চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পরীর পাহাড় : আইনজীবী ভবনের নির্মাণ ত্রুটি খতিয়ে দেখছে সিডিএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ

পরীর পাহাড়ে নির্মিত আইনজীবী ভবনের ত্রুটি-বিচ্যুতি খতিয়ে দেখছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। জেলা প্রশাসনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে তদন্ত ও নির্মাণ-ত্রুটি নিয়ে কাজ করছে সিডিএ। এ বিষয়ে সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সঙ্গেও কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান পূর্বকোণকে বলেন, ‘২০০৭ সালের দিকে আইনজীবী ভবন নির্মাণের জন্য প্রথম অনুমোদন দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সবকটি ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখন সেসব ফাইল যাচাই-বাছাই করছি।’ মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া হলে সিডিএ আইন (ইমারত নির্মাণ আইন) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অপর দিকে, পরীর পাহাড় লাগোয়া বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের দেয়াল ধসের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে বলে সূত্র জানায়। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট সংলগ্ন ভবনের আশপাশের ভবনের কারণে ‘ভল্ট ঝুঁকিপূর্ণ’ চিহিৃত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়াল ধসের পর দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি হচ্ছে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সরকার বিভাগের নেতৃত্বে। অপরটি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। দুটি কমিটির তদন্ত চলমান রয়েছে।’ ডিসি মমিনুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের ১৪ ফুটের কাছাকাছি কোনো ভবন নির্মাণের বিধান নেই। ভল্টের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
পরীর পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে জেলা প্রশাসক আট মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন সংস্থার কাছে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার কাছেও চিঠি দিয়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় সংযোগ না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব চরম রূপ নেয়।
জেলা প্রশাসনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবী ভবন নির্মাণের ত্রুটি-বিচ্যুতি খতিয়ে দেখছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরিমধ্যে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সাথে কথা বলেছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘পরীর পাহাড়ে সিডিএ’র অনুমোদন দেয়া ভবনগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্মাণ করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে কাজ করছে সিডিএ।’ অভিযোগ ওঠেছে, পরীর পাহাড়ে ভবন নির্মাণের সময় যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করেই নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘তথ্যের ঘাটতি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা অনুমোদনের ফাইলগুলো এখন যাচাই-বাছাই করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৭ সালের দিকে ভবন নির্মাণের প্রথম অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভবনেরও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
জেলা প্রশাসনের চিঠিতে ভবনের নকশা ও জায়গার অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, জায়গার বর্তমান স্ট্যাটাস (অবস্থা) জানতে জেলা প্রশাসক আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমরা ফাইলগুলো খতিয়ে দেখছি। জায়গার অবস্থা ও নকশা অনুমোদন যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। নকশা বহির্ভূত বা নির্মাণ ত্রুটি থাকলে জায়গার মালিককে অবৈধ অংশ অপসারণের অনুরোধ করে সিডিএ। এক্ষেত্রে জায়গার মালিক জেলা প্রশাসকও ব্যবস্থা নিতে পারেন।
জেলা প্রশাসন হার্ডলাইনে গেলেও পিছিয়ে নেয় চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতিও। গতকাল সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক মিলে ২১ জনের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ নিয়েছেন বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ। এতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর আইনজীবী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান সমিতির সভাপতি এডভোকেট এনামুল হক। গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন, বার কাউন্সিলের বর্তমান মেম্বার এডভোকেট মুজিবুল হক চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন, ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, বদরুল আনোয়ার, দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন চৌধুরী, সালেহ উদ্দিন হায়দার সিদ্দিকী, মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী, ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন দাশ ও রতন কুমার রায়। সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জিয়া উদ্দিন, আইয়ুব খান, মুজিবুর রহমান ফারুক, অশোক দাশ, আবদুর রশিদ, নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, মাহবুবুল আলম, আবু মোহাম্মদ হাশেম প্রমুখ।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট