চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

দুর্নীতি তদন্তে পূর্বাঞ্চল রেলের ‘সহযোগিতা পাচ্ছে না’ দুদক

ইমাম হোসাইন রাজু

১০ জুলাই, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

কর্তৃপক্ষ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ায় থমকে আছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত কার্যক্রম। রেলের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কমর্চারীর বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্তে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। তবে রেল কর্তৃপক্ষ দুদককে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা না করায় সুষ্ঠু তদন্তে ব্যাঘাত হচ্ছে বলে জানান দুদক কর্মকর্তারা। তবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সৈয়দ ফারুক আহমদ জানিয়েছেন দুদকের চাওয়া সকল তথ্য দেয়া হচ্ছে।
দুদক জানায়- রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা- কর্মচারীর নিয়োগ সংক্রান্ত এবং অবৈধ সম্পদন অর্জনসহ ডজনখানেক দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। সংস্থাটি এসব বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কার্যালয়ে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে ইতোমধ্যে একাধিক চিঠি ইস্যু করেছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দুদককে সহযোগিতা করা হচ্ছে না। যদিও দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা নানাভাবে তথ্য সংগ্রহ করে কাজ করছেন বলেও জানান সংস্থাটি।
তথ্য মতে, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিয়োগে ইতোমধ্যে রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। সম্প্রতি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মচারী ও শ্রমিক লীগ নেতা অলী উল্লাহ সুমনকে মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় আটকও করেছে দুদক। বর্তমানে অলী উল্লাহ সুমন কারাগারে রয়েছেন। মানি লন্ডারিং ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ব্ল্যাকমেইল করে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগে বাধ্য করা এবং চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের আরেকটি অভিযোগেরও তদন্ত করছে দুদক।
এছাড়া ২০১৮ সালে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সিপাহী পদে ১৮৫ জনের নিয়োগের অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত ও আশুগঞ্জে ৯০ টন গম নষ্ট হওয়ার বিষয়েও তদন্ত করছে সংস্থাটি। এসব তদন্ত চলমান থাকলেও সম্প্রতি রেলওয়ে ৮৬৩ পদে খালাসি নিয়োগের বিষয়টি নতুন করে যোগ হয়েছে দুদকের অনুসন্ধানে। নিয়োগের অনিয়ম ছাড়াও নিয়োগ কমিটি ও নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িতদের বিষয়ে নজরে রেখেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ইতোমধ্যে এই নিয়োগের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে সংস্থাটি কমিশনের পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।



দুদক বলছে, সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে কয়েকটি বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বরাবর তথ্য চেয়ে চিঠি ইস্যু করা হলেও কর্তৃপক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে না। একাধিকবার চিঠি ইস্যু করা হলেও চিঠির উত্তর পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে চিঠির উত্তর না পাওয়ায় জিএম’র কার্যালয়েও যান দুদক কর্মকর্তারা। দুদক কর্মকর্তারা দুইবার জিএম’র কার্যালয়ে গিয়ে জিএমকে না পাওয়ায় খালি হাতে ফিরতে হয়।
দুদকের উধ্বর্তন এক কর্মকর্তা জানান, ‘যেকোন অভিযোগ পাওয়ার পর প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নজরে রাখি এবং অভিযোগের বিষয়ে তাঁর সুনির্দিষ্ট বক্তব্য ও রেকর্ড পত্র সংগ্রহ করি। এরপর ওই কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রতিষ্ঠান প্রধানকে তার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়। মূলত সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থেই এমন কার্যক্রম করা হয়ে থাকে। তেমনি রেলের একাধিক অভিযোগের বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়ার পরও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। যার কারণে কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত এখনো শেষ করা যাচ্ছে না’।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সৈয়দ ফারুক আহমেদ মুঠোফোনে পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই পর্যন্ত দুদক থেকে যত চিঠি এসেছে, সব ক’টির উত্তর পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। যারা কর্মরত রয়েছেন তাদেরগুলোও পৌঁছানো হচ্ছে। আর যারা অবসরে চলে গিয়েছেন, তাদেরগুলো পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা চলছে। তারপরও যদি কোন চিঠির উত্তর দিতে বাকি থাকে, তাহলে আমি অফিসে গিয়ে খোঁজ নেব’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট