চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সীতাকুণ্ডে শতাধিক অবৈধ রেলক্রসিংয়ের মরণ ফাঁদ!

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১২:৫২ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ড পৌরসভার ইয়াকুবনগর এলাকায় রেলক্রসিং পার হচ্ছিল একটি পিকআপ। কিন্তু হঠাৎ সেখানে এসে পড়ে ঢাকামুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। ফলে মুখোমুখি সংঘর্ষে দ্রুতগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস পিকআপটিকে টেনে নিয়ে যায় আধা কিলোমিটার দূরে। তবে সৌভাগ্যবশত পিকআপের চালক লাফিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। অল্পের জন্য লাইনচ্যুত হয়নি ট্রেনটি। তাহলে হতে পারত বড় ধরনের প্রাণহারি ঘটনা। ঘটনাটি গত ৩০ আগস্টের।
অবৈধ ঐ রেলক্রসিংয়ে কোন গেটম্যান না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন রেললাইনে এ ধরনের অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা শতাধিক। নিয়মিত বিরতিতে এসব ক্রসিংয়ে বারবার দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটলেও গেটগুলোতে গেটম্যান নিয়োগ বা এগুলো সুরক্ষিত করার তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে এগুলো এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড উপজেলার শেষ সীমানা বারৈয়াঢালা পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেলপথ এলাকায় শতাধিক অবৈধ রেলক্রসিং রয়েছে। এসব অবৈধ রেলক্রসিংগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় বড়দারোগারহাট ফুলগাজী গ্রামের রেলক্রসিং, বারৈয়াঢালার বারৈয়াপাড়া বাজার সংলগ্ন ক্রসিং, পৌরসভার ইয়াকুবনগর, ফকিরহাট নলুয়াপাড়া, বাড়বকুণ্ড এসকেএম, বাঁশবাড়িয়া রাবার বাগান, কুমিরা ডাল চাল মিয়া মাজার গেট, সোনাইছড়ি, কদমরসুল, মাদামবিবিরহাট, ভাটিয়ারি, ফৌজদারহাট, সলিমপুর প্রভৃতি এলাকায় অবস্থিত ৩৫-৪০টি অবৈধ ক্রসিং। এসব ক্রসিং দিয়ে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ও বিভিন্নরকম যানবাহন চলাচল করে কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে।
এলাকাবাসীরা জানান, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ইয়াকুবনগরের দুর্ঘটনার আগেও এই ক্রসিংয়ে আরো অনেকবার ট্রেনের সাথে যানবাহনের সংঘর্ষ হয়। একইভাবে এসকেএম এলাকায়, ফকিরহাট ইকোপার্ক, নলুয়াপাড়াসহ বিভিন্ন ক্রসিংয়ে বারবার ট্রেনের সাথে যানবাহনের সংঘর্ষ ও অবৈধভাবে চলাচল করতে গিয়ে কাটা পড়ে মারা গেছেন অনেক মানুষ।
ইয়াকুবনগরের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই রেলক্রসিংটির উভয় পাশে ৫ হাজারেরও বেশি পরিবার আছে। আছে সরকারি হাস-মুরগি খামারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তাই মানুষ আসা যাওয়া করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। গত ৩০ আগস্টের দুর্ঘটনাতে ট্রেনটি উল্টে পড়ার উপক্রম হয়েছিলো বলে জানান তিনি।
ফকিরহাট নলুয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. ইকবাল হোসেন বলেন আমাদের বাড়ি রেলগেটের পূর্ব পার্শ্বে। আমাদের বাজার করতে, বাসের জন্য, স্কুল-কলেজে যাবার জন্য রেললাইন পার হতে গিয়ে অঘোষিত ক্রসিং হয়ে গেছে। সীতাকুণ্ড সদর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. মোতাহের বলেন, এ ধরণের রেলক্রসিং কতগুলো আছে তার হিসাব নেই। আমরা শুধু বৈধ রেলগেট পরিচালনা করি। মানুষ চলতে চলতে এসব ক্রসিং করেছে। নিজেরা সাবধানে চলাচল করা ছাড়া এগুলো সুরক্ষিত করার উপায় নেই।
সীতাকুণ্ড জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সীতাকুণ্ডে এরকম রেলক্রসিং অসংখ্য আছে। ক্রসিংগুলোতে হঠাৎ কোন গাড়ি উঠে পড়ে। চলে আসে মানুষও। কিন্তু ট্রেনের তো যেখানে সেখানে দাঁড়ানোর উপায় নেই, বা হঠাৎ ব্রেক করার সুযোগও নেই। তাই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তিনি জানুয়ারীতে এখানে যোগ দেবার পর থেকে ইয়াকুবনগর ও বারৈয়াঢালায় ট্রেনের সাথে গাড়ির সংঘর্ষ ছাড়াও এখানে ট্রেনে কাটা পড়ে ৯ জনের মৃত্যু দেখেছেন। সবাই সাবধানে না চললে আরো ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনিও।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট