্যজিৎ রায় গবেষক ও সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, আজকের দিনটা আমাদের জন্য একদিকে আনন্দের আবার আরেক দিকে দুঃখেরও। এ দিনে পূর্বকোণের প্রাণপুরুষ এবং আমার জীবনের আরাধ্য পুরুষ আমার চাচা ইউসুফ চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী। আমার সেই সৌভাগ্য হয়েছে হিমালয়ের মত একজন মানুষ ইউসুফ চৌধুরীকে কাছ থেকে দেখার। দীর্ঘ বত্রিশ বছর আমি তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। এ সময়ে চাচাকে দেখেছি কখনো রাগান্বিত, কখনো স্নেহময় হয়ে আবার কখনো শিক্ষকের ভূমিকা পালন করতে। তিনি একজন শিক্ষক। যার কাছে শেখার অনেক কিছুই আছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট