চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

লকডাউনের প্রভাব: বিশ হাজার হকারের মাথায় হাত

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২ আগস্ট, ২০২১ | ১:৫৫ অপরাহ্ণ

নগরীর নতুন রেল স্টেশন এলাকায় খাবার বিক্রি করতেন কুমিল্লার আবুল কাশেম। লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ। মানুষের আনাগোনাও নেই। তাই ট্রেনের চাকার সঙ্গে থমকে গেছে হকার কাশেমের রুটি-রুজিও।

নিউ মার্কেট এলাকায় কথা হয়- রিকশা চালক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। লকডাউনের আগে রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় ভ্যানে পোশাক বিক্রি করতেন তিনি। এখন ব্যবসা বন্ধ। তাই সংসার চালাতে রিকশার প্যাডলই ভরসা এই হকারের।

শুধু আবুল কাশেম কিংবা শহিদুল ইসলাম নন। লকডাউনে ব্যবসা করতে না পারায় এখন জীবনের কঠিন দিন পার করছেন তাদের মতো অন্য হকাররাও। আয়ের পথ হারিয়ে অনিশ্চিত জীবন পার করছেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। মিলছে না সহায়তাও।  বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এলাকাভিত্তিক মোট ২১টি হকার সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন- তাদের তালিকা অনুযায়ী নগরীতে প্রায় ২০ হাজার হকার আছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তালিকাভুক্ত হকার হলেন ৮ হাজার ৯৯৫ জন। নিউ মার্কেট, রেল স্টেশন, আগ্রাবাদ এলাকা, জিইসি মোড় এবং ২ নম্বর গেটে সবচেয়ে বেশি হকার বসেন।

তবে গতকাল হকারদের ‘স্বর্গরাজ্য’ হিসেবে পরিচিত নিউ মার্কেট, রেল স্টেশন, আগ্রাবাদ এলাকা, জিইসি মোড় এবং ২ নম্বর গেট ঘুরে এসব এলাকা প্রায় হকারশুন্য দেখা গেছে। অল্প যে কয়জন হকারের দেখা মিলেছে তারা কেবল সবজি আর ফল বিক্রি করেছেন। প্রায় সব হকার যেসব পণ্য বিক্রি করেন- পোশাক, মোবাইল ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ভ্যান তেমন চোখে পড়েনি।

হকাররা জানিয়েছেন- গত বছরের মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেওয়া টানা কয়েক মাসের লকডাউনে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা নগদ টাকা ও ত্রাণ সহায়তা পেয়েছিলেন। তবে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে গত এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে দেওয়া লকডাউনে কোনো সহায়তা তারা পাননি।

এমনকি যেসব হকার সংগঠনের পক্ষ থেকে হকারদের কল্যাণে নিয়মিত চাঁদা নেওয়া হতো-তারাও হকারদের এই দুর্দিনে পাশে নেই। প্রশাসন, রাজনীতিক থেকে শুরু করে হকার নেতাদের কাছে ধর্না দিয়েও লকডাউনের সময় নগদ টাকা বা ত্রাণ সহায়তা মেলেনি। এখন লকডাউনের কারণে ব্যবসা বন্ধ থাকায় পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে না পেরে চোখে অন্ধকার দেখছেন হকাররা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম হকার সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু পূর্বকোণকে বলেন, জীবন বাঁচাতে সরকার লকডাউন দিয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে হকাররাও তেমন ঘরের বাইরে আসছেন না। কিন্তু হাজার হাজার হকারদের পরিবারগুলো কীভাবে চলবে- তাও সরকারের ভাবা উচিত ছিলো।

তিনি বলেন, গত বছরের লকডাউনে কিছু নগদ টাকা এবং ত্রাণ সহায়তা পেলেও এবার তা পাওয়া যায়নি। হকারদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ দিতে সব হকার সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে একটি তালিকা দেওয়া হয়। তবে এখনো কোনো সহায়তা পাননি হকাররা। রুটি-রুজি বন্ধ থাকলে, সহায়তাও না পেলে হকাররা চলবেন কীভাবে?

প্রায় একই অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম হকার্স লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হারুন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, হকাররা দিনে আয় করে দিনের সংসার খরচ নির্বাহ করেন। দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে তারা ব্যবসা করতে পারছেন না। অনেকের দুই বেলা খাবারও জুটছে না। কিন্তু এবারের লকডাউনে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন বা কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সহায়তা পাইনি।

তিনি বলেন, সবার আগে জীবন-সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। কিন্তু জীবিকার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। আগামী ৫ আগস্ট চলমান লকডাউনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। আশা করবো ৫ আগস্টের পর জীবিকা নির্বাহ করার স্বার্থে হকারদেরও পথে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে। হকাররা আগের মতো ঝামেলাহীন ব্যবসা করতে পারবেন।

হকারদের ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, লকডাউনের প্রভাবে কর্মহীন অসহায়, নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত-যারাই জেলা প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন তাদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই সহায়তা এখনো চলমান রয়েছে। কেউ না পেয়ে থাকলে তাদেরও দেওয়া হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট