চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ভেটেরিনারী কলেজ প্রতিষ্ঠা ও বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের অগ্রনায়ক ইউসুফ চৌধুরী

প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ২:০৬ অপরাহ্ণ

যুগোপযোগী শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কল্যাবরেশন এবং নানামুখী উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে চলেছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ^বিদ্যালয় (সিভাসু)। অতি অল্প সময়ে সিভাসু’র নাম আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভেটেরিনারি মেডিসিন, ফুড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এবং মৎস্যবিজ্ঞান-এ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আজ শিক্ষার্থীরা বেছে নিচ্ছেন সিভাসু’কে।

১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছিল তৎকালীন চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ। চট্টলদরদী ইউসুফ চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই কলেজ প্রতিষ্ঠার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কলেজের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম এবং আঞ্চলিক গুরুত্বের কারণে এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি জোরদার হয়। আলহাজ ইউসুফ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি। শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার মানুষের অংশগ্রহণে গঠিত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নে নানামুখী তৎপরতা চালান। অবশেষে চট্টগ্রামবাসীর যৌক্তিক দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৬ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। ভেটেরিনারি কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন-ইউসুফ চৌধুরী ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম পুরোধা। ইউসুফ চৌধুরী’র নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফসল এই বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ স্বমহিমায় ভাস্বর। সময়োপযোগী শিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সিভাসু আজ একটি অনন্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন, করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং, টিকা গ্রহণকারী ও টিকা গ্রহণ না করা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের তুলনামূলক স্বাস্থ্যঝুঁকির ওপর একাধিক গবেষণা, কার্যক্রম পরিচালনাসহ নানামুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সিভাসু সারাদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ, মৎস্য ও খাদ্যবিজ্ঞানী তৈরির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে-এই বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সিভাসু’র ভেটেরিনারি মেডিসিন, ফুড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ও ফিশারিজ অনুষদ এবং ওয়ান হেল্থ ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক, এমএস, এমপিএইচ ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। আগামী ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এবং বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে নতুন দুটি অনুষদে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে।

এটি বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়-যার শতভাগ শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাচ্ছে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে স্থাপন করা হয়েছে রিসার্চ এন্ড ফার্ম বেইজড ক্যাম্পাস, ঢাকার পূর্বাচলে স্থাপন করা হয়েছে টিচিং এন্ড ট্রেনিং পেট হসপিটাল ও রিসার্চ সেন্টার, কক্সবাজারে স্থাপন করা হয়েছে কোস্টাল বায়োডাইভার্সিটি, মেরিন ফিশারিজ এন্ড ওয়াইল্ডলাইফ রিসার্চ সেন্টার এবং রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে নির্মাণ করা হয়েছে-ভ্রাম্যমাণ গবেষণা তরী।

শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক, স্যাটেলাইট ক্লিনিক, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে প্রাণিসেবা কার্যক্রম-যার সুফল ভোগ করছে চট্টগ্রামের কৃষক ও খামারিরা।

সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে দেশের কৃষি খাত আজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। সিভাসুও এই সাফল্যের অংশীদার। কারণ, সিভাসু নিয়মিতভাবে কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য নানাধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে তাঁদেরকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। পাশাপাশি, সিভাসু’র দক্ষ গ্র্যাজুয়েটরাও এক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে এবং কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে। প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সিভাসু অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে। সিভাসু’র গ্র্যাজুয়েটদের সহযোগিতায় গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি লালন-পালন এবং মাছ চাষ করে শহর ও গ্রামাঞ্চলের বেকার নারী-পুরুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। শিক্ষা, গবেষণা ও নানারকম সেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা সিভাসু’কে নিয়ে যেতে চাই এক অন্য উচ্চতায়।

আজকের এ দিনে আমরা ইউসুফ চৌধুরীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তাঁর নেতৃত্বেই চট্টগ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন এবং ফলশ্রুতিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সিভাসু প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সিভাসু পরিবার ইউসুফ চৌধুরীর এ অবদানের কথা কোনদিন ভুলবে না।

লেখক : উপাচার্য, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট