চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

শীঘ্রই চার্জশিট দেবে পিবিআই

৬ পুলিশ কনস্টেবল জড়িত

নাজিম মুহাম্মদ

৪ আগস্ট, ২০২১ | ১২:৫৮ অপরাহ্ণ

ঠিকাদারকে বাসা থেকে তুলে এনে মুক্তিপণ আদায় করার সত্যতা পাওয়া গেছে ছয় পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কয়েকদিনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে আনোয়ারার বৈরাগের নিজ বাড়ি থেকে আবদুল মান্নান নামে এক ঠিকাদারকে তুলে এনে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। মান্নান বৈরাগ ইউনিয়নের পূর্ব বৈরাগ গ্রামের শফি তালুকদার বাড়ির মৃত হাজি আবদুল হাকের ছেলে। ওই ঘটনায় আবদুল মান্নান বাদী হয়ে আনোয়ারা থানায় অজ্ঞাতনামা ৮ জনকে আসামি করে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আনোয়ারা থানা পুলিশ ছয় পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করে ঘটনার তিনদিন পর। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক (জেলা) এ.কে.এম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, ছয় কনস্টেবলের ঘটনায় জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে। মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) জমা দেয়া হবে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মান্নান একজন পেশাদার ঠিকাদার। ঘটনার দিন (৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে আনুমানিক দুইটার সময় কয়েকজন ব্যক্তি তার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ে এবং মান্নানের নাম ধরে ডেকে ঘর থেকে বের হতে বলে। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই দুই ব্যক্তি নিজেদের গোয়েন্দা সদস্য পরিচয় দিয়ে মান্নানকে ধরে বাসা থেকে আনুমানিক দুইশো ফুট দূরে নিয়ে যায়। সেখানে থাকা চারটি মোটরসাইকেলের একটিতে উঠিয়ে মান্নানকে আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনী বাজার হয়ে পটিয়া ভেল্লাপাড়া ব্রিজের পূর্ব পাশে কৈয়গ্রাম রাস্তার মাথার ভেতরে একটি টং চায়ের দোকানের সামনে নিয়ে যায়। চার মোটর সাইকেলে দুইজন করে আটজন ছিলো। টং দোকানে বসিয়ে মান্নানকে তারা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাবার ভয় দেখিয়ে প্রথমে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ঘটনা কাউকে জানালে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে দর কষাকষি করে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে মান্নানকে ছেড়ে দিতে রাজি হয় তারা। ভোর আনুমানিক চারটায় বাড়িতে ফোন করে স্বজনদের মাধ্যমে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা এনে ডিবি পরিচয়ধারী আট যুবকের হাতে দিয়ে মুক্তি পান মান্নান।
এজাহারে বলা হয়েছে, তারা যে চারটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছে তারমধ্যে একটি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিলো (চট্টমেট্টো-ল-১২-২৪২১), বাকি তিনটি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল না। আটজনের মধ্যে একজনের গায়ে ইংরেজিতে ডিবি লেখা ছিল।
মামলা দায়েরের পর আনোয়ারা থানা পুলিশ যে ছয় কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করেছে তারা হলেন, আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের মৃত বাছন আলীর ছেলে আবদুল নবী, পটিয়ার দক্ষিণ গোবিন্দের খিল গ্রামের মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ছেলে এসকান্দর হোসেন, আনোয়ারার দক্ষিণ বারশত গ্রামের মোহাম্মদ হাশেমের ছেলে মনিরুল ইসলাম, সীতাকুণ্ডে পুর্ব বাটেরখীল গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে শাকিল খান, আনোয়ারার চাতুরী গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মোহাম্মদ মাসুদ ও মিরসরাই ফরপরিয়া গ্রামের সিরাজুল মোস্তফার ছেলে মোর্শেদ বিল্লাহ।
এরমধ্যে মোর্শেদ – নগর পুলিশ কমিশনারের দেহরক্ষী, মাসুদ গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনারের দেহরক্ষী, এস্কান্দর কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কম্পিউটার অপারেটর এবং মনিরুল নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনে কনস্টেবল হিসাবে কর্মরত ছিলেন। বাকি দু’জন দামপাড়া পুলিশ লাইনে রিজার্ভ ফোর্সে কর্মরত ছিলেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার সময় তারা চারটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছে। এরমধ্যে একটি পালসার মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকলেও বাকি তিনটি মোটর সাইকেলের মধ্যে দুটি সুজুকি ও একটি ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের অত্যাধুনিক মোটরসাইকেল। এ তিনটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ছিল না। তিনটি মোটর সাইকেলের প্রতিটিই দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট