নিরহঙ্কাারী, উদারপ্রাণ, চট্টল দরদী ইউসুফ চৌধুরী। তিনি নিজ প্রতিভা বলে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সর্বমহলে শ্রদ্ধার পাত্র। সিগনেট প্রেস, ডেইরি ফার্মসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। এ চট্টলদরদী ব্যক্তিত্ব ১৯৮৪ সালে দৈনিক পূর্বকোণ প্রকাশ করেন। এতে অন্য সব ব্যস্ততার মাঝেও দৈনিক পূর্বকোণে বস্তুনিষ্ঠভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে সচেষ্ট থাকেন।
ইউসুফ চৌধুরীর সাথে আমার আগে থেকে জানা থাকলেও ১৯৯৫ সাল থেকে তাঁর সাথে এ সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়। অবশ্য তিনি ঐ সময় থেকে তার প্রিয় দৈনিকে লেখক হিসেবে আমাকে টেনে নেন। এতে তাকে আরও কাছ থেকে দেখার ও জানার সুযোগ হয়। তিনি ছিলেন সদালাপী, বিনয়ী, নম্র ও ভদ্র ব্যবহারকারী ব্যক্তিত্ব। এতে মহান আল্লাহ পাক তাকে উচ্চাঙ্গে নিয়ে যান। তাকে দেখতাম বলার আগ্রহ কম, শোনার আগ্রহ বেশি।
যৌবনকাল থেকে অন্যান্য ব্যস্ততা থাকলেও দৈনিক পূর্বকোণ প্রকাশের পর থেকে তিনি এ প্রকাশনাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে গেছেন।
টেকনাফ থেকে মিরসরাই পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দৈনিক পূর্বকোণ পাঠক মহলে তার গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখেছে। তার মূলে দৈনিক পূর্বকোণ সত্য কথা বলে, জনগণের কথা বলে, কথা বলে বস্তুনিষ্ঠভাবে। এ অঞ্চলের মানুষ ভোর হলেই অপেক্ষায় থাকেন কতক্ষণে তাদের প্রিয় সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বকোণ হাতে এসে পৌঁছবে। দৈনিক পূর্বকোণের পরিচ্ছন্ন ছাপা, সঠিক নিরপেক্ষ লেখা পাঠককে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে সাহায্য করে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর (২০২১) দৈনিক পূর্বকোণ দেশের সেরা আঞ্চলিক পত্রিকার সম্মাননা হিসেবে সরকার বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক প্রদান করে। যা যথাযথ, যথোপযুক্ত।
তার আগেও ১৯৯৪ সালে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ এর সমীক্ষায় দৈনিক পূর্বকোণ দেশের সর্বাধিক প্রচারিত আঞ্চলিক দৈনিকের মর্যাদা পায়। বাস্তবতাও তাই। আঞ্চলিক সংবাদপত্র বলা হলেও প্রচার সংখ্যা বিবেচনা করলে দেশের মধ্যে দৈনিক পূর্বকোণের অবস্থান প্রথম সারিতে থাকবে।
অনেকে চট্টলদরদী ইউসুফ চৌধুরীকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঢাকা থেকে দৈনিক পূর্বকোণ প্রকাশ করতে। কিন্তু চট্টগ্রামের সন্তান ইউসুফ চৌধুরী তাতে রাজি হননি।
বিভিন্ন সময় দৈনিক পূর্বকোণ চট্টগ্রামের কথা তুলে ধরতে কষ্ট স্বীকারে কার্পণ্য করেনি। বিভিন্ন সময় নানান অনুসন্ধিৎসু ও সাহসী রিপোর্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছে নানান অজানা তথ্য ও অসংগতি। দৈনিক পূর্বকোণের প্রাণপুরুষ প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন। তার প্রথম পুত্র স্থপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরী পিতার ইন্তেকাল পরবর্তী দৈনিক পূর্বকোণের হাল ধরেন। তিনিও ইন্তেকাল করেন।
দৈনিক পূর্বকোণ পরিবার এবং সকলের সহযোগিতা নিয়ে মরহুম ইউসুফ চৌধুরীর সন্তান জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী নিরলস প্রচেষ্টায় দৈনিক পূর্বকোণকে তার বিশাল পাঠক মহলের খোরাক পেতে ধরে রেখেছেন। একটা কথা উল্লেখ করতে মন থেকে তাড়িত হচ্ছি, আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর শেষ বিদায়টা বড় মোবারকভাবে হয়েছে। ২০০৭ সালের রমজানের আগে ওমরার উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কায় গমন করেন। তথায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পবিত্র মক্কায় ৯ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। পবিত্র কাবায় ফজরের নামাজের পর তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর পবিত্র মক্কায় তাকে সমাহিত করা হয়। তাঁর দু’ সন্তান জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরীর সাথে জানাজা ও দাফনে আমারও থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল।
লেখক: কলামিস্ট