চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত জনজীবন

মফস্বল ডেস্ক

১০ জুলাই, ২০১৯ | ১:৩০ পূর্বাহ্ণ

টানা বৃষ্টি, উজান ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিপর্যস্ত জনজীবন।
কক্সবাজার: নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টি, উজান ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কক্সবাজারের প্রায় সব নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ৫ দিনে কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণের কারণে বাঁকখালী, মাতামুহুরি, রেজুখালের পানি বেড়েছে। জেলার অন্যান্য নদীগুলোর পানিও বাড়ছে। ইতোমধ্যেই বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট; রাজারকুল ও মিঠাছড়ি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, গত সপ্তাহে জেলার নদীগুলোতে পানি কমার প্রবণতা থাকলেও রোববার থেকে তা আবারো বাড়তে শুরু করেছে। অন্তত আরো দুদিন বাঁকখালী নদীতে পানি বাড়বে। এ ছাড়া জেলায় বিভিন্ন এলাকায় আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার কক্সবাজারে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নদীতে পানি বৃদ্ধির প্রবণতা আরো বাড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রমতে, বৈশাখের শুরুতেই বড় ধরনের বৃষ্টিপাত হয়নি। মাঝেমধ্যে ছিল বজ্রপাত। জ্যৈষ্ঠ মাসেও বজ্রপাত হয়েছে, আষাঢ মাসে সামান্য বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে মুষলধারে। বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা নতুন আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আষাঢ়ের শুরুতে বজ্রপাত কিছুটা কমলেও বৃষ্টির তীব্রতা বেড়েছে। অতি বর্ষণে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটবে বলে মনে করেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। সবমিলিয়ে এবার মাঝারি থেকে ভয়াবহ বন্যার একটা আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত মাতামুহুরি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৬২ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকাসহ গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারে পৌর শহরের কলাতলী, উপজেলা গেইট, নুরপাড়া, তারাবানিয়ার ছড়া, রুমালিয়ার ছড়াসহ কয়েকটি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি সড়ক প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচলসহ মানুষের চলাফেরায় বিঘœ ঘটছে। কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুুতি রয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলোর খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা আছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুুত রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তারা জানান, জেলার প্রতি উপজেলায় চাল ও নগদ টাকা প্রদান করা হবে। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, বন্যা-দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুুতি নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ এ নিয়ে কাজ শুরু করছে।
পটিয়া: নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টানাবর্ষণে পটিয়ায় পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে রাস্তাঘাট, পুকুর ও ঘর-বাড়ি ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শ্রীমাই খালের বেড়িবাঁধের দুটি অংশের ভেঙে গিয়ে এলাকায় প্লাবিত হয় ঘর-বাড়ি ভাঙনে সম্মুখীন হয়েছে। দুই শতাধিক পুকুরের পোনা ও মাছ, পানিতে ভেসে যায়। এছাড়াও পৌর সদরের ডাক বাংলোর মোড়, পোস্ট অফিস মোড়, স্টেশন রোড, সবুর রোড এলাকায় ড্রেনের পানি নিষ্কাশনে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গাড়ি চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন। গত সোমবার ও রবিবার দিনভর বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলের পানি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কেলিশহর, হাইদগাঁও, কচুয়াই, খরনা, ভাটিখাইন, ছনহরা, জঙ্গলখাইন, বড়লিয়া, ধলঘাট, হাবিলাসদ্বীপ, জিরি, কুসুমপুরা, আশিয়া, কাশিয়াইশ ও কোলাগাঁও ছাড়াও পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রদের ছুটি দেয়া হয়েছে। পৌর সদরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডে কোমর পর্যন্ত পানি জমে থাকায় স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা এসব পানি দিয়ে সকাল থেকে চলাচল করতে দেখা যায়। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের মৌলভী হাটের মো. ইসমাইল, মুজিবুর রহমান, আবদুল মান্নান, ইসহাক মিয়ার মাটির বসতঘর ভেঙে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে আটকা পড়েন মো. মোক্তার (২৬) নামের একব্যক্তি। পরে কেলিশহর এলাকার ২০-৩০ জন লোক গিয়ে তাকে জীবিত উদ্ধার করেন। পানিতে ডুবে কেলিশহরের মুজিবুর রহমানের একটি গরু-বাছুর মারা গেছে। অতিবৃষ্টির কারণে বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। শ্রীমাই খালের বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি ও বৃষ্টির পানি চলাচলে বেড়িবাঁধের ভাটিখাইন, ছনহরা ও কচুয়াই এলাকায় কয়েকটি স্পটে ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভাটিখাইন ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বখতিয়ার জানান, শ্রীমাই খালের ধোপাপাড়া, মোতাহের নবীর বাড়ির পেছনেসহ তিনটি অংশে ভেঙে যায়। ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পানিতে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শতাধিক পুকুরের মাছের পোনা পানিতে ভেসে যায়। কেলিশহর ইউপি চেয়ারম্যান সরোজ কান্তি সেন নান্টু জানান, কেলিশহর ইউনিয়নের পূর্ব রতনপুর গ্রামের দুটি মাটির ঘর ভেঙে যায়। এছাড়া আরো তিনটি দোকান ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও পোনা-পুকুর পানিতে ডুবে যায়। আশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম এ হাশেম জানান, আধু চৌধুরী সেতুর সংযোগ সড়কের পানিতে ভেঙে যায়। এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যায়। কচুয়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম ইনজামুল হক জসিম জানিয়েছেন, তাদের বাড়ি এলাকায় শ্রীমাই খালের বেড়িবাঁধ ভেঙে এখন পুরো এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। যেকোন মুহূর্তে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পোস্ট অফিস মোড় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ (পটিয়া সার্কেল) জসিম উদ্দিন খানের সরকারি গাড়ি গর্তে আটকে পড়ে। উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান জানান, টানা বর্ষণে পটিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যেসব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শনসহ ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা সংগ্রহ করার কাজ চলছে। সরকারিভাবে তাদের সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি: নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ৬ জুলাই থেকে টানা বর্ষণের কারণে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কগুলোর দু’পাশে মাটি সরে ও পাহাড়ের মাটি পড়ে যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটছে। এদিকে ভারি বর্ষণের কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির ৫ ইউনিয়নে পাহাড়ধস ও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে রোববার (৭ জুলাই) বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি মাইকিং শুরু হয়েছে। উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে এই মাইকিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও দৌছড়ি ইউনিয়নে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরানো বেশিরভাগ সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে। সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে কয়েক হাজার পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। ভারি বর্ষণের কারণে নাইক্ষ্যংছড়ি খালের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে উপজেলার ইউনিয়নগুলোর নি¤œ এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের অরিবিন্দু মেম্বারের পুত্র সুমন বড়ুয়া জানান, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে নাইক্ষ্যংছড়ি-সোনাইছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দু’পাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের মাটি এসে পড়েছে রাস্তার ওপর। উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে উপজেলা সদরসহ পাঁচ ইউনিয়নে মাইকিং ও জনপ্রতিনিধির কাছে সতর্কবাণী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া উপজেলা সদর, সোনাইছড়ি, দৌছড়ি, বাইশারী ও ঘুমধুম এই পাঁচটি ইউনিয়নের সরকারি কলেজ, মাদরাসা ও বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনের ত্রাণ শাখায় খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল। সেটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে।
বান্দরবান: নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বান্দরবানের চিম্বুক সড়কের নয় মাইল এলাকায় সড়কের ওপর পাহাড়ধসে পড়ায় রুমা ও থানচি উপজেলায় যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। সোমবার সকালে প্রবল বর্ষণের সময় ওই এলাকায় সড়কের ওপর একটি বিশাল পাহাড় ধসে পড়লে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের সদস্যরা মাটি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সড়কে চলাচলকারী লোকজন এতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। এদিকে টানা ভারি বর্ষণে বান্দরবান শহরের আশপাশে বেশ কয়েকটি এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। শহরের ইসলামপুর এলাকায় পাহাড়ধসে একটি টিনের ঘর ধসে পড়েছে। তবে কোথাও হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। জেলার সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় প্রাণহানি ঠেকাতে প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লোকজনদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে; সাথে চলছে সচেতনতামূলক মাইকিং। শহরের হাফেজ ঘোনা ও বাস স্টেশন স্কুলে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ৭০টি পরিবার অবস্থান নিয়েছে। প্রশাসন তাদের সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলে তারা স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে শহরের উজানিপাড়া স্কুলে জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৫টি পরিবার অবস্থান নিয়েছে। জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের দ্রুত সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব এলাকায় মাইকিংও করা হয়েছে। সাতটি উপজেলায় ইতিমধ্যে ১২৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। এদিকে ভারি বর্ষণের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বান্দরবান কেরানীহাট সড়কের বাজালিয়া অংশে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারলেও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে।
টেকনাফ: নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। রবিবার ৭ জুলাই সকাল থেকে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের পক্ষ থেকে টেকনাফ সদর, পৌরসভা, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘এখন বর্ষাকাল, তার ওপর টানা ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই পুরো উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা না সরলে আমরা নিজেরা গিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করবো’। বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলায় কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন ৩৯ হাজার হেক্টর বনভূমিতে অবৈধভাবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করে আসলেও তার মধ্যে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ পাদদেশে বসবাস করছে ২৫ হাজারের মতো মানুষ। এলাকাগুলো হচ্ছে পৌরসভার ফকিরামোরা, নাইট্যংপাড়া, বৈদ্যরঘোনা, নাজিরঘোনা, সদরের গিলাতলি, শিয়াইল্যারঘোনা, উরুমেরছড়া, কেরুনতলি, বরইতলি, হ্নীলার রোজারঘোনা, জাদিমুরা, উলুচামরী, লেচুয়াপ্রাং, হোয়াইক্যংয়ের সাতঘরিয়াপাড়া, কম্বনিয়াপাড়া, মরিচ্ছ্যাঘোনা, আমতলি, লাতুরিখোলা, হরিখোলা, দৈংগ্যাকাটা, বাহারছড়ার নোয়াখালী, কচ্ছপিয়া, মারিশবনিয়া, শীলখালী, হাজামপাড়া, বাইন্ন্যাপাড়া ও আছারবনিয়া এলাকার ২৫টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা পলিথিন ও বাঁশের ঝুপঁড়ি ঘর, মাটির ঘর, সেমি পাকা ঘর তৈরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। টেকনাফ বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, পুরো উপজেলায় পাহাড়ের মধ্যে ২৫টি পাহাড়ের পাদদেশে চার শতাধিক পরিবার অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করলেও টানা বৃষ্টিপাতে কেউ নিরাপদ নন। তাই সকলকে নিরাপদ আশ্রয় চলে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট