চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টলদরদী ইউসুফ চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ ও তার স্বপ্নের পূর্বকোণ

গাজী মোহাম্মদ নুরউদ্দিন

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১:৪১ অপরাহ্ণ

দেশসেরা আঞ্চলিক পত্রিকার মর্যাদায় ভূষিত হলো চট্টগ্রামের সংবাদ পত্র দৈনিক পূর্বকোণ। এই বিশাল অর্জনের মুকুটে দৈনিক পূর্বকোণ নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন  অনন্য উচ্চতায়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর  বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক-২০২১ সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দৈনিক পূর্বকোণকে প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা দেয়া হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপির কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেছেন দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজউদ্দিন চৌধুরী।

নানা চড়াই-উতরাই, ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে খ্যাতির চূড়ায় আরোহন করে দৈনিক পূর্বকোণ। বিশাল এই প্রাপ্তির পেছনে একজন স্বাপ্নিক মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশী; তিনি হলেন পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাণ পুরুষ মরহুম আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী। ইউসুফ চৌধুরী তাঁর সাফল্যের ষোল আনা পূরণ করে গিয়েছেন দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকা প্রতিষ্ঠিত করে। সর্ব প্রথম আঞ্চলিক পত্রিকা জগতে আধুনিকতার ছোঁয়া আনেন তিনি। ঝকঝকে ছাপা, অসাধারণ গেটআপ এবং বিষয় – বৈচিত্রে ভরা পত্রিকাটি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে।

পূর্বকোণ নামটি দিয়েছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত আনিসুজ্জামান। দেশের কিংবদন্তি সাংবাদিক ও ভাষা সৈনিক প্রয়াত কে. জি. মুস্তফা ছিলেন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

কে.জি. মুস্তফা এবং অসম্ভব প্রতিভাবান এক ঝাঁক সাংবাদিক মিলে তুমুল জনপ্রিয়তায় পৌঁছে দেয় দৈনিক পূর্বকোণকে। জন্মলগ্ন থেকে পূর্বকোণ চট্টগ্রামের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছে পাঠকের কাছে। চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দায়িত্ব পালনে পূর্বকোণের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।

যার পরনাই দৈনিক পূর্বকোণের জনপ্রিয়তার পারদ বেড়েছে তরতর করে।

প্রসঙ্গত, পাঠক নন্দিত ও প্রচারবহুল সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বকোণ এর পথচলা শুরু হয় ১৯৮৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারিতে। চট্টল দরদী মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর হাত ধরে দৈনিক পূর্বকোণ আজ গুণে, মানে এবং বৈচিত্রে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর সমকক্ষ। ইউসুফ চৌধুরী সম্পাদক বা প্রকাশক হিসেবে নিজেকে না জড়ালেও পূর্বকোণ গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে পত্রিকার মানোন্নয়ন ও প্রচারের কুশীলব হিসেবে নিরন্তন কাজ করে গেছেন। ইউসুফ চৌধুরীর সৃষ্টিশীল কর্মে আজ দৈনিক পূর্বকোণ দেশসেরা পত্রিকা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কার্যত দৈনিক পূর্বকোণের ভিত তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি।

উল্লেখ্য, কে. জি. মুস্তফার পর এই পত্রিকার হাল ধরেন স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরী। তার মৃত্যুর পর ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী বর্তমানে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। দি পূর্বকোণ লিমিটেডের পক্ষে চেয়ারম্যান ও প্রকাশকের দায়িত্বে আছেন জসিম উদ্দিন চৌধুরী।

বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের সংবাদপত্র একুশ শতকে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করেছে। পূর্বকোণ ও তথ্য প্রযুক্তির বাইরে নয়।

যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে অনলাইনে সংস্করণ এবং পরে ২০১৯ সালের মে মাসে ছাপা সংস্করণের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু করে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)’র সমীক্ষায় দৈনিক পূর্বকোণ দেশের সর্বাধিক প্রচারিত আঞ্চলিক দৈনিকের মর্যাদা পায়। এছাড়া ২০০৪ সালে ‘সেরা আঞ্চলিক দৈনিক’ এর স্বীকৃতি লাভ করে দৈনিক পূর্বকোণ।

সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি দৈনিক পূর্বকোণ জনকল্যাণমূলক নানান কাজে সম্পৃক্ত থাকায় দেশে-বিদেশে প্রশংসা ও স্বীকৃতি অর্জন করেছে। দৈনিক পূর্বকোণের বিশাল এই সাফল্যের পিছনে অসামান্য অবদান রেখেছেন পত্রিকার নিবেদিত সাংবাদিক, সকল কলাকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, লেখক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।

পূর্বকোণের এই জয়যাত্রা হোক সুন্দর ও শুভ। গৌরব ও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে হাজার বছর ধরে  শ্রেষ্ঠত্বের যোগ্যতায় প্রথম হয়ে বেঁচে থাকুক দৈনিক পূর্বকোণ। জয়তু দৈনিক পূর্বকোণ।

লেখক: সহকারী রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট