চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম নতুন নৌরুট

মিটু বিভাস

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১:২১ অপরাহ্ণ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে একটি উন্নত, আধুনিক ও নিরপাদ নৌরুটের চালুর দাবি জানিয়ে আসছে চট্টগ্রামে বসবাসরত সন্দ্বীপের অধিবাসীরা। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হলেও এ রুটটি যেন অবহেলার শিকার। অবশেষে সন্দ্বীপবাসীর সে দুর্ভোগের লাঘব হচ্ছে। চলতি বছরের শেষ দিকে চালু হচ্ছে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নতুন নৌরুট। চট্টগ্রাম আউটার রিংরোড সংলগ্ন রাসমণি ঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তাছড়া পর্যন্ত এ নতুন রুট চালু করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। শুরুতে সীমিত আকারে নৌ চলাচল করলেও পর্যায়ক্রমে এটিকে নগরীর অন্যতম বড় নৌ ঘাটে পরিবর্তন করা হবে। এ লক্ষ্যে বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
বর্তমানে সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ঘাট সন্দ্বীপে যোগাযোগের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। নিরাপদে চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ যাতায়াতে বিআইডব্লিউটিসির একটি মাত্র জাহাজই ভরসা। এমভি আইভি রহমান নামে এ জাহাজটি সকাল ৯ টায় স›দ্বীপ থেকে ছেড়ে আসে এবং দুপুর ১ টায় চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা দেয়। এছাড়া সারাদিন স্পিডবোটেই ঝুঁকি নিয়ে চলে যাত্রী পারাপার। এছাড়া সীতাকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ড সহ কয়েকটি ঘাটে স্পিডবোটে সন্দ্বীপে যাত্রী চলাচল করলেও তা সীমিত। ফলে পণ্য আনা-নেওয়া এবং বাড়িতে যাতায়াতের পথে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরীতে বসবাসরত কয়েক লক্ষ স›দ্বীপবাসীকে। শহর থেকে তিনবার গাড়ি পরিবর্তন করে পৌঁছাতে হয় এসব ঘাটে। এরপর জোয়ার না থাকলে পড়তে হয় আরো ভোগান্তিতে। নতুন এ রুট চালু হলে সে দুর্ভোগ পুরোপুরি লাঘব হয়ে যাবে স›দ্বীপবাসীর। একসময় চট্টগ্রাম সদরঘাট থেকে সন্দ্বীপ যাতায়াতের জন্য ডব্লিউটিসির জাহাজ চলাচল করলেও যাত্রী স্বল্পতাসহ নানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। সদরঘাট থেকে নদীপথে ৭০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সন্দ্বীপ যেতে ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগত। রাসমণি ঘাট চালু হলে সোজাসুজি ৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সময় কমবে প্রায় অর্ধেক। নতুন এ রুটের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ অধিবাসীরা।
চট্টগ্রাম প্রায় চার লক্ষাধিক সন্দ্বীপের অধিবাসী রয়েছে। যার বেশিরভাগ বসবাস করেন হালিশহর এলাকায়। বর্তমানে দশ হাজারেরও বেশি যাত্রী প্রতিদিন চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটে চলাচল করেন। চট্টগ্রাম নগরী থেকে নতুন এ রুট চালু সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন হালিশহরের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে দুই সাংসদ ডা. আফছারুল আমিন ও সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতার মাধ্যমে ডব্লিউটিএর কাছে এ নতুন নৌরুট চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। অবশেষে সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের এ দাবির প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
গতকাল নগরীর আউটার রিং রোডে গিয়ে দেখা গেছে, মহেশখালের সম্মুখভাগ কাট্টলী খালের মুখে নির্মাণ হয়েছে সিঁড়ি। পাশে খাল ড্রেজিংয়ের জন্য রাখা হয়েছে একটি এস্কেভেটর। বিআইডব্লিউটিএ বন্দর ও পরিবহন বিভাগ, চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নয়ন শীল পূর্বকোণকে বলেন, আগামী মাসে এ খালে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে চলতি বছরের শেষ দিকে নভেম্বর-ডিসেম্বরে চালু হবে নৌ চলাচল। শুরুতে পণ্যবাহী নৌযান দিয়ে শুরু হলেও অল্প সময়ের মধ্যে যোগ হবে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলও।
তিনি আরো বলেন, রাসমণি ঘাট ডব্লিউটিএ’র একটি বৃহৎ প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে নৌরুট চালু হলেও পর্যায়ক্রমে এটিকে চট্টগ্রাম অন্যতম নৌঘাটে রূপান্তরিত করা হবে। এ লক্ষ্যে আগামী মাস থেকে ডব্লিউটিএ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সার্ভে টিম কাজ শুরু করবে। এরপর জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজ শুরু হবে। রুট চালুর পর যাত্রী সংখ্যার উপরে নির্ভর করবে ঘাটের ভবিষ্যৎ।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট